Ajker Patrika

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত: সাগর নেই, তাই হয়নি ঈদের কেনাকাটা

ইলিয়াস আহমেদ, ময়মনসিংহ 
আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২৫, ২০: ১৯
ছবি হাতে নিহতের বাবা মো. আসাদুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত
ছবি হাতে নিহতের বাবা মো. আসাদুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত

সাগর ছিলেন একটু আরামপ্রিয়। ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে নামাজে যেতেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। এরপর বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন। তাঁর সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিলেন চাচা আশরাফুজ্জামান নিক্সন (যাঁকে সাগর বাবা বলে ডাকতেন)।

নামাজ পড়ে পরিবারের ছোট ভাই–বোনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতেন তিনি। গত বছর যে পাজামা–পাঞ্জাবি পরে সাগর ঈদের নামাজে গিয়ে ছিলেন, সেগুলো হাতে নিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ১৯ জুলাই ময়মনসিংহে শহীদ রিদোয়ান হাসান সাগরের চাচা আশরাফুজ্জামান নিক্সন।

আজ শনিবার দুপুরে নগরীর চৌরঙ্গী মোড়ে সাগরের বাসায় গেলে তাঁর চাচা আশরাফুজ্জামান নিক্সন সাগরের গত বছর পরিহিত পাজামা–পাঞ্জাবি নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘এগুলো এখন কেবলই স্মৃতি। সাগর আমার সন্তানের চেয়েও বেশি আদরের ছিল। সে মারা যাওয়ায় এবার ঈদের কোনো কেনাকাটা আমাদের দুই পরিবারের হয়নি। কারণ, ছেলে নেই, কাকে নিয়ে ঈদ করব।’

মো. আসাদুজ্জামান ও রহিমা খাতুন দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সাগর ছিলেন বড়। একমাত্র ভাইকে হারিয়ে পাগলপ্রায় বোন আফিয়া তাবাসসুম সুপ্তি। ভাইকে ছাড়া এবার তার প্রথম ঈদ। তাই পুরো বাড়িতে নেমে এসেছে গভীর শূন্যতা। সাগরের খেলার সাথী তাঁর পরিবারের ছোট ভাই–বোন সবাই বাকরুদ্ধ।

সাগরের বাবা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘পরিবারে সচ্ছলতা থাকলেও ঈদে সাগরের তেমন কোনো চাহিদা ছিল না। তাই যা কিনে দিতাম, তা–ই সে পরত। ঘোরাঘুরি তার পছন্দ ছিল। ঈদের দিন নামাজ শেষে পরিবারের সদস্যদের একটু সময় দিয়ে বাইরে বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়ে যেত। এসব কেবল এখন শুধুই স্মৃতি।’

কথা হয় সাগরের মায়ের বিষয়ে। ছেলের কথা মনে হলে বারবার কান্নায় মূর্ছা যান তিনি। ছেলের মৃত্যুর পরে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন মা। অল্পতেই রেগে যান তিনি। সাগরের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে যান তিনি। সাগরকে ছাড়া প্রথম ঈদ কীভাবে করবেন, এই চিন্তায় পাগলপ্রায় তিনি।

রিদোয়ান হাসান সাগর। ছবি: সংগৃহীত
রিদোয়ান হাসান সাগর। ছবি: সংগৃহীত

রিদোয়ান হাসান সাগর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ১৯ জুলাই পুলিশ ও আওয়ামী লীগের মিছিল থেকে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় তাঁকে। তিনি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। নগরীর একটি কম্পিউটারের দোকানে পড়ালেখার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরি করতেন তিনি।

সাগরের বাবা বলেন, জুলাই–আগস্টে যে স্পিরিট নিয়ে ছেলেরা আন্দোলন করেছিলেন, তা এখন ম্লান হয়ে গেছে। সাগরেরা হয়ে গেছেন বলির পাঠা। এই অভ্যুত্থানকে পুঁজি করে একটি মহল এখন সুযোগ নিচ্ছে।

রিদোয়ান হাসান সাগর। ছবি: সংগৃহীত
রিদোয়ান হাসান সাগর। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই ফাউন্ডেশনের ৫ লাখ টাকা ছাড়া আর তেমন বড় কোনো সরকারি সহযোগিতা আসেনি বলে জানান সাগরের বাবা। তিনি বলেন, অনেক বড় বড় প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো কোনোটাই বাস্তবায়ন করা হয়নি। ইফতার ও ঈদসামগ্রীর নামে যে উপহার দেওয়া হয়েছে, তা খুবই হাস্যকর। অনেক শহীদ পরিবার আছে যারা এখনো তিন বেলা ভালোমন্দ খেতে পারছে না। অনেক সন্তানের পিতা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, এখন তাঁদের ঘরে দুধ কেনার টাকা পর্যন্ত নেই। যাঁদের জীবনের বিনিময়ে কর্মকর্তারা বড় বড় চেয়ারে বসেছেন, তাঁরা যদি শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করেন, তাহলে বলার কিছু নেই।

রিদোয়ান হাসান সাগর। ছবি: সংগৃহীত
রিদোয়ান হাসান সাগর। ছবি: সংগৃহীত

ছেলে হত্যার বিচার প্রসঙ্গে সাগরের বাবা বলেন, ‘সাগরের হত্যাকারীরা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। আমরা বললে তারা ব্যবস্থা নেবে, এটা তো হতে পারে না। প্রশাসন তৎপর হয়ে কাজ করছে না। আমাদের ছেলেরা রাজপথে জীবন দিয়েছে। এখন বিচার চাইতে গিয়ে যদি দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়, সেটা দুঃখজনক।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহ জেলা শাখার সদস্যসচিব আলী হোসেন বলেন, ‘আমরা আমাদের ভাইদের হারিয়েছি, বিনিময়ে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। শহীদ পরিবারকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। ছেলে ছাড়া বাকিটা জীবন যাঁদের কাটাতে হবে, এ দুঃখ শুধু তাঁরাই উপলব্ধি করতে পারেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই জাতীয় সনদ: গণভোটের সময়ে অনড় জামায়াত-এনসিপি

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব এহসানুল হক

লন্ডনে ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে দেখা করে চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়েছিলেন রোজিনা

গাজায় অবস্থান পুনরুদ্ধার করছে হামাস, ইসরায়েলপন্থীদের দিচ্ছে শাস্তি

সীমা লঙ্ঘনকারীরা বিচারের মুখোমুখি হোক—সেনা কর্মকর্তাদের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রসঙ্গে বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত