Ajker Patrika

পাউরুটি কেটে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উদ্‌যাপন, দুই শিক্ষককে ‘কারাগারের রোজনামচা’ পড়তে বললেন আদালত

রাজশাহী প্রতিনিধি
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৮: ০৬
পাউরুটি কেটে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উদ্‌যাপন, দুই শিক্ষককে ‘কারাগারের রোজনামচা’ পড়তে বললেন আদালত

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া বৌরতলা দাখিল মাদ্রাসায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে কেকের বদলে পাউরুটি কাটার আলোচিত মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জিয়াউর রহমান এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে মামলার ১১ আসামির মধ্যে ৯ জন বেকসুর খালাস পেয়েছেন। আর মাদ্রাসার সুপার আব্দুস সালাম (৫৫) ও সহকারী শিক্ষক গোলাম কবির (৪৮) দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তবে আদালত তাঁদের কারাগারে না পাঠিয়ে পাঁচটি শর্তে প্রবেশন দিয়েছেন। শর্ত লঙ্ঘন করলে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে তাঁদের। জরিমানার অর্থ অনাদায়ে আরও এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড।

প্রবেশনের শর্তগুলো হলো প্রবেশনকালীন আসামিরা কোনো প্রকার অপরাধের সঙ্গে জড়িত হবেন না বা একই ধরনের অপরাধ করবেন না। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবের ইতিহাস সম্পর্কে নিজেরা পড়বেন এবং সহকর্মী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জানাবেন; আদালত এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তলব করলে যথাসময়ে উপস্থিত হবেন; প্রবেশনকালীন জাতির পিতার নিজ হাতে লেখা তিনটি বই ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ‘আমার দেখা নয়াচীন’ পড়বেন। এ ছাড়া জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলো’ এবং রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা ‘একাত্তরের চিঠি’ বইগুলো পড়বেন। দুই আসামি প্রবেশনে থাকার সময় ১০টি করে ফলদ ও বনজ বৃক্ষের চারা রোপণ করবেন।

প্রবেশন অর্থ ‘পরীক্ষাকাল’। প্রথম ও লঘু অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের আদালত ‘দি প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অরডিন্যান্স-১৯৬০ (১৯৬৪ সনে সংশোধিত) এর আওতায় কারাগারে না পাঠিয়ে শর্ত সাপেক্ষে তাঁকে বাড়িতেই সংশোধনের সুযোগ দেওয়া। সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন কর্মকর্তা প্রবেশনের শর্ত মানার বিষয়টি তদারকি করে থাকেন। এ দুই শিক্ষকের ক্ষেত্রে তিন মাস পর পর তাঁদের শর্ত প্রতিপালন ও অগ্রগতি সম্পর্কে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য প্রবেশন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আসামিদের প্রবেশনের সময় সন্তোষজনক হলে তাঁদের এই দণ্ড চাকরিসহ ভবিষ্যৎ জীবনে কোনোরূপ অযোগ্যতা বলে গণ্য হবে না বলে আদালত উল্লেখ করেছেন।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, ‘মামলার অধিকাংশ সাক্ষী বলেছেন বিষয়টি স্থানীয়ভাবে আপস হয়ে গেছে। তাই মামলার ৯ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। অন্য দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তাঁরা মাদ্রাসার সম্মানিত শিক্ষক। ইতিপূর্বে তাঁদের অপরাধের রেকর্ড নেই। তাঁরা তথ্যপ্রযুক্তি অপব্যবহার সম্পর্কে না জেনে থাকা স্বাভাবিক। এই শিক্ষকদের শাস্তি দিলে মাদ্রাসার স্বাভাবিক কার্যক্রম তথা শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বরং এই দুজন শিক্ষককে জাতির পিতা সম্পর্কে বিশদ জানার সুযোগ করে দেওয়া জরুরি। যাতে করে তাঁরা সহকর্মী এবং শিক্ষার্থীদের তাঁর অবদান সম্পর্কে জানাতে পারেন। সে কারণেই এ দুই শিক্ষককে শাস্তি না দিয়ে আইন অমান্যকারী নাগরিক হিসেবে পুনর্বাসনের জন্য এবং সংশোধনের সুবিধার্থে শর্ত সাপেক্ষে নির্দিষ্ট বন্ডে প্রবেশন অফিসারের নিয়ন্ত্রণে প্রবেশন প্রদান সমীচীন মনে হয়।’

রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ইসমত আরা জানান, গত বছরের ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে বোয়ালিয়া বৌরতলা দাখিল মাদ্রাসায় কেকের পরিবর্তে পাউরুটি কাটা হয়। অনুষ্ঠানটি ফেসবুকে লাইভ প্রচার করেন শিক্ষক গোলাম কবির। ব্যঙ্গাত্মক এই আয়োজন ফেসবুকে দেখে স্থানীয়রা গোমস্তাপুর থানায় খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ দুই মাদ্রাসার সুপার আব্দুস সালাম ও শিক্ষক গোলাম কবিরকে আটক করে। পরে রাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউনুস আলী। আলোচিত এ মামলারই রায় ঘোষণা করলেন আদালত। 

গোমস্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিলীপ কুমার দাস বলেন, ‘মামলায় অধ্যক্ষ, শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও স্থানীয়দের আসামি করা হয়েছিল। এরা কট্টর জামায়াতপন্থী হিসেবে পরিচিত। তবে কোনো পদে নেই। কোনো কিছু না ভেবে তাঁরা আহাম্মকের মতো ওই কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত