Ajker Patrika

ফলন ভালো হলেও ধানের দাম নিয়ে চিন্তিত কৃষক

 নওগাঁ প্রতিনিধি
মাঠে ধান কাটতে ব্যস্ত নওগাঁর কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাঠে ধান কাটতে ব্যস্ত নওগাঁর কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নওগাঁয় পুরোদমে চলছে বোরো ধান কাটার মৌসুম। মাঠজুড়ে সোনালি শীষের দোলা। আবহাওয়ার অনুকূলতা আর রোগবালাই না থাকায় এবার ধানের বাম্পার ফলন। তবে মাঠের এই সোনালি ফসল উজ্জ্বলতা ছড়ালেও ধানের দাম লাভজনক হবে কি না, তা নিয়ে কৃষকদের চিন্তা বাড়ছে।

জেলার কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৯২ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১২ লাখ ৮৬ হাজার টন ধান ও ৮ লাখ ৭২২ হাজার ৫৩০ টন চাল।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নওগাঁর বিভিন্ন উপজেলার মাঠে চলছে ধান কাটার উৎসব। বিস্তীর্ণ প্রান্তরজুড়ে দিগন্ত ছুঁয়ে রয়েছে সোনালি শীষ। পাকা ধানের ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে বাতাস। বৈশাখের ঝলমলে রোদ মাথায় নিয়ে নারী-পুরুষ সবাই ব্যস্ত সোনালি ফসল ঘরে তুলতে। ধান কাটা, মাড়াই, শুকানো, বস্তাবন্দী করা—সব কাজই চলছে একযোগে। মাঠে যেমন কর্মচাঞ্চল্য, তেমনি বাড়ির উঠানেও চোখে পড়েছে মাড়াই ও শুকানোর দৃশ্য।

চাষিরা বলছেন, ভালো ফলন হলেও ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় অনেকে আগাম বিক্রি করে দিচ্ছেন উঠানেই। এই সুযোগে কিছু মৌসুমি ফড়িয়া সিন্ডিকেট করে কম দামে ধান কিনছে।

পাহাড়পুর গ্রামের কৃষক আনিসুর রহমান বলেন, ‘৩ বিঘায় ধান করেছি, ফলন খারাপ না। কিন্তু খরচ আর বিক্রির দামে হিসাব মেলাতে পারছি না। মণপ্রতি এখন ধান বিক্রি করতে হচ্ছে ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকায়। এত কম দামে লাভ তো দূরের কথা, পুঁজি ওঠে না।’

একই গ্রামের রহমত উদ্দিন বলেন, ‘সার, কীটনাশক, সেচসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা। আবার যারা ফড়িয়া, তারা দল বেঁধে সিন্ডিকেট করে ধান কিনছে। বাজারে গিয়ে দাম পাচ্ছি না।’

মিরাট গ্রামের কৃষক ইকবাল হোসেন বলেন, ‘৫ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে কাটারিভোগ ধান করেছি। শুরুর দিকে মণপ্রতি ১ হাজার ৩৫০ টাকা দামে বিক্রি করলেও এখন তা ২০০-২৫০ টাকা কমে যাচ্ছে।’

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার মহাদেবপুর, ছাতুনতলী, মাতাজীহাট, ছাতড়া হাট, চৌবাড়িয়া, সতিহাট, বদলগাছীর গোবর চাঁপা হাট ও পত্নীতলা সদরের সাপ্তাহিক হাটে প্রতিদিনই হাজার হাজার মণ ধান কেনাবেচা হচ্ছে। এসব হাটে জিরাশাইল ও কাটারিভোগ জাতের ধান প্রতি মণ ১ হাজার ১০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকেরা।

মাতাজিহাটে কৃষক সুশীল চন্দ্র মণ্ডল বলেন, কৃষকের ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকারিভাবে নজরদারি বাড়ানো খুব জরুরি। না হলে সিন্ডিকেটের দাপটে কৃষক বাঁচবে না।

ধান ব্যবসায়ী আনারুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে চালের দাম কম, তাই বেশি দামে ধান কেনা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। লাভ-লোকসান বুঝেই ধান কিনি। ইচ্ছে করে কৃষকদের ঠকাতে চাই না, এটা বাজারের ওপরই নির্ভর করে।’

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, ‘অনুকূল আবহাওয়ায় এবার ধানে রোগবালাই ছিল খুবই কম। বাজারে ধানের দাম কিছুটা কম হলেও ফলন ভালো হওয়ায় চাষিদের লোকসান হবে না বলে আশা করছি। এ পর্যন্ত প্রায় ৪৫ শতাংশ ধান কাটা শেষ। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি এড়াতে ধান ৮০ শতাংশ পাকলেই কেটে ঘরে তোলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত