Ajker Patrika

চুন্নু ও তৌফিকের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতার দুই ছেলেকে চাঁদাবাজি মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
চুন্নু ও তৌফিকের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতার দুই ছেলেকে চাঁদাবাজি মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ

অংশীদারীর ভিত্তিতে যাত্রীবাহী ট্রলার ব্যবসার মালিকানা পুনরুদ্ধার ও পাওনা টাকা ফেরৎ চাওয়ায় দুই ছেলেকে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ করেছেন কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনের বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য কবির উদ্দিন আহমেদ। 

আজ শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) বেলা ১১টায় জেলা শহরের হোটেল শেরাটনের কনফারেন্স রুমে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এর প্রতিকার দাবি করেন। এই প্রবীণ নেতা মহান মুক্তিযুদ্ধে কিশোরগঞ্জের কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন ও জেলাকে পাক-হানাহার মুক্ত করতে নেতৃত্ব দেন। 

তিনি লিখিত বক্তৃতায় এই বীর মুক্তিযোদ্ধা জানান, তাঁর দুই ছেলে মোসাব্বির হোসেন সাদ্দাম ও তাওসিফ কবির সায়েমের ইঞ্জিনচালিত ৮টি যাত্রীবাহী ট্রলারের শতকরা ৫০ ভাগ মালিকানা রয়েছে। অংশীদারদের মাধ্যমে করিমগঞ্জ উপজেলার চামড়া বন্দর থেকে ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি রুটে এসব ইঞ্জিনচালিত ট্রলার যাত্রী পরিবহন করে। অংশীদার হিসেবে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এসব ট্রলারের লভ্যাংশের টাকা ঠিকভাবে পেয়ে আসছিলেন সাদ্দাম ও সায়েম। এরপরই শুরু হয় রাজনৈতিক খেলা। 

কবির উদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করেন, কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনের তৎকালীন এমপি জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ও সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের বড় ছেলে পাশের কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের তৎকালীন এমপি রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের প্রভাব ও নির্দেশে অন্য অংশীদাররা সাদ্দাম ও সায়েমকে মালিকানার অংশ বিক্রি করে দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। তাতে রাজি না হওয়ায় ২০১৬ সালে সাদ্দাম ও সায়েমকে দৈনিক লভ্যাংশের টাকা দেয়া বন্ধ করে দেয় অন্য অংশীদাররা। 

গত ৮ বছর এসব ট্রলারের মালিকানা কিংবা দৈনিক লভ্যাংশ কিছুই আর পাননি সাদ্দাম ও সায়েম। এরই মধ্যে একটি ট্রলারের রং ও নামও পরিবর্তন করা হয়। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ট্রলারগুলোর মালিকানা ও লভ্যাংশের পাওনা টাকা উদ্ধারের জন্য উদ্যোগী হন তাঁরা। এর অংশ হিসেবে গত ১৯ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নম্বর-৬ এ তাওসিফ কবির সায়েম বাদী হয়ে একটি ট্রলারের রং ও নাম পরিবর্তন করে মালিক বনে যাওয়া কৃষক লীগ নেতা আইজু রহমান আইজু এবং তাঁর দুই ছেলে মোশারফ ও মহসিনকে বিবাদী করে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে করিমগঞ্জ থানার ওসিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। 

এমন পরিস্থিতিতে পাওনা টাকা ফেরৎ না দেওয়ার উদ্দেশ্য থেকে বিএনপির ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা মুজিবুল হক চুন্নু ও আওয়ামী দালালদের মদদে অংশীদারদের পক্ষ থেকে নূরুজ্জামান বাদী হয়ে সাদ্দাম ও সায়েমের বিরুদ্ধে করিমগঞ্জ থানায় চাঁদা দাবির মিথ্যা অভিযোগ দেন। এ প্রেক্ষিতে গত ১৩ই অক্টোবর নিয়ামতপুর বাজারের ব্যবসায়িক চেম্বার থেকে সাদ্দামকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি দল আটক করে নিয়ে যায়। পরদিন ১৪ই অক্টোবর করিমগঞ্জ থানায় সাদ্দাম ও সায়েমের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাত ১৫-২০ জনকে আসামি করে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় সাদ্দাম বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। 

সংবাদ সম্মেলনে সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা কবির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমার বড় ছেলে সাইফুল ইসলাম সুমন করিমগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, জেলা যুবদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক, গুরুদয়াল সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি এবং জেলা বিএনপির যুব বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় তাঁর জনপ্রিয়তায় একটি মহল ঈর্ষান্বিত। জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর দ্বারা আমার ছেলেরাসহ আমি রাজনৈতিকভাবে বিগত সময়ে হামলা-মামলা ও জেল-জুলুমের শিকার হয়েছি। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের পরিবারের রাজনৈতিক সুনাম বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে চুন্নুর মদদপুষ্ট বিএনপির কতিপয় নেতা-কর্মীর প্ররোচণায় আমার দুই ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা এই চাঁদাবাজি মামলা দায়েরের মাধ্যমে গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হচ্ছে। নিরপেক্ষভাবে যাচাই করে প্রকৃত সত্য উদঘাটনের মাধ্যমে আমি এর সুবিচার প্রার্থনা করছি।’ 

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান ভূঞা, করিমগঞ্জের বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আলম এবং কবির উদ্দিন আহমেদের ছোট ছেলে প্রকৌশলী শাকিল আহমেদ নাদভী উপস্থিত ছিলেন। 

এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মামলার বাদী নুরুজ্জামানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। 

অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সাবেক এমপি রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের মোবাইল ফোনে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। 

অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে জাপা মহাসচিব ও কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনের সাবেক এমপি মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আমি এসব বিষয়ে কিছুই জানি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মুন্সিগঞ্জে তরুণকে গুলি করে হত্যা, বিএনপির দুই গ্রুপে উত্তেজনা

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ৩৫
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

মুন্সিগঞ্জের মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের বেহেরকান্দি গ্রামে প্রতিপক্ষের গুলিতে তুহিন দেওয়ান (২২) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। রোববার রাত ১০টার দিকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত তুহিন দেওয়ান মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের দক্ষিণ বেহেরকান্দি এলাকার ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি সেলিম দেওয়ানের ছেলে।মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির বিবদমান দুই গ্রুপের পূর্ববিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে।

এ ঘটনার পর থেকে মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের বেহেরকান্দি ও মুন্সিকান্দি গ্রামের বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। এতে স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিহত তুহিন মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ওয়াহিদ মোল্লা ও বিএনপি নেতা আতিক মল্লিকের অনুসারী।

নিহতের চাচাতো ভাই আকাশ দেওয়ান জানান, রোববার রাতে তুহিন হাঁটার জন্য বাসা থেকে বের হয়। এ সময় মুন্সিকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির নেতা ওজির আলী ও আওলাদ গ্রুপের অনুসারী লিটন ব্যাপারীর নেতৃত্বে পেছন থেকে তুহিনকে লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় ও গুলি করে। এ সময় তুহিন গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। স্থানীয় রাজনৈতিক আধিপত্য নিয়ে তাদের মধ্যে পূর্বের বিরোধ ছিল বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক প্রান্ত সর্দার জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর পিঠে ও ঘাড়ে একাধিক গুলির চিহ্ন রয়েছে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবির জানান, কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তদন্ত করলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাজশাহীতে মৌসুমের প্রথম কুয়াশা: তাপমাত্রা কমে ২০-এর নিচে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
শিশিরভেজা ঘাসে খেলায় মত্ত শিশুরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিশিরভেজা ঘাসে খেলায় মত্ত শিশুরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহীতে নেমে এসেছে এ বছরের প্রথম কুয়াশা। সোমবার (৩ নভেম্বর) ভোর থেকেই রাজশাহী শহর ও আশপাশের উপজেলার গ্রামগুলোর চারপাশ মোড়ানো ছিল ঘন কুয়াশার চাদরে। এই কুয়াশাময় সকাল যেন জানিয়ে দিয়েছে, আসছে শীত, আসছে স্নিগ্ধতার মৌসুম।

শীতের এমন আগমনী ছোঁয়ায় বদলে গেছে প্রকৃতির রূপ। কুয়াশাঢাকা সকাল জানিয়ে দিচ্ছে, শীত আর বেশি দূরে নয়। এদিন ভোরের আলো ফুটলেও মহাসড়কে যানবাহনগুলোকে চলতে দেখা যায় হেডলাইট জ্বালিয়ে। কুয়াশা ভেদ করে গন্তব্যের পথে ছুটে যায় মানুষ।

এদিকে গ্রামের মাঠে শিশিরভেজা ঘাসে খেলায় মত্ত শিশুরা যেন প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে ওঠে। মাকড়সার জালে ঝুলে থাকা শিশিরবিন্দু আর ধূসর আকাশে সূর্যের মিটিমিটি আলো মিলেমিশে সৃষ্টি করে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।

মাকড়সার জালে ঝুলে থাকা শিশিরবিন্দু আর ধূসর আকাশে সূর্যের মিটিমিটি আলো। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাকড়সার জালে ঝুলে থাকা শিশিরবিন্দু আর ধূসর আকাশে সূর্যের মিটিমিটি আলো। ছবি: আজকের পত্রিকা

শহরের রেলগেট এলাকায় কাজের সন্ধানে আসা শ্রমিক আবদুল জব্বার বলেন, ‘আজকের সকালেই এবার প্রথমবার শীত টের পেলাম। এখন থেকে হয়তো শীত বাড়বে।’

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন জানান, সোমবার ভোরে রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন রোববার ভোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ২৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এখন থেকে তাপমাত্রা কমবে বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২ বছরেই ফাটল বিদ্যালয়ের ২ কোটি টাকার ভবনে, নিম্নমানের কাজের অভিযোগ

চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) সংবাদদাতা
চিরিরবন্দরের বানিয়াখাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন বিল্ডিংয়ের বারান্দা, মেঝে ও দেয়ালে ফাটল। ছবি: আজকের পত্রিকা
চিরিরবন্দরের বানিয়াখাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন বিল্ডিংয়ের বারান্দা, মেঝে ও দেয়ালে ফাটল। ছবি: আজকের পত্রিকা

দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের বানিয়াখাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনে ক্লাস চালুর দুই বছর পার হতে না হতেই ফাটল দেখা দিয়েছে। প্রায় দুই কোটি দুই লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ভবনের বারান্দা, সিঁড়ি, মেঝে ও দেয়ালে ফাটল ধরায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন অভিভাবকেরা।

চিরিরবন্দর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র জানায়, উপজেলার ভিয়াইল ইউনিয়নের বানিয়াখাড়ী সরকারি বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণে ২০২১-২২ অর্থবছরে দুই কোটি দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়।

নিম্নমানের কাজের অভিযোগ এনে স্থানীয় অভিভাবক মোস্তাফিজুর রহমান এবং বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় দুই বছরের মধ্যেই বিল্ডিংয়ের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। নির্মাণকাজের সময় আমরা মৌখিকভাবে ইঞ্জিনিয়ারকে অভিযোগ করেছিলাম, কিন্তু তিনি আমাদের কথায় কোনো গুরুত্ব দেননি।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুফিয়া খাতুন বলেন, ‘নতুন ভবনে ক্লাস চালুর দুই বছর ঘুরতে না ঘুরতেই নিচতলার সিঁড়ির বারান্দায় বড় ফাটল ধরেছে। এ ছাড়া শ্রেণিকক্ষের মেঝে ও পিলারের সঙ্গে দেয়ালেও ফাটল দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানোর পর তিনি এসে ছবি তুলে নিয়ে গেছেন।’

চিরিরবন্দরের বানিয়াখাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন বিল্ডিংয়ের বারান্দা, মেঝে ও দেয়ালে ফাটল। ছবি: আজকের পত্রিকা
চিরিরবন্দরের বানিয়াখাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন বিল্ডিংয়ের বারান্দা, মেঝে ও দেয়ালে ফাটল। ছবি: আজকের পত্রিকা

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মিনারা খাতুন বলেন, ‘নতুন বিল্ডিংয়ের দুই বছর এখনো হয়নি, তাতেই মেঝেসহ অনেক জায়গায় ফাটল ধরেছে। আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি এবং তারা দ্রুত মেরামত করার জন্য আশ্বাস দিয়েছে।’

এ বিষয়ে ঠিকাদার আবেদ আলী মাস্টার বলেন, ‘বিল্ডিং হস্তান্তর করার প্রায় দুই বছর হয়েছে। মেঝেতে শুধু পলেস্তারায় “চিড়” ধরেছে, তেমন কোনো সমস্যা নেই। আমি আমার ম্যানেজারকে পাঠিয়ে দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করব।’

এলজিইডির চিরিরবন্দর উপজেলা প্রকৌশলী মাসুদার রহমান একই সুরে বলেন, ‘বিল্ডিংয়ের মেঝে ও সিঁড়ির কিছু অংশে কেবল পলেস্তারার ওপরে ফাটল বা চিড় ধরেছে। আমি ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত মেরামতের জন্য বলব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নেত্রকোনার সীমান্ত গ্রাম ভবানীপুর: পাকা রাস্তা-সেতুর অভাবে চরম দুর্ভোগ

দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি 
ঝুঁকিপূর্ণ কাঠ-বাঁশের সাঁকোই ভবানীপুরের বাসিন্দাদের ভরসা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঝুঁকিপূর্ণ কাঠ-বাঁশের সাঁকোই ভবানীপুরের বাসিন্দাদের ভরসা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় ভারত সীমান্তঘেঁষা গ্রাম ভবানীপুর। স্বাধীনতার অর্ধশতক পেরিয়ে আজও এই জনপদ পিছিয়ে আছে অন্ধকারে। এখানকার কয়েক হাজার মানুষের জীবন যেন দুর্গম যাতায়াতে আটকা—নেই কোনো পাকা সড়ক, নেই স্থায়ী সেতু। ভাঙা মাটির রাস্তা আর ঝুঁকিপূর্ণ কাঠ-বাঁশের সাঁকোই তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। দুই চাকার বাইসাইকেল বা মোটরসাইকেল ছাড়া এই গ্রামে অন্য কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে পারে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী আনা থেকে শুরু করে গর্ভবতী নারী বা রোগীকে জরুরি মুহূর্তে হাসপাতালে নিতেও চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়।

গ্রামের একমাত্র সেতুটি ২০১৪ সালের দিকে ভেঙে যাওয়ার পর কাঠ-বাঁশের সেতুই এখন একমাত্র ভরসা। উন্নয়ন যেন এখানকার মানুষের কাছে সোনার হরিণ। কবে মিলবে স্থায়ী সেতু ও পাকা রাস্তা জানেন না কেউই।

স্থানীয় বাসিন্দা সজীব মিয়া বলেন, ‘যুগের পর যুগ কেটে গেলেও আমরা উন্নয়নবঞ্চিত। স্বাধীনতার পর থেকে এ গ্রামে কোনো দিন পাকা রাস্তা বা স্থায়ী সেতু হয়নি। গ্রামের দুটি সেতুর মধ্যে একটি কাঠ-বাঁশের আর অন্যটি পাকা হলেও সেটিও সড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে। নিজেদের স্বেচ্ছাশ্রমেই পথ মেরামত করে যাতায়াত করছি।’

দুই চাকার বাইসাইকেল বা মোটরসাইকেল ছাড়া এই গ্রামে অন্য কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে পারে না। ছবি: আজকের পত্রিকা
দুই চাকার বাইসাইকেল বা মোটরসাইকেল ছাড়া এই গ্রামে অন্য কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে পারে না। ছবি: আজকের পত্রিকা

আরেক বাসিন্দা সামছু মিয়া জানান, গর্ভবতী নারী বা রোগীকে জরুরি মুহূর্তে হাসপাতালে নিতে নদীপথই ভরসা। কৃষিজাত পণ্যও বাজারে নেওয়া কষ্টসাধ্য।

স্কুলশিক্ষার্থী মুর্শিদা আক্তার বলে, ‘প্রতিদিন কাঁচা রাস্তায় কয়েক কিলোমিটার হাঁটতে হয় স্কুলে যেতে। বর্ষায় কাদা-জলে ভিজে স্কুলে পৌঁছানোই দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। ফলে পড়ালেখায় মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায়। আমাদের দাবি পাকা রাস্তা ও সেতু নির্মাণ করা হোক।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা আফসানা বলেন, ‘গ্রামটি দেখেছি। মানুষ সত্যিই কষ্টে আছে। ভবানীপুরের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হবে। শিগগিরই যাতে গ্রামের মানুষ যাতায়াত সুবিধা ভোগ করতে পারে, সে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত