Ajker Patrika

ইউরোপ আমেরিকার নয়, বাংলাদেশেরই স্কুল ডেকুরা প্রাথমিক বিদ্যালয়

আরিফ আহম্মেদ, গৌরীপুর, ময়মনসিংহ
ইউরোপ আমেরিকার নয়, বাংলাদেশেরই স্কুল ডেকুরা প্রাথমিক বিদ্যালয়

বিদ্যালয়ের মাঠে পা দেওয়ার পরপরই মনে হবে নিশ্চয় পথ ভুলে ইউরোপ-আমেরিকার কোনো বিদ্যালয়ে চলে এসেছি। অথবা যা দেখছি তা সত্যি নয়, স্বপ্ন বা কল্পনা। তবে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে ঘোর কেটে যাবে। সবাই শুদ্ধ, সাবলীল বাংলায় কথা বলছে। কেবল ইচ্ছাশক্তির জোরেই অজপাড়া গাঁয়ের অবহেলিত এক প্রাথমিক বিদ্যালয়কে এত দূর আনা যায়। 

দেশে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা নিয়ে সমালোচনার মাঝেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন প্রধান শিক্ষক রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছেন নিজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়।

একটু পেছনে ফেরা যাক। ১৯৭১ সালে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার অচিন্ত্যপুর ইউনিয়নের ডেকুরা গ্রামের সচেতন মানুষেরা মিলে প্রতিষ্ঠা করেন ডেকুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পৌর শহর থেকে ৯ কিলোমিটার দূরের বিদ্যালয়টিতে যাওয়ার বেশির ভাগ পথই দুর্গম। গ্রামের মানুষেরা শুরুতে ছেলেমেয়েদের তো স্কুলে দিতেই নারাজ। বরং ছেলেরা বাবার সঙ্গে মাঠে কাজ করবে আর মেয়েরা মায়ের সঙ্গে ঘরের কাজ করবে এমনটাই ধারণা ছিল তাদের। সে কারণে মাত্র ৪ বছর আগেও বিদ্যালয়টি ছিল জরাজীর্ণ ও অবহেলিত। কিন্তু সেই অবস্থা পাল্টে দিয়েছে বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ অলি উল্লাহ।

ডেকুরা প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পিটিরত শিক্ষার্থীরা।এলাকাবাসী জানান, ২০১৮ সালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে মোহাম্মদ অলি উল্লাহ। তিনি আসার পর থেকেই জাদুমন্ত্রের মতো পাল্টে যেতে থাকে সব। আগে স্কুল মেরামতের কথা বললেই শোনা যেত টাকা নেই, বরাদ্দ নেই। কিন্তু অলি উল্লাহ স্যার আসার পর থেকেই শুরু হয় সংস্কারের কাজ। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তিনি অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে ছেলেমেয়েদের স্কুলে আনেন। 

মোহাম্মদ অলি উল্লাহ বলেন, ‘বিদ্যালয়ে যোগদানের পর জরাজীর্ণ অবস্থা দেখে মনটা খারাপ হয়ে যায়। ছাত্রছাত্রীরাও কেমন এলোমেলো, নিয়মিত স্কুলে আসে না, লেখাপড়া করে না। ভাবলাম কিছু একটা করা দরকার। তাই প্রথমে সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়টি সুন্দর করে সাজানোর। বিষয়টি নিয়ে গৌরীপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মনিকা পারভীন স্যারের সঙ্গে কথা বলি। শুনে স্যার খুব খুশি হলেন, আমাকে উৎসাহিত করলেন ও সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিলেন। সেই থেকে শুরু একটি আধুনিক বিদ্যালয় গড়ে তোলার কাজ। বর্তমানে বিদ্যালয়ে প্রায় সাড়ে তিন শত শিক্ষার্থী। ৩০ / ৩৫টি পিটি জানে ছাত্রছাত্রীরা। নাচ, গান, আবৃত্তি, অভিনয়, চিত্রাঙ্কন সব বিষয়েই তারা এখন পারদর্শী। উপস্থিতির হার শতকরা ৯৫ ভাগ। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজ হাতে সাজিয়েছে মনোরম বাগান।’

গৌরীপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মনিকা পারভীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইচ্ছাশক্তি থাকলে অসম্ভবকে যে সম্ভব করা যায় তার জ্বলন্ত প্রমাণ ডেকুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অলি উল্লাহ। শিক্ষা অফিস থেকে আমরা সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছি, তবে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজটা বাস্তবায়ন করেছেন তিনি। ডেকুরা স্কুল এখন আদর্শ ও অনুকরণীয়।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাবেক সিইসি নূরুল হুদার গলায় ‘জুতার মালা’ দিয়ে পুলিশে সোপর্দ

ইরানের পতন হলে, এরপরই রাশিয়া—অভিমত রুশ বিশ্লেষকদের

যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর মোদির সঙ্গে ইরানের প্রেসিডেন্টের ফোনালাপ

অনেক দেশ ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র দিতে প্রস্তুত, দাবি পুতিনের শীর্ষ সহযোগীর

মার্কিন হামলার পর ইসরায়েলে ‘খোররামশহর-৪’ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত