Ajker Patrika

‘বিনা দোষে আমাকে জঙ্গি বানিয়েছে র‌্যাব’

পাবনা প্রতিনিধি
আব্দুল আহাদ ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
আব্দুল আহাদ ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

‘দিনের বেলায় কলেজে যাওয়ার পথে কয়েকজন লোক আমাকে জোর করে একটা সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। চোখ ও হাত বেঁধে কোথায় যেন নিয়ে যায়। দুই জায়গায় স্থানান্তর করা হয়। কিছুই বুঝতে পারিনি। যখন চোখ খোলা হলো, তখন বুঝলাম, আমি র‌্যাবের হাতে আটক। সবশেষে আমাকে জঙ্গি সদস্য বানিয়ে অভিযানে আটক দেখিয়ে থানায় সোপর্দ করা হয়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আমি জামিনে কারাগার থেকে মুক্ত হই। বিনা দোষে আমাকে দুই মাস কারাভোগ করতে হয়েছে।’

এভাবেই নিজের দুর্বিষহ দিনগুলোর কথা বলছিলেন কলেজছাত্র আব্দুল আহাদ ইসলাম (২১)। তিনি পাবনার সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজের বিএ (অনার্স) গণিত বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। পাশাপাশি দৃষ্টি স্কুল অ্যান্ড কলেজে আবাসিকে থেকে সেখানে শিক্ষকতাও করেন। পাবনার ফরিদপুর উপজেলার আগজন্তিহার গ্রামের মো. গোলাম মওলার ছেলে আহাদ। চার ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট তিনি।

আব্দুল আহাদ গত বুধবার রাতে আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত বছরের ১৩ জুন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হেঁটে কলেজে যাচ্ছিলেন। পথে শালগাড়িয়া মালিগলি স্কুলের পশ্চিম পাশে পাঁচ থেকে সাতজন লোক একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাসে এসে তাঁকে জোরপূর্বক অপহরণ করে। চোখ বেঁধে তাঁকে অজ্ঞাত স্থানে নেওয়া হয়।

এ ঘটনার পর বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে তাঁকে না পেয়ে পরদিন ১৪ জুন তাঁর বড় ভাই বকুল হোসেন পাবনা সদর থানায় অপহরণ মামলা করেন।

আহাদ বলেন, ‘অপহরণের পর চোখ বাঁধা অবস্থায় এক ফাঁকে চোখের কাপড় তুলে দেখি, আমি পাবনা র‌্যাব অফিসে। তখন বুঝলাম, র‌্যাব আমাকে তুলে এনেছে। পাবনা র‌্যাব কার্যালয়ে আটকে রাখে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সন্ধ্যার পর পাবনা থেকে ঢাকায় র‌্যাব-১ কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে ছোট্ট একটা ঘরে রাখা হয়। কোনো দিকে হাত-পা নাড়াচাড়া করা যেত না সেখানে। একজন মানুষ শুয়েও থাকা যায় না। তখন বুঝলাম আয়নাঘর কী জিনিস। ভয় পেয়েছিলাম খুব। টয়লেটে যেতে বা অজু করার জন্য হাত, চোখ খুলে দিতে অনুরোধ করলে তারা খুব মারধর করত।’

এটুকু বলতে বলতেই চোখ ছলছল করে ওঠে আব্দুল আহাদের। দম নিয়ে আবার শুরু করেন। বলেন, ‘এরপর সেখানে আগে থেকে আটক আরেক তরুণ পঞ্চগড়ের আসাদুজ্জামান আসিফের সঙ্গে আমাকে রাতের কোনো এক সময় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে র‌্যাব-৭-এর কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে চোখ খুলে দিলে চারদিকে তাকিয়ে বুঝতে পারি, সেটা র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের অফিস। তারপর আমরা তাদের অনেকবার প্রশ্ন করেছি, আমাদের কেন ধরে এনেছেন? কিন্তু তারা শুধু বলেছিল, আমাদের একটা ভাই আছে, তোমাদের তিনটা প্রশ্ন করেই ছেড়ে দেবে। আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, আমি কোনো দল করি কি না। আমি বলেছিলাম, আমি গরিব মানুষের ছেলে। কোনো দল করি না। একটা স্কুলে চাকরি করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালাই। তারা আমাদের নাম-ঠিকানা লিখে নেয়।’

আব্দুল আহাদের বিরুদ্ধে দায়ের মামলার নথি থেকে জানা যায়, ১৪ জুন দুপুরের পর তাঁদের দুজনকে সংবাদ সম্মেলনে হাজির করা হয়। সেখানে সাংবাদিকদের সামনে দুজনকে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য হিসেবে পরিচয় দেয় র‌্যাব। বলা হয়, চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর শিকলবাহা ইউনিয়নে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে ব্রিজের গোড়ায় পরিত্যক্ত একতলা ভবনে অভিযান চালিয়ে গোপন বৈঠকের সময় আহাদ ও আসিফকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে জিহাদি বই, লিফলেট ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে। পরে তাঁদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে কর্ণফুলী থানায় সোপর্দ করে র‌্যাব।

আব্দুল আহাদ বলেন, ‘র‌্যাব থেকে থানায় সোপর্দ করার পর আমার পরিবার জানতে পারে, আমি সেখানে আছি। পরিবারের লোকজন চট্টগ্রামে গিয়ে চেষ্টা করেও জামিন করাতে পারেনি। এর মধ্যে মামলায় আমাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছিল পুলিশ। সেখানে পুলিশ আমাদের জোরপূর্বক জঙ্গি সদস্য হিসেবে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করে। নানা ভয়ভীতিও দেখিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ১২ আগস্ট আমাদের জামিন হয়। ১৩ আগস্ট মুক্তি পাই। পরে মামলার কাগজপত্রের নকল তুলে জানতে পারি, চট্টগ্রামের চান্দগাঁও সিপিসি-৩, র‌্যাব-৭-এর ডিএডি রেজাউল ইসলাম (বিজিবি) আমাদের দুজনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন। আর কর্ণফুলী থানার এসআই আবুল কালাম মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছিলেন।’

আব্দুল আহাদ বলেন, ‘এই মিথ্যা ও বানানো মামলা থেকে আমি ও পঞ্চগড়ের আসিফ মুক্তি চাই। আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যেসব কর্মকর্তা আমাদের জঙ্গি বানিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’

আব্দুল আহাদের বড় ভাই বকুল হোসেন বলেন, ‘কত দিন আমরা মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে কাটিয়েছি। আমার ভাই কষ্ট পেয়েছে, জঙ্গির তকমা গায়ে লাগাল ওরা। এর কি কোনো বিচার হবে না এ দেশে?’

এ বিষয়ে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও সিপিসি-৩, র‌্যাব-৭-এর ডিএডি রেজাউল ইসলাম (বিজিবি) বুধবার রাতে মোবাইলে বলেন, ‘যেহেতু তাকে এখানেই (চট্টগ্রামে) পাইছি; সে কারণে এখানেই মামলাটা হইছে। সরকারি প্রক্রিয়ায় যেটা হয়, সেটাই এখানে হবে আরকি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত