Ajker Patrika

মামলা না নেওয়ায় ওসিকে চাকরি ছেড়ে দিতে বললেন বিএনপি নেতা

ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি  
বিএনপি নেতার আনিসুজ্জামান গামা ও বকশীগঞ্জ থানার ওসি খন্দকার শাকের আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপি নেতার আনিসুজ্জামান গামা ও বকশীগঞ্জ থানার ওসি খন্দকার শাকের আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

জামালপুরের বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদকে আওয়ামী লীগের ‘দোসর’ আখ্যা দিয়ে চাকরি ছেড়ে দিতে বলেছেন স্থানীয় বিএনপির এক নেতা। থানায় মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানানোয় ওসিকে চাকরি ছেড়ে দিতে বলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযুক্ত বিএনপি নেতার নাম আনিসুজ্জামান গামা। তিনি বকশীগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি। এ ছাড়া তিনি জামালপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এ নিয়ে গতকাল শুক্রবার দুপুরে পৌর বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন বিএনপি নেতা আনিসুজ্জামান গামা।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে মামলার বিষয়াদি নিয়ে ওসি খন্দকার শাকের আহমেদের সঙ্গে আনিসুজ্জামান গামার কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর জেলাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ এপ্রিল উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আশিকুর রহমান তুলন বাদী হয়ে থানায় ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, আগের দিন ২৬ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে পৌর শহরের বটতলা মোড় এলাকায় বিএনপি কার্যালয়ে যাওয়ার পথে স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বাদশা ও তাঁর ছেলে সোহেল রানাসহঅজ্ঞাত ১০-১৫ জনকে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বকশীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ধরে গালিগালাজ করতে দেখেন। এতে প্রতিবাদ করলে তাঁকেও গালিগালাজ করেন তাঁরা। একপর্যায়ে তাঁকে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দিয়ে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। এ ছাড়া তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করেন।

এদিকে, আশিকুর রহমান তুলনের থানায় দেওয়া অভিযোগটি মামলা হিসেবে রুজু না করায় ক্ষুব্ধ হয়ে বকশীগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি আনিসুজ্জামান গামা গত ২৮ এপ্রিল রাতে বকশীগঞ্জ থানার ওসি খন্দকার শাকের আহমেদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। কথা বলার একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। ওসি ও বিএনপি নেতার একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ১ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের অডিও রেকর্ডটিতে শোনা যায়, কেন্দ্রীয় বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ও স্থানীয় সাবেক এমপি এম রশিদুজ্জামান মিল্লাতকে উদ্দেশ্য করে ওসি খন্দকার শাকের আহমেদকে বিএনপি নেতা আনিসুজ্জামান গামা বলেন, ‘মানব না। মিল্লাত সাহেব মামলা নেওয়া না-নেওয়ার কে? উনি কি মাইর খাইছে? আপনি আরেকজনের কথায় মামলা নেবেন না, মানে আপনি স্বৈরাচারের দোসর। আপনি কেন মামলা নিলেন না?’

জবাবে ওসি শাকের বলেন, ‘আপনাদের নিজেদের দলের লোক একজন বলবে মামলা না নিতে, আপনি বলবেন মামলা নিতে, তাহলে আমি কীভাবে মামলা নিব? এটা মামলা নেওয়ার মতো ঘটনা না, এটা ৩২৩-এর ঘটনা।’

বিএনপি নেতা গামা বলেন, ‘৩২৩ ধারায় মামলা নেবেন।’

ওসি বলেন, ‘৩২৩-এ মামলা হয়? আপনি তো পিপি, আইন ভালো জানেন, আপনি কোর্টে মামলা করিয়ে দেন।’

বিএনপি নেতা গামা বলেন, ‘আপনি মামলা না নিয়ে ঘুরালেন কেন? আপনি পারবেন না, তাহলে আপনি রিজাইন দেন।’

ওসি বলেন, ‘আমি কেন রিজাইন দেব? আপনি রিজাইন দেন। আপনি আওয়ামী লীগের লোকজনকে বিএনপি বানিয়ে জামিন করিয়ে নিচ্ছেন। আপনি তো বিএনপির নাম ভাঙিয়ে বাণিজ্য করে যাচ্ছেন। আপনি আমাকে হুমকি দিচ্ছেন কেন?’

এ সময় বিএনপি নেতা গামা বলেন, ‘আমি সরকারের পিপি, আমি বিএনপির পিপি না, আমি বিএনপির গোলাম না।’

বিএনপি নেতা আনিসুজ্জামান গামা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমি অন্যায়ের সঙ্গে কোনো আপস করি না। আমার দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের পক্ষে থাকা আমার পরিবারের শিক্ষা। ঘটনার রাতে আমার এবং ওসি সাহেবের মধ্যে যে কথোপকথন হয়েছে, সেটা রেকর্ড করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করানো হয়েছে, তাতে আমি মোটেই বিচলিত নই। কারও বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ নেই। তবে এ ঘটনা যার মাধ্যমেই হোক, বিষয়টি ফেসবুকে প্রকাশ করে প্রশাসনের সঙ্গে দলীয় বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে এবং আমার পেশা ও রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে বলে মনে করি।’

মামলার বাদী ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আশিকুর রহমান তুলন বলেন, ‘আমার অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ না করায় বিএনপি নেতা গামা সাহেব ওসি সাহেবকে ফোন করে বিষয়টি জানতে চেয়েছেন। এটা তো দোষের কিছু দেখছি না।’

এ বিষয়ে বকশীগঞ্জ থানার ওসি খন্দকার শাকের আহমেদ বলেন, ‘আমাদের আইনানুসারে কাজ করতে হয়। দলীয় বিষয়ে দলীয় নেতা-কর্মী সিদ্ধান্ত নেন। দলীয় নেতারা প্রথমে বিষয়টি মীমাংসা করা হবে মর্মে জানিয়েছিলেন। সে কারণেই সময় নেওয়া হচ্ছিল না। পরে মামলা নেওয়া হয়েছে। কারও হুমকি-ধমকিতে আমি বিচলিত নই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত