Ajker Patrika

হালুয়াঘাটে বন্য হাতির তাণ্ডবে অতিষ্ঠ জনজীবন

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২২, ১৫: ৪৪
হালুয়াঘাটে বন্য হাতির তাণ্ডবে অতিষ্ঠ জনজীবন

ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী উপজেলা হালুয়াঘাটে বন্য হাতির উৎপাত বেড়েছে। সেপ্টেম্বরে হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। আর ফসলি জমিসহ বসতভিটার ক্ষতিতো আছেই। হাতির তাণ্ডবে জীবন ও সম্পদের ক্ষতির মুখে এলাকাবাসীর উদ্বেগের জবাবে বন বিভাগ বলছে, হাতির আক্রমণ ঠেকাতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। 

স্থানীয়রা বলছে, দুই মাস ধরে প্রায় অর্ধশত বন্য হাতির পাল তাদের ফসলি জমি নষ্ট করছে। এজন্য সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা নির্ঘুম রাত পার করছেন। বন্য প্রাণীর আক্রমণ থেকে জানমাল রক্ষায় বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তারা। 

হালুয়াঘাটের ভূবনকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ সুরুজ মিয়া জানান, ভূবনকুড়া ইউনিয়নের প্রায় ৯ কিলোমিটার সীমান্তঘেঁষা। জিরোপয়েন্ট থেকে ৫০০ গজের মধ্যে কড়ইতলী, বানাইপাড়া, ধোপাজুরী, রঙ্গমপাড়া, মহিষলেটি, কোচপাড়া, আমতৈলী গ্রামের কৃষকেরা দুর্বিষহ জীবন পার করছে। 

আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘২০১২ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত থেমে থেমে হাতির তাণ্ডব চলতো। একবার হাতির পালকে তাড়িয়ে দিলে চলে যেত। কিন্তু এ বছর হাতির পাল বারবার আসছে, তাড়ানোর পরেও যাচ্ছে না। এরা রঙ্গমপাড়া থেকে লক্ষ্মীকুড়া পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে আসা-যাওয়া করছে। ধানসহ সবজির আবাদ পায়ে পিষে মাটিতে মিশিয়ে দিচ্ছে।’

বন বিভাগের তথ্য বলছে, ২০২১ সালের পর হালুয়াঘাট ও শেরপুর জেলার সীমান্তে বিচরণকারী হাতির সংখ্যা এখন ১০০টি। আমন এবং কাঁঠালের মৌসুমে এগুলোর উৎপাত বেড়ে যায়। গত দুই বছরে হাতির আক্রমণে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে; ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ফসলের। ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১০টি হাতির লাশ উদ্ধার মিলেছে। এর মধ্যে দুটি হাতিকে স্থানীয়রা মেরেছে। অন্যগুলো খাদ্যে বিষক্রিয়াসহ নানাভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা গেছে। 

বন্য হাতির তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমিহাতির আক্রমণে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরে ভুক্তভোগী লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা আবুল ফজল বলেন, ‘আমার দুই একর ধানের জমি ছিল। হাতি সব ধ্বংস করে দিয়েছে; বাড়িতেও তাণ্ডব চালিয়েছে। সরকার দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে, আমরা জানে মারা যাব।’ 

রঙ্গমপাড়া গ্রামের কৃষক হোসেন আলী বলেন, ‘হাতির তাণ্ডবে মানুষ মরলে এবং ফসলের ক্ষতি হলেও কৃষক ঠিকমতো ক্ষতিপূরণ পায় না।’ ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি হাতির আক্রমণ বন্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানালেন মহিষলেটি গ্রামের বাসিন্দা নসর আলী।

ভূবনকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুরুজ মিয়াও প্রায় একই সুরে কথা বললেন। তিনি বলেন, ক্ষতিপূরণের বিষয়ে আশ্বস্ত করা হলেও নানা হয়রানির পর অনেকে ছয় মাস এক বছরেও টাকা পায় না।

বন্য হাতির তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমিময়মনসিংহের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা একে এম রুহুল আমিন বলেন, বন্য হাতির উৎপাত ঠেকাতে বন বিভাগের পক্ষ থেকে সৌর শক্তির বিদ্যুৎ দিয়ে উপদ্রুত এলাকায় বেড়া দেওয়া হচ্ছে। এটা বেশ কার্যকর, লো-ভোল্টেজে চলে। মানুষ নষ্ট না করলে বেশি দিন টেকসই হয়। এটার বাইরে কাটা জাতীয় গাছ, লেবুর গাছ ও বেত দিয়ে আরেকটা বেড়া দেওয়া হচ্ছে। 

তিনি জানান, হাতির আক্রমণে কেউ মারা গেলে ৩ লাখ টাকা, আহত হলে ১ লাখ টাকা এবং ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হলে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে সরকার। গত বছর ১৩১ জনকে ২৮ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। এবার ২৪ জনের তালিকা পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত