Ajker Patrika

রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশনের সার্ধশতবর্ষ পূর্তি উৎসব উদ্‌যাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশনের সার্ধশতবর্ষ পূর্তি উৎসব উদ্‌যাপন

রাজশাহীর সবচেয়ে প্রাচীন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও জনকল্যাণমূলক সংগঠন রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠার সার্ধশতবর্ষ পূর্তি উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। আজ শুক্রবার থেকে রাজশাহী কলেজ মিলনায়তনে দুই দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়। প্রথম দিন পাঁচ গুণীজনকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। 

১৮৭২ সালের ২১ জুলাই বৃহত্তর রাজশাহীর রাজা-বাদশারা এই অঞ্চলের কল্যাণে রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম সভাপতি ছিলেন দিঘাপতিয়ার রাজা প্রমথনাথ রায়বাহাদুর। আর প্রথম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন করচমাড়িয়ার জমিদার ও স্যার যদুনাথ সরকারের বাবা রাজকুমার সরকার। রাজশাহী কলেজ ও বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় সহায়তা, রাজশাহী শহরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ঢোপকল স্থাপনসহ আরও নানা জনহিতকর কাজ করেছে এই অ্যাসোসিয়েশন। 

 ১৮৯২ সালের ১২ নভেম্বর রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশনের এক সাহিত্যসভায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘শিক্ষার হেরফের’ শীর্ষক প্রবন্ধটি পাঠ করেন। ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠন এবার নানা আয়োজনে প্রতিষ্ঠার সার্ধশতবর্ষ পূর্তি উৎসব পালন করছে। প্রধান অতিথি হিসেবে সকাল ১০টার দিকে বেলুন, ফেস্টুন ও পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. অরুণ কুমার বসাক। 

পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর সার্ধশতবর্ষ পূর্তির কেক কাটেন অতিথিরা। পরে পাঁচ গুণীজনকে সম্মাননা জানানো হয়। অনুষ্ঠানে তাঁদের উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তাঁদের হাতে সম্মাননা স্মারক এবং সম্মানীর অর্থ তুলে দেওয়া হয়। 

এবার যাঁরা সংবর্ধনা পেয়েছেন তাঁরা হলেন মুক্তিযুদ্ধে অধ্যাপক মু. শামসুল আলম (বীরপ্রতীক), সাহিত্যে কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন, অর্থনীতিতে রাবির বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা, সংগীতে ওস্তাদ আবদুল আজিজ বাচ্চু (মরণোত্তর) ও চিকিৎসায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য জাতীয় অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান। ওস্তাদ আবদুল আজিজ বাচ্চুর (মরণোত্তর) সম্মাননা গ্রহণ করেন তাঁর সহধর্মিণী। 

এরপর সংবর্ধনাপ্রাপ্ত গুণিজনেরা নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন বলেন, ‘আমি রাজশাহীতে জন্মেছি। এটা আমার প্রাণের শহর। আমার যা কিছু অর্জন রয়েছে, সব রাজশাহীর জন্য। রাজশাহী শহরকে বলি আমার প্রাণের শহর। এই শহর আমার শিক্ষা, আমার লেখালেখি-সব তৈরি করে দিয়েছিল। আমার লেখালেখির সূচনা এই রাজশাহী থেকেই করেছি। রাজশাহী শহর আমার কাছে সেই দিগন্ত, যে দিগন্ত দিয়ে একজন মানুষ তার চারপাশটাকে দেখতে পারে। আজকের এই অনুষ্ঠান আমার প্রাণের ভেতর প্রবেশ করেছে। এ ধরনের অনুষ্ঠান রাজশাহীর প্রজন্ম আলোকিত হবে।’ 

অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা বলেন, ‘আমাদের রাজশাহীর সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের পিতামহ লাল মোহাম্মদ সরদারও রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশনের পূরার্কীর্তি অন্বেষণের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। এগুলো আমাদের দুর্মূল্য স্মৃতি। সেই রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশন আমাকে এই সম্মানের জায়গায় বসিয়েছেন, তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানানোর শেষ নেই।’ 

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহীর প্রাক্তন জেলা প্রশাসক ও অবসরপ্রাপ্ত সচিব একেএম শামসুদ্দীন, কবি মো. আমিনুল ইসলাম, কথাশিল্পী সেলিনা হোসেনের স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন ও রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল খালেক। 

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ও রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামীম আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক তসিকুল ইসলাম রাজা। উপস্থিত ছিলেন অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি কবি রুহুল আমিন প্রামানিক, সাংবাদিক আকবারুল হাসান মিল্লাত প্রমুখ। 

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বিকেলে ‘রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশন: সার্ধশতবর্ষের অর্জন’ শীর্ষক একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যায় বসে রাজশাহী অঞ্চলের বিয়ের গানের আসর। দ্বিতীয় দিন শনিবার সকালে স্থানীয় কবিদের ছড়া ও কবিতা পাঠের আসর, দুপুরে সেমিনার এবং সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত