Ajker Patrika

গ্রাহকের কোটি টাকা আত্মসাৎ করে গোপনে সমিতির মালিকানা বিক্রি

নেছারাবাদ (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
অভিযুক্ত সমবায় সমিতির পরিচালক উত্তম মিস্ত্রি। ছবি: সংগৃহীত
অভিযুক্ত সমবায় সমিতির পরিচালক উত্তম মিস্ত্রি। ছবি: সংগৃহীত

পিরোজপুরের নেছারাবাদে সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে গ্রাহকের কোটি কোটি টাকার আমানত সংগ্রহের পর মেয়াদ শেষে টাকা ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার জলাবাড়ী ইউনিয়নের আতা গ্রামের সমবায় সমিতির পরিচালক উত্তম মিস্ত্রির বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

অভিযোগ রয়েছে, এর আগেও এই উপজেলা থেকে ৫০টির মতো সমিতি বেআইনি ডিপিএস সংগ্রহ করে আত্মগোপনে গেলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্ট দপ্তর। অভিযোগকারীরা জানান, উত্তম মিস্ত্রি গ্রাহকের আমানতের টাকায় নিজের পরিবারের সদস্যদের নামে বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন। এমনকি অন্যের কাছে সমিতির শাখাও বিক্রি করে দিয়েছেন। এভাবে তিনি মানুষের টাকার অপব্যবহার করে আত্মগোপনে যাওয়ার কৌশল নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কয়েক বছর আগে উত্তম মিস্ত্রি এলাকায় একাধিক সমবায় সমিতি গড়ে তোলেন। গ্রামের বেকার তরুণদের মাঠকর্মী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে তাঁদের মাধ্যমে সহজ-সরল দিনমজুর, অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এককালীন, মাসিক, সাপ্তাহিক ও দৈনিক ভিত্তিতে আমানত সংগ্রহ করা হয়। প্রলোভন দেওয়া হয়—ছয় বছরে দ্বিগুণ টাকা ফেরত দেওয়া হবে।

নেছারাবাদ উপজেলার দক্ষিণ জগন্নাথকাঠি গ্রামের শিল্পী বেগম বলেন, ‘আমি ছয় বছর ধরে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে জমিয়েছি। মেয়াদ শেষে দ্বিগুণ দেওয়ার কথা থাকলেও গেল ফেব্রুয়ারিতে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আসল টাকাই ফেরত পাইনি।’ একই অভিযোগ করেছেন ঝালকাঠি সদর উপজেলার কৃষক সঞ্জয় মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘আমি এককালীন ৬ লাখ টাকা রেখেছিলাম। মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ডিসেম্বরে। লাভ দূরের কথা, এখনো আসল টাকাই ফেরত পাইনি।’

একাধিক সূত্র জানায়, উত্তম মিস্ত্রি গ্রাহকের টাকায় বরিশাল শহরে আলিশান বাড়ি, কার্গো জাহাজ ও জমি কিনেছেন। এখন আমানত ফেরত দিতে না পেরে ঝামেলা এড়াতে অভিজিৎ মণ্ডল নামে এক ব্যক্তির কাছে সাতটি শাখা বিক্রি করেছেন। এভাবে গোপনে সম্পদ বিক্রি করে সরে পড়ার কৌশল নিচ্ছেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তম মিস্ত্রি বলেন, ‘আমার মাঠে অনেক টাকা ছাড়া আছে। সেগুলো এলেই গ্রাহকের টাকা দেওয়া হবে। এখনো কোনো সম্পদ বিক্রি করিনি। প্রয়োজনে বিক্রি করব। সমিতির মালিকানা অন্যের কাছে হস্তান্তর করা আমার অধিকার।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. হাসান রকি বলেন, ‘উত্তম মিস্ত্রি আতা বহুমুখী সমবায় সমিতি নামে নিবন্ধন নিয়েছিলেন। আইন না মেনে ইচ্ছেমতো আমানত সংগ্রহ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। ইতিমধ্যে ওই সমিতির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। শুনেছি, উত্তম মিস্ত্রি প্রায় ২২৮ কোটি টাকার আমানত সংগ্রহ করেছেন। তাঁর নামে-বেনামে অগাধ সম্পদ রয়েছে। বরিশাল শহরে ৪ কোটি টাকার বাড়িও করেছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত