Ajker Patrika

নরসিংদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানকে কুপিয়ে হত্যা, আহত ২ 

নরসিংদী প্রতিনিধি
আপডেট : ২৯ মে ২০২৪, ০৯: ২৯
নরসিংদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানকে কুপিয়ে হত্যা, আহত ২ 

নরসিংদীতে মেহেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হাসানকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় আহত হয়েছেন সঙ্গে থাকা আরও দুজন। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে মাধবদী থানার মেহেরপাড়া ইউনিয়নের ভগিরথপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নরসিংদীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

নিহত মাহবুবুল হাসান ভগিরথপুর গ্রামের হাজী ইমাম উদ্দিনের ছেলে। 

প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের স্বজনেরা জানান, প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার রাতে ভগিরথপুর মাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে ৮-১০ জন দলীয় নেতা-কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন মাহবুবুল হাসান। পথে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আজহার অমিত প্রান্তের মালিকানাধীন ওবায়দুল্লাহ টেক্সটাইলের সামনে পৌঁছালে সাত-আটজন অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত মাহবুবুল হাসানসহ তাঁর সঙ্গে থাকা লোকজনের ওপর হামলা করে। এ সময় গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মাহবুবুল হাসান (৪০), সাঈদ হাসান পাপ্পু (৩৮) ও ফরহাদ মিয়া (৪০) আহত হন। 

স্থানীরা আহতদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হাসানকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত দুজনকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। খবর পেয়ে সদর হাসপাতালে ছুটে আসেন নিহতের স্বজন, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ জনপ্রতিনিধিরা। রাজনৈতিক পূর্ববিরোধের জেরে পরিকল্পিতভাবে এ হত্যার ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে দাবি কর্মী, সমর্থক ও স্বজনদের। তাঁরা এ হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। 

প্রত্যক্ষদর্শী রবিন মিয়া জানান, দলীয় কার্যালয় থেকে সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হাসানসহ তাঁরা বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় সামনে থাকা বালুর ট্রাকের আড়াল থেকে সাত-আটজন অস্ত্রধারী চিহ্নিত দুর্বৃত্ত হঠাৎ করে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মাহবুবুল হোসেনকে কোপাতে থাকে। এ সময় সঙ্গে থাকা লোকজন তাঁকে বাঁচাতে গেলে তাঁদের ওপরও হামলা করে। রাজনৈতিক বিরোধ এবং চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কারণে এ হত্যার ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। 

নিহত মাহবুবুল হাসানের ছোট ভাই হাফেজ মোহাম্মদ অলিউল্লাহ বলেন, ‘আমার ভাই সাধারণ জনগণের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করতেন। মাদক ব্যবসা, অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে সব সময় প্রতিবাদী ছিলেন। এসব কারণে খারাপ লোকজন কোণঠাসা থাকত। সম্প্রতি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমার ভাই যে পক্ষে কাজ করেছেন, তারা বিজয়ী হয়েছে। এই হিংসার জেরে পরাজিত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করেছে।’ 

নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মাহমুদুল কবীর বাশার বলেন, রাত পৌনে ১টার দিকে মেহেরপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হাসানসহ তিনজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। মাহবুবুল হাসানের মাথার পেছনে ঘাড়ে বড় ক্ষতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। গুলির বিষয়ে ময়নাতদন্তের পর বলা যাবে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ সময় সাঈদ হাসান পাপ্পু ও ফরহাদ মিয়া নামে আরও দুজনকে আহতাবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। 

নরসিংদী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহমেদ সদর হাসপাতালে গিয়ে হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও ঘটনাটি মাধবদী থানার হওয়ায় তদন্তের পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানাবেন বলে জানান। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি। 

নরসিংদীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান হত্যার পর পুলিশ ঘটনার তদন্তের পাশাপাশি অপরাধীদের ধরতে তৎপরতা চালাচ্ছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে আটক করা হয়েছে। পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

ছুটিতে গেলেন সেই বিচারক

‘শত শত কোটি ডলারের’ ক্ষতি: অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের সালিস আদালতে এস আলম

ফেসবুক বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী

খাদ্যে ভেজাল: বিদেশের মথবীজ দেশে রং মিশিয়ে মুগ ডাল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিরল টিউমারে মুখ ঢেকেছে মা-ছেলের, অসহায় পরিবার

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
বিরল রোগী কাজল ও তাঁর মা শাহানা খাতুন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিরল রোগী কাজল ও তাঁর মা শাহানা খাতুন। ছবি: আজকের পত্রিকা

নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার অতিথপুর গ্রামের এককোণে জরাজীর্ণ একটি কুঁড়েঘরে বাস করেন কাজল মিয়া (২২) ও তাঁর মা শাহানা খাতুন (৪৫)। মা-ছেলে দুজনই আক্রান্ত এক বিরল ও ভয়াবহ টিউমারে, যা ধীরে ধীরে কেড়ে নিচ্ছে তাঁদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের ক্ষমতা। সুন্দরের প্রতিচ্ছবি যে মুখ, সেই মুখই এখন কাজলের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জন্মের সময় কাজলের মুখে ছিল ছোট একটি টিউমার। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটি এখন বড় হয়ে তাঁর এক চোখ ও মুখ পুরোপুরি ঢেকে ফেলেছে। মুখের নিচে ঝুলে পড়েছে বিশাল মাংসপিণ্ড। খাওয়াদাওয়া করতে কষ্ট হয়, এক চোখে দেখতে পান না। বিকৃত চেহারার কারণে এখন গ্রামের লোকেরা তাঁর সঙ্গে মিশতে চায় না, একাকিত্ব যেন তাঁর নিত্যসঙ্গী।

শুধু কাজল নন, তাঁর মা শাহানা খাতুনও একই রোগে ভুগছেন। গালের পাশ থেকে ঝুলে পড়েছে টিউমার, যা বুক পর্যন্ত বিস্তৃত। শরীরের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গুটি।

দুজনকে নিয়ে দিশেহারা দিনমজুর বাবা মিরাজ আলী। সামান্য মজুরির টাকায় সংসার চালাতেই যেখানে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে এই ভয়াবহ রোগের চিকিৎসা করানো তাঁর পক্ষে কল্পনাতীত। দারিদ্র্য আর সমাজের অবহেলায় আরও কোণঠাসা হয়ে পড়েছে পরিবারটি।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মিরাজ আলীর স্ত্রী শাহানার মুখে বিয়ের আগে থেকেই ছোট টিউমার ছিল। শরীরে ছিল ছোট ছোট গুটি টিউমার। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই টিউমার বড় হয়ে ঝুলে পড়েছে। শরীরজুড়ে দেখা দিয়েছে অসংখ্য টিউমার। দুই ছেলে আর এক মেয়ের মধ্যে মেজ ছেলে কাজলের মুখে শুধু এমন টিউমার দেখা দিয়েছে। অন্যদের শরীরে কোনো টিউমার নেই।

বিরল রোগে আক্রান্ত কাজল মিয়া বলেন, ‘ছোটবেলায় কপালের কাছে ছোট একটা টিউমার হয়েছিল। সেটা বড় হতে হতে এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। এক চোখ টিউমারে ঢেকে যাওয়ায় সেই চোখে আর দেখতে পাই না। মুখ ঢেকে যাওয়ায় কথা বলতে ও খাবার খেতে কষ্ট হয়। এই অবস্থায় কোনো কাজকর্ম করতে পারি না। মানুষের কাছে হাত পেতে যা পাই, তা দিয়ে চলি। টিউমার ভালো হলে কাজ করেই খেতে পারতাম। আমার খুব ইচ্ছা হয় স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে। এমন জটিল রোগ হওয়ায় এলাকার কোনো মানুষ আমার সঙ্গে মেশে না। একাই চলতে হয়।’

কাজলের মা শাহানা খাতুন বলেন, ‘আমার দিন তো শেষের দিকে। ছেলেটার তো সামনে সারাজীবন পড়ে রয়েছে। এমন রোগ নিয়ে বাকি জীবন কেমনে কাটাবে। এভাবে টিউমার বাড়তে থাকলে কী করব! জটিল রোগের চিকিৎসা করানোর মতো সাধ্য আমাদের নেই। সরকারি সহায়তায় চিকিৎসা পেলে সে হয়তো স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেত।’

দিনমজুর মিরাজ আলী বলেন, ‘ছেলে আর স্ত্রী দুজনেই অসুস্থ। আমি গরিব মানুষ, কেমন করে ওদের চিকিৎসা করাব বুঝি না। মানুষের কাছে চেয়েচিন্তে যা পাই তা দিই খেতে। তাদের নিয়ে কী করব একমাত্র আল্লাই জানেন।’

প্রতিবেশীরা জানালেন, সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহায়তা তাঁরা এখনো পাননি।

প্রতিবেশী জিয়াউর রহমান বলেন, ‘ওদের অবস্থা খুব খারাপ। সরকারি সাহায্য পেলে হয়তো চিকিৎসা সম্ভব হতো। আমাদের সবার উচিত ওদের পাশে দাঁড়ানো।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

ছুটিতে গেলেন সেই বিচারক

‘শত শত কোটি ডলারের’ ক্ষতি: অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের সালিস আদালতে এস আলম

ফেসবুক বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী

খাদ্যে ভেজাল: বিদেশের মথবীজ দেশে রং মিশিয়ে মুগ ডাল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শচীন দেববর্মনের জন্মভিটায় দুই দিনের মেলা, দাবি পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্সের

দেলোয়ার হোসাইন আকাইদ, কুমিল্লা 
কুমিল্লায় শচীন কর্তার জন্মভিটা। ছবি: আজকের পত্রিকা।
কুমিল্লায় শচীন কর্তার জন্মভিটা। ছবি: আজকের পত্রিকা।

কুমিল্লার দক্ষিণ চর্থা এলাকায় অবস্থিত বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রের কালজয়ী সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী শচীন দেববর্মনের জন্মভিটায় আজ (৩০ অক্টোবর) বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে দুই দিনব্যাপী ‘শচীন মেলা’। কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত এই মেলায় অংশ নিচ্ছেন স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মী, শিল্পী, গবেষক ও শিক্ষার্থীরা। শচীনের জন্ম (১ অক্টোবর) ও প্রয়াণ (৩১ অক্টোবর) দিবসকে কেন্দ্র করে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এই আয়োজনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ত্রিপুরার রাজবংশের নবদ্বীপচন্দ্র দেববর্মনের ঘরে ১৯০৬ সালের ১ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন শচীন দেববর্মন। রাজপরিবারের উত্তরাধিকারের বিরোধ ও রাজনৈতিক কারণে তাঁর বাবা কুমিল্লায় স্থায়ী বসতি স্থাপন করেন। চর্থার দক্ষিণে প্রায় ৬০ একর জমির ওপর নির্মিত প্রাসাদটিই তাঁর জন্মভিটা হিসেবে পরিচিত। শচীন দেববর্মন ১৯৭৫ সালের ৩১ অক্টোবর ভারতে মারা যান।

কুমিল্লার গ্রামীণ পরিবেশ, নদীর ঢেউ, ভাটিয়ালি এবং স্থানীয় লোকসংগীতের সঙ্গে তাঁর শৈশবের পরিচয়ই সংগীতজীবনের মূল ভিত্তি স্থাপন করে। ছোটবেলায় স্থানীয় শিল্পীদের সঙ্গে সময় কাটানো, লোকসংগীত সংগ্রহ এবং সাংস্কৃতিক উৎসবের সঙ্গে যুক্ত হওয়া তাঁর সংগীত প্রতিভাকে নতুন দিগন্তে নিয়ে যায়।

কুমিল্লা জিলা স্কুল ও ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করার পর ১৯২৪ সালে তিনি কলকাতায় যান। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আনুষ্ঠানিক সংগীত শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করে খ্যাতি অর্জন করেন।

১৯২৩ সালে কলকাতা বেতারে তার প্রথম গান রেকর্ড হয়, আর ১৯৩২ সালে প্রথম গ্রামোফোন রেকর্ড প্রকাশিত হয়। এরপর বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রের জন্য সংগীত পরিচালনায় নাম লেখান।

শচীন দেবের সংগীতজীবনের সবচেয়ে উজ্জ্বল অধ্যায় শুরু হয় ১৯৪৪ সালে মুম্বাইয়ে স্থায়ী বসতি গড়ে। হিন্দি চলচ্চিত্রে তাঁর সংগীত পরিচালনা এবং কণ্ঠে অমর গান আজও শ্রোতাদের হৃদয় স্পর্শ করে। ‘শিকারি’, ‘দেবদাস’, ‘সুজাতা’, ‘আরাধনা’, ‘গাইড’ প্রভৃতি চলচ্চিত্রে তাঁর সংগীত পরিচালনা বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে। লতা মঙ্গেশকর, কিশোর কুমার, গীতা দত্তসহ বহু কিংবদন্তি তাঁর সুরে গান গেয়েছেন।

১৯৩৭ সালে তিনি গায়িকা মীরা দেবীকে বিয়ে করেন। তাঁদের সন্তান রাহুল দেববর্মনও ভারতীয় চলচ্চিত্রে খ্যাতিমান সংগীত পরিচালক হন।

দীর্ঘদিন ধরে শচীনের জন্মভিটা ছিল পরিত্যক্ত। পাকিস্তান আমলে এর একটি অংশ সরকারি খামার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। স্বাধীন বাংলাদেশে ২০১৪ সালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বাড়ির একটি অংশ উদ্ধার করা হলেও পূর্ণাঙ্গ সংস্কার ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ আজও হয়নি।

বাড়ির স্থাপত্যগত অবস্থা নাজুক। সদর দরজার সঙ্গে ঘরের বারান্দা আকৃতির তিনটি কক্ষ, পূর্ব ও পশ্চিমাংশে আরও ছয়টি কক্ষ এবং পূজার ঘর রয়েছে। তবে পলেস্তারা খসে পড়ছে, দেয়াল ও প্রাচীরে অঙ্কিত আলপনা মুছে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ ও ওয়াশব্লকের সমস্যার কারণে সংস্কারহীন ভিটা রাত্রে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়।

বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘এই বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙে গেছে, ঘরের দরজা ভাঙাচোরা এবং বিদ্যুৎ নেই। অন্ধকার ও ভগ্নদশার কারণে মাদকসেবীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। আমি একা বাধা দিতে গেলে হুমকির মুখে পড়ি।’

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, বাড়িটি সন্ধ্যার পর মাদকসেবী ও জুয়াড়িদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়। যদি বাড়ি সংস্কার ও নিরাপত্তাব্যবস্থা ঠিক থাকে, তাহলে শচীন মেলার আয়োজন আরও সফল হবে এবং এখানে বখাটেদের আনাগোনা কমবে।

দুই দিনব্যাপী শচীন মেলায় আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং দেশীয় ঐতিহ্যবাহী ১৫টি স্টল থাকবে। অনুষ্ঠানে শচীনভক্ত, শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীরা অংশ নেবেন এবং তাঁর সুরের মাধ্যমে আবেগময় পরিবেশ তৈরি হবে।

সামাজিক সংগঠন ‘ঐতিহ্য কুমিল্লা’র সভাপতি ও শচীন গবেষক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল বলেন, ‘উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিল্পী শচীন দেববর্মন, যিনি শচীন কর্তা এবং এস ডি বর্মন নামে পরিচিত। তাঁর অবদান আজও বাঙালির হৃদয়ে জীবন্ত। শচীনের বাড়ি পরিত্যক্ত না রেখে দেশের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হলে কুমিল্লা সংগীত ও সংস্কৃতির একটি আন্তর্জাতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পাবে।’

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। জাতীয় জাদুঘরের প্রতিনিধিদল বাড়িটি পরিদর্শন করেছে। পরিকল্পনা রয়েছে পূর্ণাঙ্গ জাদুঘর, মুক্তমঞ্চ, গবেষণার কক্ষ ও সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণের। এটি বাস্তবায়িত হলে পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

ছুটিতে গেলেন সেই বিচারক

‘শত শত কোটি ডলারের’ ক্ষতি: অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের সালিস আদালতে এস আলম

ফেসবুক বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী

খাদ্যে ভেজাল: বিদেশের মথবীজ দেশে রং মিশিয়ে মুগ ডাল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

লরির ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী তরুণী নিহত

সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে তেলবাহী লরির ধাক্কায় আয়েশা আক্তার (২২) নামের এক তরুণী নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় তাঁর সঙ্গে থাকা মো. খালেদ হোসেন (২৮) নামের এক যুবক আহত হন। গতকাল বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাতে মহাসড়কের দশতলা এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত তরুণী পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার উত্তর তাপালবাড়িয়া গ্রামের মো. জাকির হোসেনের মেয়ে এবং আহত যুবক নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) ১ নম্বর ওয়ার্ডের মুজিববাগ এলাকার হাসান আলীর ছেলে।

জানা গেছে, মহাসড়কের ঢাকামুখী লেন দিয়ে নিহত ও আহত হওয়া ব্যক্তিরা মোটরসাইকেলযোগে যাওয়ার পথে দশতলা-সংলগ্ন বেঙ্গল প্লাস্টিক কারখানার সামনে একটি তেলের লরি সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে মুহূর্তেই মোটরসাইকেল আরোহীরা সড়কে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা আহত ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিক সাইনবোর্ডের প্রো অ্যাকটিভ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসকেরা নিহত তরুণীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর ঢামেক হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তরুণীর মৃত্যু হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ জুলহাস উদ্দিন বলেন, ‘একটি ট্যাংক লরি পেছন দিক থেকে মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দিলে আরোহী তরুণী গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুর্ঘটনাকবলিত মোটরসাইকেল ও ট্যাংক লরিটি জব্দ করি। তবে ঘাতক লরিচালক দুর্ঘটনার পরপরই পালিয়ে যান।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

ছুটিতে গেলেন সেই বিচারক

‘শত শত কোটি ডলারের’ ক্ষতি: অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের সালিস আদালতে এস আলম

ফেসবুক বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী

খাদ্যে ভেজাল: বিদেশের মথবীজ দেশে রং মিশিয়ে মুগ ডাল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চাকা ফেটে টমটম উল্টে দেয়ালে ধাক্কা, চালক নিহত, আহত ৬

ঝালকাঠি প্রতিনিধি
আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঝালকাঠিতে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের মালবাহী একটি টমটম (নছিমন) উল্টে সোহেল (৩০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও পাঁচ শ্রমিক। বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাত ৯টার দিকে সদর উপজেলার বাসন্ডা ইউনিয়নের আগলপাশা এলাকার বাকলাই বাড়ির সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত সোহেল বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের ছোট করফাকর গ্রামের নুরু আকনের ছেলে এবং তিনি দুর্ঘটনাকবলিত টমটমের চালক ছিলেন। আহত ব্যক্তিরা হলেন সোলেমান (২২), ইমন হোসেন (২২), রোহান হোসেন (১৮), সামিউল (২৭) ও হামিম (১৮)।

ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন লিডার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রাত ৯টা ১১ মিনিটে পুলিশ কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে থাকা একটি বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙে ভেতরে ঢুকে যায়। আমরা প্রাচীরের ইটের নিচে চাপা পড়া একজনকে উদ্ধার করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নিয়ে আসি।’

সোহেলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) টি এম মেহেদী হাসান সানি জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই সোহেলের মৃত্যু হয়। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন হাসপাতালে ভর্তি আছেন এবং একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিক হামিম বলেন, ‘আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তারেক অ্যাসোসিয়েশনের পল্লী বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার প্রতিস্থাপন শেষে গুয়াচিত্রা এলাকা থেকে টমটমে করে ট্রান্সফরমার ও অন্য মালপত্র নিয়ে ঝালকাঠি পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের উদ্দেশে ফিরছিলাম। পথে গাড়ির সামনের চাকা ফেটে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দেয়ালে লাগলে দেয়ালটি ভেঙে যায়। এতে আমরা সবাই আহত হই এবং একজন দেয়ালের নিচে চাপা পড়েন। স্থানীয় লোকজন আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তবে একজন দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে থাকেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।’

এ বিষয়ে ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, নিহত ব্যক্তির মরদেহ ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। স্বজনেরা আসার পর প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

ছুটিতে গেলেন সেই বিচারক

‘শত শত কোটি ডলারের’ ক্ষতি: অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের সালিস আদালতে এস আলম

ফেসবুক বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী

খাদ্যে ভেজাল: বিদেশের মথবীজ দেশে রং মিশিয়ে মুগ ডাল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত