Ajker Patrika

গানই তাঁর জীবন গানেই জীবিকা

প্রতিনিধি, তানোর (রাজশাহী) 
গানই তাঁর জীবন গানেই জীবিকা

চোখে কালো ফ্রেমের চশমা। মুখ ভর্তি দাড়ি। মাথায় গোল টুপি। দুই হাতের ছয় আঙুলে বড় বড় রঙিন পাথরের আংটি। গায়ে সাদা পাঞ্জাবি। ঘাড়ের ওপর সাদা গামছা। হাতের মুঠে ধরে আছেন বাদ্যযন্ত্র খঞ্জনি। গাইছেন ‘বাড়ির পাশে আরশিনগর, সেথায় এক পড়শি বসত করে, আমি একদিনও না দেখিলাম তাঁরে’ কিংবা ‘এমন সমাজ কবে গো সৃজন হবে/যেদিন হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান জাতি গোত্র নাহি রবে।’

লালন ফকিরের গানই যেন নিজের গান হয়ে ধরা দিয়েছে নূর মোহাম্মদ বাউল ফকিরের (৮১) জীবনে। গানই তাঁর জীবন, গানই তাঁর জীবিকা। তবে দেড় বছর ধরে মহামারি করোনায় নিজ এলাকাতেই দুর্বিষহ দিন পার করছেন তিনি। তাঁর বাড়ি রাজশাহীর তানোর উপজেলার শিবনদীর বিলকুমারী-তীরবর্তী গোকুল গ্রামে।

নূর ফকিরের তিন ছেলে ও তিন মেয়ে। ছেলে-মেয়েরা বিয়ে করে নতুন সংসার পেতেছেন। নূর থাকেন তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে। বুড়ো হয়ে গেলেও হাত থেকে খঞ্জনি নামাননি। গান করেন, হাট–বাজেরে, জনসমাগমস্থলে। বরেন্দ্র অঞ্চলে বাউল নূর হিসেবে তাঁর সুপরিচিতি রয়েছে। আগে প্রায়ই মাজার কিংবা গ্রামের কোনো অনুষ্ঠানে তাঁর ডাক পড়ত। গান গাইতেন প্রাণের টানে। এর  বিনিময়ে খুশি যে যা দিতেন, তিনি তাই নিতেন।

বাউল নূর বলেন, সেই ৬৪ বছর আগের কথা। তখন তাঁর ১৫ বছর বয়স। গ্রামে তো দূর, শহরেও ছিল না আধুনিক যন্ত্রের ছোঁয়া। তখন গ্রামে গ্রামে বসত জারি–সারি, কিচ্ছা, আলকাপসহ নানা ধরনের গানের আসর। দাদা কিংবা বাবার সঙ্গে গিয়েছেন এসব আসরে। গান শুনেই তাঁর মনে ধরে যায়। সেই ভালো লাগা থেকেই নিজেও গাইতে শুরু করেন।

নূর ফকির বলেন, ছোটকাল থেকেই লালনের গান পছন্দ তাঁর। তাই লালন সাঁইয়ের গান গেয়েই জীবন কাটিয়ে দেবেন বলে ঠিক করেন। আজও দরাজ গলায় লালনগীতি ধরেন তিনি। যেখানে কয়েকজন মানুষের জটলা দেখেন, সেখানে গিয়েই গানে টান দেন। খুশি হয়ে যে যা দেন, তাতেই সন্তুষ্ট থাকেন। তবে বর্তমানে করোনার কারণে ঘরবন্দী হয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন। তাতে কী, ঘরে বসেই আপন মনে গান করেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নূর ফকির এই বয়সেও গান করেন। এটা আশ্চর্যের বিষয়। মানুষটার প্রাণশক্তি আছে। গানের প্রতি তাঁর ভালোবাসা অনকে গভীর। তবে এই বুড়ো বয়সে অসুস্থ হলে না খেয়ে থাকতে হয়। লকডাউন কিংবা বৃষ্টি হলে বাইরে যেতে পারেন না তিনি। লোকজনকে গান শোনানো হয় না, টাকাও উপার্জন হয় না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত