Ajker Patrika

জসিমের শিকলে বন্দিজীবন 

মেলান্দহ (জামালপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২২, ১২: ০২
জসিমের শিকলে বন্দিজীবন 

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার চাঁড়ালকান্দি গ্রামের যুবক জসিম উদ্দিন (২৬)। ছয় বছর আগে ২০১৬ সালে হঠাৎ তাঁর চলাফেরা অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। একদিন পাশের গ্রামে গিয়ে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি। সেদিন উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয় জসিম উদ্দিনকে। চিকিৎসা শেষে নিয়ে যাওয়া হয় বাসায়। কিন্তু একপর্যায়ে তিনি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। এরপর থেকে গত দুই বছর ধরে শিকলে বন্দী তাঁর জীবন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শিকলে বন্দী যুবক জসিম উদ্দীনের বাড়ি মেলান্দহ উপজেলার চাঁড়ালকান্দি গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মৃত নিজাম উদ্দিন। নিজাম উদ্দিন তিন বছর আগে মারা গেছেন। বাড়িতে বড় এক ভাই ও মা থাকেন। চার ভাই-বোনের মধ্যে জসিম সবার ছোট।

এলাকাবাসী জানান, জসিম উদ্দিন পড়ালেখায় মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করেছিলেন। জসিম যখন স্বাভাবিক ছিলেন, তখন তিনি এক মেয়েকে ভালোবাসতেন। সেই প্রেমের সম্পর্ক বেশি দিন গড়ায়নি। প্রেমের সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এতে আসক্ত হয়ে পড়েন নেশায়। পারিপার্শ্বিক নানা মানসিক চাপে একদিন পাশের গ্রামে গিয়ে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। সেখান থেকে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল থেকে জসিমকে নিয়ে যাওয়া হয় বাসায়। কিন্তু একপর্যায়ে তিনি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। এরপর থেকে শিকলে বাঁধা পড়েন জসীম।

শুক্রবার সকালে জসিম উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট্ট একটি বাঁশের চাটাই দিয়ে তৈরি ঘরে নোংরা একটি কাপড় গায়ে দিয়ে শুয়ে আছেন। দুপাশে রয়েছে বেড়া। পা শিকল দিয়ে একটি খুঁটির সঙ্গে বাঁধা। কোনো কথা বলছেন না। শুধু এদিক-সেদিক তাকাচ্ছেন। চারপাশে মশার উপদ্রব। বৃষ্টি এলে ভিজতে হয়। জসিমের কাছে পুরোনো কোনো স্মৃতির কথা জানতে চাইলে লজ্জায় মুখ ডেকে ফেলেন।

এ বিষয়ে তাঁর মা জরিনা বেগম বলেন, ‘জসিমের বয়স যখন ছয় বছর, তখন থেকে সে পাগল। আমার এই ছেলে জীবিত থেকেও মরা, আগে কিছুটা ভালো ছিল। এখন আগের চাইতে সমস্যা বেড়েছে। আমার ছেলে পড়াশোনায় খুব ভালো ছিল। এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার আগে এই সমস্যা তাঁর শুরু হয়। অসুস্থ হয়েও এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। ভালো রেজাল্টও করেছে। তাঁর চিকিৎসার খরচের জন্য সংসারের সবকিছু বিক্রি করেছি। এখন চিকিৎসা করার জন্য আমাদের কাছে আর কিছুই নেই। বেসরকারি হাসপাতালে কিছুদিন চিকিৎসা করিয়েছি। এতে ১ লাখ টাকা খরচ হয়। সেখানে কিছুটা ভালো হয়েছিল। কিন্তু টাকার অভাবে তাকে ঘরে নিয়ে আসতে হয়েছে। জসিম মানুষ দেখলেই মারধর, গালাগালি ও বাড়িতে ভাঙচুর শুরু করে। এ কারণে তাকে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।’

জসিম উদ্দিনের চাচা আমজাদ আলী বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে জসিম খুবই শান্ত ও মেধাবী ছিল। হঠাৎ করেই সে পাগল হয়ে গেল। তিন বছর আগে তার বাবা মারা গেছে। অভাব-অনটনের সংসার, তাই ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারছে না। চিকিৎসা পেলে সুস্থ হতে পারে জসিম।’

এ বিষয়ে প্রতিবেশী মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও জসিম অনেক ভালো ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা বন্ধ, তাই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। যদি উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেলিম মিঞা জানান, ‘এ বিষয়ে আমার তেমন কিছু জানা নেই। তবে ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সার্বিকভাবে সহায়তা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত