Ajker Patrika

‘স্কুলে যান সপ্তাহে দুই দিন, হাজিরা দেন পুরো মাসের’

ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি 
আপডেট : ০১ মার্চ ২০২৪, ১৬: ৩২
‘স্কুলে যান সপ্তাহে দুই দিন, হাজিরা দেন পুরো মাসের’

প্রতি মাসে দু-এক দিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন। গিয়েই হাজিরা খাতায় পুরো মাসের স্বাক্ষর দিয়ে চলে যান। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বাগবেড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিন গিয়ে অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে। তবে তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

সরেজমিন ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিনের মতো গতকাল বৃহস্পতিবারও বিদ্যালয়ে উপস্থিত হননি প্রধান শিক্ষক আবুল খায়ের। এ প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ে উপস্থিত শিক্ষকদের কাছে জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, ‘স্যার কেন বিদ্যালয়ে আসেননি আমরা জানি না।’ এদিকে মাসে দু-একবার বিদ্যালয়ে উপস্থিত হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোছা. রুমা আক্তার বলেন, ‘স্যার মাসে দুই দিন না, সপ্তাহে দুই দিন আসেন।’

বিদ্যালয়ের পুরোনো ভবনের পাশাপাশি দুটি শ্রেণিকক্ষ। দুই কক্ষেই শিক্ষার্থীরা হৈহুল্লোড় করছে। প্রথমে দেখে যে কারো মনে হতে পারে, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক নেই। তবে কাছে গিয়ে দেখা যায়, শ্রেণিকক্ষে থাকা দুই শিক্ষিকা বসে মোবাইল ফোন স্ক্রল করছেন। এই প্রতিবেদককে দেখে তড়িঘড়ি করে বাচ্চাদের পড়াতে শুরু করেন।

বিদ্যালয়টির পাশের স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এ দৃশ্য শুধু এক দিনের নয়, প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে চরম অবহেলা এবং অনিয়মের মধ্য দিয়ে বছরব্যাপী এভাবেই বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ পাঁচজন শিক্ষক রয়েছেন। শিক্ষার্থী রয়েছে ১২৩ জন। প্রায় সারা বছরই অনুপস্থিত থেকে বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক।

বিদ্যালয়টির পাশেই উমর ফারুক নামের এক ব্যক্তির বাড়ি। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রধান শিক্ষককে মাসে দু-একবার আসতে দেখি। এসে ১৫-২০ মিনিট থেকে আবার চলে যান। পরে শুনি অফিশিয়াল কাজে নাকি উনি ব্যস্ত থাকেন। এ জন্য বিদ্যালয়ে আসতে পারেন না। ওনার এতই যখন অফিশিয়াল কাজ, তাহলে তাঁকে সরকার স্কুলের দায়িত্ব না দিয়ে মন্ত্রণালয়ে নিয়ে নিলেই তো পারে।’

এদিকে প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতির বিষয়ে একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাচ্চারা এসে বসে থাকে। এরপরও শিক্ষকদের আসার খবর থাকে না। আর যদি আসেনও, নিজেরা গল্পগুজবে ব্যস্ত থাকেন। নিজে অবৈধ সুযোগ নেওয়ার জন্য এই সুযোগটা তো প্রধান শিক্ষক নিজেই করে দিয়েছেন।’

তাঁরা আরও বলেন, ‘চোখের সামনে আমাদের ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে। আমরা এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারি না। আমরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাই।’

গতকাল বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার কথা আজকের পত্রিকার কাছে স্বীকার করেন প্রধান শিক্ষক মো. আবুল খায়ের। তিনি বলেন, ‘বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা সফরে যাওয়ার ব্যাপারে গতকাল একটু ব্যস্ত ছিলাম। তাই বিদ্যালয়ে যাইনি। কিন্তু আমি প্রতিদিনই বিদ্যালয়ে যাই। আমার বিরুদ্ধে স্থানীয়রা যে অভিযোগ তুলেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। অফিশিয়াল কাজে বিভিন্ন সময় এখানে-সেখানে যেতে হয়।’

উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিইও) ও বিদ্যালয়টির ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকা রেনেনথারা সুলতানা বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ওই প্রধান শিক্ষক আমার কাছ থেকে কোনো ছুটি নেননি। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (টিইও) নিলুফার হাকিম বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে উপস্থিত না হয়ে মাসের পর মাস বেতন নেবে এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তদন্তসাপেক্ষে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার ক্ষেত্র হলো শিক্ষা। এ ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম প্রমাণিত হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি আসলে বিশ্বাসই করতে পারছি না, একজন প্রধান শিক্ষক এ ধরনের অনিয়ম করে বেড়াবেন, অথচ তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। বিষয়টি আমি দেখব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত