Ajker Patrika

পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির নামে সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষকদের কাছে চাঁদা দাবি

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১: ৪২
পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির নামে সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষকদের কাছে চাঁদা দাবি

পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (লাল পতাকা) নেতা ও সদস্য পরিচয়ে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় কয়েকজন শিক্ষকের কাছে চাঁদা দাবি করেছে একটি চক্র। এ সময় পরিবারের ক্ষতিসহ তাঁদের প্রাণনাশেরও হুমকি দেওয়া হয়। চাঁদার দাবিতে হুমকি পাওয়া শিক্ষকেরা সবাই সনাতন ধর্মাবলম্বী। এদের মধ্যে দুজন বিকাশের মাধ্যমে চাঁদার টাকা পরিশোধও করেছেন। নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার স্বার্থে বিষয়টি গোপন রেখেছেন তাঁরা। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

ভুক্তভোগীদের দাবি, অপরিচিত কিছু ব্যক্তি নিজেদের উক্ত সংগঠনের সদস্য পরিচয় দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করছে। চাঁদা না দিলে প্রাণনাশ ও পরিবারের সদস্যদের ক্ষতি করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, সংঘবদ্ধ অপরাধীরা ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করে থাকে। তাই ভুক্তভোগীদের যেকোনো প্রকার চাঁদার দাবিকে অগ্রাহ্য করে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

মিরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা জয়শ্রী হালদার বলেন, ‘শনিবার সকাল ১০টা ৩২ মিনিটে একটি নম্বর থেকে ফোন আসে। ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তি নিজেকে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (লাল পতাকা) সদস্য আবীর হোসেন পরিচয় দেন এবং আমার ও পরিবার সম্পর্কে তিনি সবকিছু জানেন বলে জানান। এরপর তাঁর নেতা আট জেলার প্রধানের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। ওই ব্যক্তি চাঁদা দাবি করেন এবং না দিলে পরিবারের ক্ষতি হবে বলে হুমকি দেন।’

একই নম্বর থেকে বেলা সোয়া ১১টার দিকে ফোন আসে স্থানীয় মিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বিভাস কুমার পালের কাছে। তাঁর কাছেও পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি পরিচয়ে চাঁদা দাবি করা হয়। বিভাস কুমার পাল বলেন, ‘পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান পরিচয় দিয়ে ফোন করে চাঁদা দাবি করা হয়। ভয়ে পরিবারের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাদের দেওয়া বিকাশ নম্বরে ১০ হাজার টাকা পাঠায়। টাকা পাঠানোর পরও বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন করে আরও টাকা দাবি করে হুমকি অব্যাহত রেখেছে।’

বিভাস কুমার পাল আরও বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ছাতিয়ান আব্দুর রাফেত বিশ্বাস ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক গোপাল দেবনাথের সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে কথা বলছিলাম। ঠিক তখন তার কাছেও ফোন আসে। নম্বরটি একই হওয়ায় তিনি আর ফোন ধরেননি। এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাগরখালী আদর্শ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক উত্তম দেবনাথের কাছেও চাঁদা দাবি করা হয়। তিনিও নিরাপত্তার কথা ভেবে রাত ৮টার দিকে তাদের দেওয়া বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠিয়েছেন। মনে হচ্ছে আমরা কোন প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়েছি। থানায় এ ব্যাপারে এখনো কোন অভিযোগ দিইনি। তবে সবার সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।’

জানতে চাইলে কুষ্টিয়া জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী জয়দেব বিশ্বাস বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানার সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনকে জানিয়েছি। আশপাশের একটি সংঘবদ্ধ চক্র পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির পরিচয় ব্যবহার করে এই চাঁদাবাজি করছে।’

মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোমিনুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে চাঁদার দাবিকে অগ্রাহ্য করে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ জানানোর অনুরোধ জানিয়েছেন ওসি। র‍্যাব-১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সুদীপ্ত সরকার বলেন, ‘ব্যাপারটি মৌখিকভাবে জেনেছি। যেসব নম্বর থেকে ফোন দেওয়া হয়েছে, তার লোকেশন মাদারীপুর জেলা দেখাচ্ছে। সংঘবদ্ধ অপরাধীরা ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করে থাকে। তাই ভুক্তভোগীদের আরও সচেতন হতে হবে। বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে র‍্যাব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত