Ajker Patrika

মৌলভীবাজারের সিলিকা বালু লুট হচ্ছে নির্বিচারে

  • অর্ধশতাধিক ছড়া থেকে রাতের আঁধারে বালু তুলে বিক্রি করা হচ্ছে।
  • ৬টি ছড়ার কোয়ারি ইজারা দেওয়া হয়, যার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
  • ঠেকানোর কোনো পদক্ষেপ নেই। প্রশাসন অনেকটা নীরব।
মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
আপডেট : ১৬ আগস্ট ২০২৫, ১০: ১৪
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের একটি ছড়া (সুনছড়া) থেকে বালু তুলছেন শ্রমিকেরা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের একটি ছড়া (সুনছড়া) থেকে বালু তুলছেন শ্রমিকেরা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে নদী আর ছড়া। এ জেলায় রয়েছে কয়েক শ ছড়া। কিন্তু সিলিকা বালু লুটের কারণে এসব ছড়া শ্রীহীন হয়ে পড়ছে। বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। এখানকার অর্ধশতাধিক ছড়া থেকে রাতের আঁধারে একটি মহল বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে; কিন্তু তা ঠেকানোর দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই। প্রশাসন অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করছে।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এ জেলায় সিলিকা বালুর কোয়ারির তালিকায় রয়েছে ৫২টি ছড়া। এর মধ্যে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর অনুমোদিত ৩৩টি সিলিকা বালু কোয়ারি রয়েছে।

আইনজীবী সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজারের সিলিকা বালুর কোয়ারি ইজারা বন্ধের দাবি নিয়ে পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ২০১৬ সালে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করে। উচ্চ আদালত ৫২টি ছড়ার মধ্যে ১৯টির ইজারায় স্থগিতাদেশ দেন। এই ১৯টি ছড়া থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করলে পরিবেশ মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে বলে সতর্ক করা হয়। পরে এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট (ইআইএ) ও এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান (ইএমপি) প্রাপ্তি সাপেক্ষে ৩৩টি ছড়ায় সিলিকা বালুর কোয়ারি ইজারার অনুমোদন দেওয়া হয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ১৪২৮ ও ১৪২৯ বাংলা সনে ৫০টি ছড়ায় সিলিকা বালুর কোয়ারিতে ইজারা-সংক্রান্ত দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি) অনুমোদিত ৩৩টি ছড়ার সিলিকা বালুর কোয়ারি রয়েছে। এসব ছড়ার মধ্যে মাত্র ছয়টির সিলিকা বালুর কোয়ারি ইজারা দেওয়া হয়, যার মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। মেয়াদ শেষ হলেও জেলার বেশির ভাগ সিলিকা বালুর কোয়ারি থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

জেলার বিভিন্ন উপজেলার ছোট-বড় ছড়ার সিলিকা বালুর কোয়ারি ঘুরে দেখা যায়, ছড়ার তীরে সিলিকা বালুর ছোট-বড় স্তূপ। বেশির ভাগ ছড়ায় রাতে কোদাল ও টুকরি দিয়ে বালু উত্তোলন করা হয়। বেশি বালুর স্তূপ না করে প্রতিদিন বিক্রি করে দেওয়া হয় বলে স্থানীয় অনেকে জানান।

যেখানে লোকসমাগম কম, সে জায়গা থেকেই মূলত বালু উত্তোলন করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলিকা বালু উত্তোলনকারী একজন বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে ছড়ার বালু উত্তোলন করছি। রাতে উত্তোলন করি আমরা। যে বালু উত্তোলন করি, এগুলো বৃষ্টি হলে আবার পরিপূর্ণ হয়ে যায়। উত্তোলন করা বালু কখনো ট্রাক, পিকআপ বা ট্রাক্টরের মাধ্যমে বিক্রি করি।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মৌলভীবাজার জেলা শাখার সভাপতির সালেহ সোহেল বলেন, সরকারকেই সিলিকা বালু রক্ষা করতে হবে। যাঁরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বালু উত্তোলনে জড়িত, তাঁদের আইনের আওতায় আনতে হবে। সময় থাকতে পদক্ষেপ না নিলে পরে ভোলাগঞ্জের মতো পাথর লুট হওয়ার পর মায়াকান্না করে কোনো লাভ হবে না।

মৌলভীবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মাঈদুল ইসলাম বলেন, ‘সিলিকা বালু ইজারার সম্পূর্ণ বিষয় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে দেখা হয়। বিষয়টি আমাদের কাছে নেই। যাঁরা বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন, তাঁরা কার কাছ থেকে বৈধতা নিয়েছেন, সে তথ্যও জানা নেই।’

এ বিষয়ে বেলার সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ সাহেদা আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ইজারা না নিয়ে বালু উত্তোলন করা অবৈধ। এটি ঠেকানোর দায়িত্ব প্রশাসনের। যাঁরা অবৈধ কাজের সুযোগ করে দিচ্ছেন, তাঁরা আদালতের রায়কে অবমাননা করছেন।

এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোসা. শাহীনা আক্তার বলেন, ‘যাঁরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেন, আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা ও মামলা দেই। অনেক সময় অভিযানে গেলে আমাদের উপস্থিত টের পেয়ে সবাই পালিয়ে যান। পরে এসব বালু জব্দ করে নিলামে বিক্রি করা হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশসহ ৫ প্রতিবেশীকেই নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করছে ভারত

পাসপোর্ট ছাড়াই ফ্লাইটে ক্যাপ্টেন মুনতাসির, জেদ্দায় আটক

বিজিবির একজন আর্মি অফিসারকে এখনো গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না: নাহিদ

হইচই ফেলেছে ন্যানো ব্যানানা, চ্যাটজিপিটিকে টপকাল জেমিনি

ভুল করে মায়ের পাসপোর্ট নিয়ে জেদ্দায় যান বিমানের পাইলট মুনতাসির: কর্তৃপক্ষ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত