Ajker Patrika

বগুড়ার তালপাতার ডাঁটার আঁশের তৈরি তৈজসপত্র যাচ্ছে বিদেশে

গণেশ দাস, বগুড়া
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৫: ৩৬
বগুড়ার তালপাতার ডাঁটার আঁশের তৈরি তৈজসপত্র যাচ্ছে বিদেশে

বগুড়া জেলার কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি গ্রাম পাঁচখুর। ৩০০ পরিবারের বসবাস এই গ্রামে। গ্রামটিতে ঢুকতেই সড়কের দুই পাশে দেখা মিলবে শত শত তালগাছ। গ্রামের লোকজন সড়কের পাশে, ফাঁকা জায়গায় ও পতিত জমিতে তালের বীজ রোপণ করে। এসব তালগাছের পাতার ডাঁটা থেকে বের করা আঁশ দিয়ে ঘরে বসেই নারীরা তৈরি করেন নানা রকমের শৌখিন তৈজসপত্র। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নারীদের তৈরি করা এসব তৈজসপত্র দেশে চাহিদা কম থাকলেও দেশের বাইরে রয়েছে ব্যাপক চাহিদা।

পাঁচখুর গ্রামের বাসিন্দা হাদিসা বেগম নামের এক নারী জানান, তাঁর স্বামী দুবাই থাকেন। সংসারের কাজের ফাঁকে তালের পাতার আঁশ দিয়ে তৈরি করেন টেবিল ম্যাট। প্রতিদিন চারটি টেবিল ম্যাট তৈরি করে তিনি আয় করেন ১৫০ টাকা।

বৃষ্টি খাতুন নামের এক নারী জানান, ১২ বছর আগে পাঁচখুর গ্রামে বিয়ে হয় তাঁর। শ্বশুরবাড়ি আসার পর দেখতে পান শাশুড়ি-ননদ থেকে শুরু করে প্রতিবেশী সব নারী তালগাছের আঁশ দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করেন। তাঁদের দেখে বৃষ্টি বেগমও এই কাজ শুরু করেন। বৃষ্টি খাতুন বলেন, ‘অবসর সময়ে পণ্য তৈরি করে টাকা পাই। এতে স্বামীর কাছে টাকা চাইতে হয় না।’

স্থানীয় বাসিন্দা ইউনুছ আলী রপ্তানিকারকদের সরবরাহ করতে তালের আঁশের তৈজসপত্র সংগ্রহ করেছেন।  বৃষ্টির মতোই পাঁচখুর গ্রামের পারভিন খাতুন, কুলসুম বিবি, মায়া বেগম, লাভলী বেগম ও মিনারা বেগম তালপাতার ডাঁটার আঁশ দিয়ে টুপি, টেবিল ম্যাট, ঝুড়িসহ নানা ধরনের খেলনা এবং ঘরে ব্যবহারিক তৈজসপত্র বানাচ্ছেন।

এসব তৈজসপত্র বানানোর কারিগরেরা জানান, গ্রামের সব বাড়িতেই তালপাতার ডাঁটা থেকে পাওয়া আঁশ দিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি হয় বছরের বারো মাস। তালপাতার ডাঁটা কিছুটা শুকানোর পর হাতুড়ি দিয়ে থেঁতলে আঁশ বের করা হয়। পরে তা রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় হরেক রকম তৈজসপত্র।

পাঁচখুর গ্রামের তৈরি এসব পণ্য সংগ্রহ করে রপ্তানিকারকদের সরবরাহ করেন স্থানীয় বাসিন্দা ইউনুস আলী। তিনি বলেন, গ্রামের এই শিল্প প্রায় শত বছরের পুরোনো। এক সময় টুপি এবং গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত পণ্য তৈরি হতো স্বল্প পরিসরে। দিনে দিনে চাহিদা বাড়ায় এখন তৈরি হচ্ছে বাহারি পণ্য। এই পণ্য এখন দেশ ছাড়িয়ে জার্মানি, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, পোল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

ইউনুস বলেন, ‘আমার বাবা ছহির উদ্দিন ৫০ বছর এই পেশায় ছিলেন। বাবাও তালের আঁশ দিয়ে টুপি তৈরি করতেন। বাবা ও দাদার পেশা ধরে রাখতে আমিও এই পেশায় যুক্ত হয়েছি। তবে আমি নিজে তৈরি করি না। কর্মীদের মাধ্যমে তৈরি করে বিক্রি করি।’

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক) বগুড়ার উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এই গ্রামের তৈরি করা পণ্য পরিবেশবান্ধব। গ্রামের প্রতিটি পরিবার স্বাবলম্বী হওয়ায় তাদের ঋণের প্রয়োজন হয় না। এ কারণে তারা বিসিকের সহযোগিতা নিতে আসেনি। তার পরেও গ্রাম পরিদর্শন করে তাদের কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পুলিশের তিন পদে অতিরিক্ত: তিনজনে একজন বাড়তি

ট্রেনের কেবিনের বালিশ, চাদর, কম্বলের ভাড়া দ্বিগুণ করার চিন্তা

ভারতে পোশাকের অর্ডার স্থগিত করছে মার্কিন ক্রেতারা, বাংলাদেশ-ভিয়েতনামে কারখানা স্থানান্তরের পরামর্শ

মোবাইল-টাকা ছিনতাইয়ের পর দুই তরুণীকে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ৩

ডোপ টেস্টে পজিটিভ, চবিতে শিক্ষকতা থেকে বাদ দুই প্রার্থী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত