Ajker Patrika

শোলাকিয়ায় ১৯৮তম ঈদুল ফিতরের জামাত, অংশ নিলেন দেশ-বিদেশের ৬ লাখ মুসল্লি

সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ 
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঘড়ির কাঁটায় সকাল ৭টা বেজে ১০ মিনিট। কিশোরগঞ্জের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের প্রথম সারিতে দেখা হয় পাকিস্তান আমল থেকে ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলা থেকে ঈদের নামাজ আদায় করতে আসা মো. সুরুজ আলী (৮৫) ও নুরুল ইসলামের (৭০) সঙ্গে। এবারই প্রথম তাঁদের সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করতে এসেছেন দুলাল (৫৫)।

সুরুজ আলী ও নুরুল ইসলাম জানালেন, পাকিস্তান আমল থেকে শোলাকিয়া ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করতে আসেন আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায়। সেই যে পাকিস্তান আমল থেকে শুরু, আজ অবধি প্রতি ঈদেই তাঁরা এখানে নামাজ আদায় করতে আসেন।

পরক্ষণেই দেখা হয় মাওলানা মো. ইব্রাহিমের (৪০) সঙ্গে। তিনি বাগেরহাট থেকে মোটরসাইকেল চালিয়ে কিশোরগঞ্জ চলে এসেছেন। কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, এশিয়ার সবচেয়ে বড় ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ করতে এসেছি।

আজ সোমবার পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকেও কিশোরগঞ্জের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। এ সময় কথা হয় চট্টগ্রামের বাঁশখালী থেকে আসা মো. মফিজুর রহমান চৌধুরীর (৫০) সঙ্গে। তিনি মোজাম্বিকপ্রবাসী। মফিজুর রহমান বলেন, ‘এশিয়ার বৃহত্তম ঈদগাহ মাঠে এলাম ঈদের নামাজ পড়ার জন্য। আলহামদুলিল্লাহ, বিশাল আয়োজন দেখে অনেক ভালো লাগছে। এখানকার পরিবেশ অনেক সুন্দর। জীবনে প্রথমবার এলাম। আমি মোজাম্বিকে থাকি প্রায় ১৮ বছর। সেখানেই আমার পরিবার থাকে। মোজাম্বিকে এখন পরিস্থিতি ভালো না। সবার কাছে দোয়া চাইছি, যেন মোজাম্বিকের পরিস্থিতি ভালো হয়। এ ছাড়া আমার মতো যাঁরা প্রবাসে আছেন, তাঁরা যেন নিরাপদে থাকতে পারেন, সেই দোয়া চাই।’

ঈদের নামাজ আদায় করতে কক্সবাজার দক্ষিণ রোমালিয়াছড়ার আমিনুল ইসলাম (৪৭) এসেছেন তাঁর বিয়াই রফিকুল ইসলামকে (৪৩) সঙ্গে নিয়ে। তিনি বলেন, ‘গত এক বছর যাবৎ পরিকল্পনা করছি শোলাকিয়ায় এসে ঈদের নামাজ আদায় করব। জামাতটি অনেক বড় হয়। বড় জামাতে নামাজ পড়ার জন্য এক বছর ধরে পরিকল্পনা করছিলাম। খুব কষ্ট করে এসেছি। চার-পাঁচটা গাড়ি বদলে এসেছি। আল্লাহ যেন আমার নামাজ কবুল করেন।’

সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কথা হয় কুমিল্লা থেকে আসা মো. মীর হোসেনের (৬৩) সঙ্গে। তিনি এর আগে আরও দুবার শোলাকিয়া ঈদগাহে এসে নামাজ আদায় করেছেন। মীর হোসেন বলেন, ‘এক মাস সিয়াম সাধনার পর আমি এখানে এসেছি।’

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আকাশ থেকে মেঘ সরে গিয়ে প্রখর রোদ ওঠে। সকাল ১০টায় রোদের মধ্যেও দেশের ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহ কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ১৯৮তম পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এবারের ঈদের জামাতে মাঠে দুই লক্ষাধিক মানুষ অংশ নেন। এ ছাড়া আশপাশের দুই কিলোমিটারের মধ্যে সব মিলিয়ে ছয় লাখের বেশি মানুষ নামাজে অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

নামাজ পড়তে আসা দেশ-বিদেশের কয়েক লাখ মুসল্লির ভিড়ে জনসমুদ্রে পরিণত হয় শোলাকিয়া ময়দান। আগত মুসল্লিদের অনেকে মাঠে জায়গা না পেয়ে পার্শ্ববর্তী রাস্তা, বাড়ির ছাদ, নদীর পাড় ও শোলাকিয়া সেতুতে জায়গা করে নিয়ে জামাতের জন্য দাঁড়িয়ে পড়েন।

নিরাপত্তার স্বার্থে সকাল ৭টার আগে মুসল্লিদের ঈদগাহে প্রবেশ করতে দেয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সকাল ৭টার দিকে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে প্রত্যেক মুসল্লিকে তল্লাশি করে ঈদগাহে ঢুকতে দেয়। সকাল সাড়ে ৮টার দিকেই ৭ একর আয়তনের শোলাকিয়া মাঠ পূর্ণ হয়ে যায়।

সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত জামাতের ইমামতি করেন মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ। শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২০০৯ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহের মুতাওয়াল্লি নিযুক্ত স্থায়ী ইমামকে বাদ দিয়ে ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। দীর্ঘ ১৫ বছর পর ২০০৯ সালে বাদ দেওয়া কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদ জামাতের ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহকে পুনর্বহাল করা হয়।

কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

১৭৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ঈদগাহের ঐতিহ্য অনুসারে মুসল্লিদের প্রস্তুতির জন্য জামাত শুরুর ৫ মিনিট আগে তিনটি শটগানের গুলি ছোড়া হয়। প্রতিবারের মতো এবারও শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাতে অংশ নিতে দূর-দূরান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষ ছুটে আসেন। দেশের সর্ববৃহৎ এই জামাতে অংশ নিতে সকাল থেকে মুসল্লিদের ঢল নামে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত শোলাকিয়া ঈদগাহের মাঠে।  

জামাত শুরুর আগে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত দেশ-বিদেশ থেকে আগত মুসল্লিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। গত এক মাস আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ত্যাগের জন্য কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। দেশবাসীর জন্য দোয়া করার আহ্বান জানানো হয়। সমাগত মুসল্লিদের উদ্দেশে শান্তিপূর্ণ ঈদ জামাত আয়োজনে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান। সেই সঙ্গে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান।

জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল বলেন, ‘শেখ হাসিনার আমলে এই ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের কোনো উন্নয়ন হয়নি। তারা লুটপাট নিয়ে ব্যস্ত ছিল। ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের দিকে তারা তাকিয়েও দেখেনি। বিএনপি সরকার গঠন করলে এই শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠকে আধুনিকায়ন করা হবে। দেশ-বিদেশ থেকে আগত মুসল্লিরা যেন মাঠ দেখে বুঝতে পারেন এটি ঐতিহাসিক মাঠ।’

কিশোরগঞ্জ জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক মো. রমজান আলী বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের ইমামকেও পরিবর্তন করা হয়েছিল। যাকে (ফরিদ উদ্দিন মাসুদ) এই ঐতিহাসিক ঈদগাহ ময়দানে ইমামতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তিনি একজন বিতর্কিত আলেম। এ কারণে অনেক মুসল্লি শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে অংশ নিতেন না। ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশে এবার সর্বোচ্চ মুসল্লি শোলাকিয়ার ঈদ জামাতে অংশ নিচ্ছেন।’

কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিশোরগঞ্জের সদস্যসচিব ফয়সাল প্রিন্স বলেন, ‘শোলাকিয়া ঈদগাহ আমাদের ঐতিহ্যের প্রতীক। এই মাঠকেও ফ্যাসিস্ট হাসিনার লোকেরা ছাড়েনি। মাঠের ইমাম পর্যন্ত তারা পরিবর্তন করে ফেলে। এবার মাঠে রেকর্ড পরিমাণ লোক ঈদের নামাজ আদায় করতে এসেছেন। সবাই নির্ভয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। কিশোরগঞ্জবাসীসহ দেশবাসীকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিশোরগঞ্জের পক্ষ থেকে ঈদের শুভেচ্ছাও জানাই।’

কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত বলেন, ‘আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, লাখ লাখ মুসল্লি ঈদের জামাতে অংশ নিতে এসেছেন। তাঁদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পর্যাপ্তসংখ্যক সেনাবাহিনীর সদস্য, র‍্যাব সদস্য ও পাঁচ প্লাটুন বিজিবি সদস্য এবং এপিবিএন মোতায়েন ছিল। এ ছাড়া আনসার সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন। ছিল ফায়ার সার্ভিসেরও বেশ কয়েকটি ইউনিট। দায়িত্ব পালন করেছেন ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। গোয়েন্দা নজরদারি ছিল। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ঈদের জামাত আদায় করেছি।’

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, ‘ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে মুসল্লিদের জন্য পাঁচ স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। মুসল্লিদের নিরাপত্তায় ছিলেন ১ হাজার ১০০ পুলিশ সদস্য। এর মধ্যে পোশাকে, সাদা পোশাকে ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় অফিসার ফোর্স মোতায়েন ছিলেন। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সম্মানিত মুসল্লিরা ঈদের জামাতে অংশ নেন।’

এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মুকিত সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. মাহমুদুল ইসলাম তালুদকদার, র‍্যাব-১৪ সিপিসি-২ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার মো. আশরাফুল কবির, শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. এরশাদ মিয়া ও কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে গোপালগঞ্জ

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জিয়াউর রহমানের পাশে খালেদা জিয়ার দাফন সম্পন্ন

দুই উপদেষ্টার ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়েও দেশে আসতে পারেননি সাকিব

ভারতে চলন্ত গাড়িতে ২ ঘণ্টা দলবদ্ধ ধর্ষণের পর ছুড়ে ফেলা হলো রাস্তায়

এরশাদের ১২৬টি আসনের টোপ প্রত্যাখ্যান করে সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন খালেদা জিয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘আমি সই না করলে ইউএনও সই করবে না’—এলজিইডি প্রকৌশলীর ভিডিও ভাইরাল

ফরিদপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৩
প্রকৌশলী আব্দুল খালেক । ছবি: সংগৃহীত
প্রকৌশলী আব্দুল খালেক । ছবি: সংগৃহীত

‘আমি সই না করলে ইউএনও (ফাইলে) সই করবে না’—ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) প্রকৌশলী আব্দুল খালেকের কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে চাহিদামতো ঘুষের টাকা না পেয়ে ওই প্রকৌশলীকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির (ঠিকাদার প্রতিনিধি) সঙ্গে এমন কথা বলতে শোনা গেছে।

৩১ সেকেন্ডের ভিডিওটি গোপনে তাঁর কার্যালয় থেকে ধারণ করা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিডিওটি প্রথম পোস্ট করা হয় স্থানীয় সাংবাদিক নিজাম নকিবের ‘নগদ খবর’ নামের ফেসবুক আইডি থেকে।

জানতে চাইলে নিজাম নকিব জানান, আজ বুধবার এক ব্যক্তি তাঁকে ভিডিওটি পাঠিয়েছেন এবং এটি আজকে ধারণ করা বলে জানান তিনি। তবে ওই ব্যক্তি নিজের নাম ইমতিয়াজ আসিফ বললেও অন্য পরিচয় গোপন রাখেন।

ভিডিওতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির (ঠিকাদার প্রতিনিধি) সঙ্গে কথা বলার আগে কাজের বিলের ফাইল স্বাক্ষর করার সময় ৪৫ হাজার টাকা নেওয়ার বিষয়টিও উঠে আসে। এ ছাড়া নতুন করে আরও পাঁচ হাজার টাকা না দেওয়ায় গড়িমসি করতে থাকেন ওই প্রকৌশলী। একপর্যায়ে তাঁকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিয়ে পকেটে রাখতে দেখা যায়।

নগরকান্দা এলজিইডি প্রকৌশলী। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
নগরকান্দা এলজিইডি প্রকৌশলী। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

এ সময় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘স্যার, রাখেন এইটা স্যার, বিলের ফাইল ছাড়ার সময় ৪৫ হাজার টাকা নিলেনই আপনি আমার কাছ থেকে। রাখেন স্যার, তিন হাজার টাকা রাখেন, পাঁচ হাজার টাকা নাই।’

পরে প্রকৌশলী আব্দুল খালেক বলেন, ‘আমি সই করব, তারপর ইউএনও সই করবে। আমি সই না করলে ইউএনও (ফাইলে) সই করবে না।’

ভিডিওটির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকৌশলী আব্দুল খালেক মোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এক বদমাশ ভিডিওটি করেছে। আমি তাকে চিনিও না, জানিও না। আন্দাজে কী কয় কী হয়, যা পারে করুক। এগুলো নিয়ে এখন আর কিছু বলার নেই।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহরাজ শারবীন বলেন, ‘ভিডিওটি পূর্বের, আমি দেখেছি। এ ছাড়া আমি নতুন এসেছি। এসব বিষয়ে তাদের ডিপার্টমেন্ট (এলজিইডি) থেকে লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে গোপালগঞ্জ

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জিয়াউর রহমানের পাশে খালেদা জিয়ার দাফন সম্পন্ন

দুই উপদেষ্টার ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়েও দেশে আসতে পারেননি সাকিব

ভারতে চলন্ত গাড়িতে ২ ঘণ্টা দলবদ্ধ ধর্ষণের পর ছুড়ে ফেলা হলো রাস্তায়

এরশাদের ১২৬টি আসনের টোপ প্রত্যাখ্যান করে সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন খালেদা জিয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আনোয়ারায় সড়কের পাশ থেকে উদ্ধার দুই শিশুর পরিচয় মিলেছে, বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে মামলা

কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি 
আনোয়ারায় দুই শিশুকে উদ্ধার করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আনোয়ারায় দুই শিশুকে উদ্ধার করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কনকনে শীতের মধ্যে সড়কের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া দুই শিশুর পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। তাদের বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলায়। আজ বুধবার দুপুরে খোরশেদ আলম নামের এক ব্যক্তি নিজেকে ওই শিশুদের বাবা দাবি করে আনোয়ারার ইউএনও ও থানার ওসির সঙ্গে দেখা করেন। এ ছাড়া আদালতের নির্দেশে দুই শিশুর বাবা ও মায়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছে প্রশাসন।

এর আগে গত রোববার সন্ধ্যায় আনোয়ারা উপজেলার বারখাইন ইউনিয়নের মাজারগেট এলাকা থেকে আয়শা (৪) ও মোরশেদ (২) নামের শিশু দুটিকে উদ্ধার করে নিজের হেফাজতে রাখেন সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মহিম উদ্দিন। গত সোমবার সারা দিন আনোয়ারা থানা ও উপজেলা প্রশাসন ওই শিশুদের পরিবার ও অভিভাবকদের তথ্য পেতে চেষ্টা করে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ওই দুই শিশুকে নিয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের কাছে যান আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার। জেলা প্রশাসক তাদের চিকিৎসা ও যাবতীয় খরচের দায়িত্ব নেন। পরে দুই শিশুর মধ্যে আয়শাকে সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের জিম্মায় তুলে দেওয়া হয়। গুরুতর অসুস্থ মোরশেদকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আজ দুপুরে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিশুদের বাবা খোরশেদ। বর্তমানে তিনি পুলিশের হেফাজতে আছেন বলে নিশ্চিত করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুনায়েদ চৌধুরী।

পুলিশের হেফাজতে থাকা খোরশেদ আলমের বরাতে পুলিশ জানায়, খোরশেদ পেশায় একজন অটোরিকশাচালক। পাশাপাশি বাঁশখালীর একটি ভাঙারির দোকানেও কাজ করেন। খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার মহামনি এলাকায় তাঁর বাড়ি। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাঁশখালীর মিয়ার বাজার লস্করপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। তাঁর স্ত্রীর বাড়ি সাতকানিয়া। ৫-৬ মাস আগে তাঁর স্ত্রী দুই সন্তানকে নিয়ে ঘর থেকে পালিয়ে যান। স্ত্রী তাঁর ছোট প্রতিবন্ধী শিশুটিকে দিয়ে ভিক্ষা করাতেন। এটা নিয়েও স্বামী-স্ত্রীর একাধিকবার ঝগড়া হয়েছিল।

এদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে শিশু দুটিকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি আমলে নিয়ে আজ চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাখাওয়াত হোসেন আনোয়ারা থানাকে মামলা নেওয়ার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আনোয়ারা থানার শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা শিশু আইন-২০১৩-এর বিধান অনুযায়ী কী ব্যবস্থা নিয়েছেন, সে সম্পর্কে ৫ জানুয়ারির মধ্যে লিখিত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

আদালতের আদেশ পাওয়ার কথা স্বীকার করে আনোয়ারা থানার ওসি মো. জুনায়েত চৌধুরী বলেন, ‘আমরা শিশুদের বাবার খোঁজ পেয়েছি। বিস্তারিত জানার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘আদালত জানতে চেয়েছেন শিশুদের ব্যাপারে আমরা কী কী পদক্ষেপ নিয়েছি।’

ইউএনও তাহমিনা আক্তার বলেন, সড়কের পাশে পাওয়া দুই শিশুর দায়িত্ব নিয়েছেন জেলা প্রশাসক। তাদের একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং বড় শিশুকে আশ্রয়দানকারী মহিম উদ্দিনের হেফাজতে রাখা হয়। তিনি বলেন, আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মামলা নেওয়ার নির্দেশ দেন এবং প্রশাসন স্বামী-স্ত্রী দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে গোপালগঞ্জ

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জিয়াউর রহমানের পাশে খালেদা জিয়ার দাফন সম্পন্ন

দুই উপদেষ্টার ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়েও দেশে আসতে পারেননি সাকিব

ভারতে চলন্ত গাড়িতে ২ ঘণ্টা দলবদ্ধ ধর্ষণের পর ছুড়ে ফেলা হলো রাস্তায়

এরশাদের ১২৬টি আসনের টোপ প্রত্যাখ্যান করে সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন খালেদা জিয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জামায়াত প্রার্থী মাসুদের বাড়ি নেই, পেশা ব্যবসা ও পরামর্শক

পটুয়াখালী প্রতিনিধি
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। ছবি: সংগৃহীত
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। ছবি: সংগৃহীত

পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের প্রার্থী ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি জেনারেল ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের কোনো বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট নেই। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী ও পরামর্শক। বছরে আয় ১০ লাখ ১২ হাজার ৮৩০ টাকা।

নির্বাচনী হলফনামা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

হলফনামা অনুযায়ী, ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের মোট সম্পদের পরিমাণ ৪৪ লাখ ৭৭ হাজার ৯৬৪ টাকা। তাঁর বার্ষিক আয় ১০ লাখ ১২ হাজার ৮৩০ টাকা। এর বিপরীতে তিনি ৪৫ হাজার ৪২৫ টাকা আয়কর পরিশোধ করেছেন।

হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁর হাতে নগদ রয়েছে ৪৩ হাজার ২৫০ টাকা। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডে তাঁর জমা রয়েছে ১৬ লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ টাকা। পেশা হিসেবে তিনি নিজেকে পরামর্শক উল্লেখ করেছেন।

এ ছাড়া বন্ড, ঋণপত্র এবং শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাঁর ৩ লাখ ৫ হাজার টাকার শেয়ার রয়েছে।

হলফনামায় আরও বলা হয়েছে, ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের নামে কোনো জমি, বাড়ি কিংবা অ্যাপার্টমেন্ট নেই। তবে তাঁর পরিবারের মোট ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

তাঁর স্ত্রী পেশায় একজন চিকিৎসক। সর্বশেষ আয়কর বিবরণী অনুযায়ী, তাঁর স্ত্রীর বার্ষিক আয় ৬ লাখ ৪১ হাজার ৮৭৫ টাকা এবং মোট সম্পদের পরিমাণ ১২ লাখ ২৩ হাজার ৪৪৩ টাকা।

ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের মালিকানায় রয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকার বৈদ্যুতিকসামগ্রী এবং ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকার আসবাবপত্র। তবে তাঁর বা তাঁর পরিবারের নামে কোনো যানবাহন বা ব্যক্তিগত গাড়ি নেই।

হলফনামা অনুযায়ী, তাঁর আয়ের প্রধান উৎস ব্যবসা ও পরামর্শক পেশা। ব্যবসা থেকে তাঁর বার্ষিক আয় ৫ লাখ ২ হাজার ৮৩০ টাকা এবং পরামর্শক পেশা থেকে আয় ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য খাত থেকে তাঁর আয় রয়েছে ৩০ হাজার টাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে গোপালগঞ্জ

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জিয়াউর রহমানের পাশে খালেদা জিয়ার দাফন সম্পন্ন

দুই উপদেষ্টার ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়েও দেশে আসতে পারেননি সাকিব

ভারতে চলন্ত গাড়িতে ২ ঘণ্টা দলবদ্ধ ধর্ষণের পর ছুড়ে ফেলা হলো রাস্তায়

এরশাদের ১২৬টি আসনের টোপ প্রত্যাখ্যান করে সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন খালেদা জিয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

১৭০ টাকার জন্য চাচার হাতে ভাতিজি খুন

ঝালকাঠি প্রতিনিধি  
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় ১৭০ টাকার জন্য চাচার হাতে মাদ্রাসাপড়ুয়া এক কিশোরীর নিহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার আওরাবুনিয়া ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত কিশোরীর নাম লামিয়া আক্তার (১৪)। সে উত্তর চরাইল হাসেমিয়া দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণির ছাত্রী এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির বড় ভাই ফারুক খানের সৎকন্যা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পকেট থেকে ১৭০ টাকা হারিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে প্রথমে লামিয়ার মা লিলি বেগমের সঙ্গে অভিযুক্ত জাকির হোসেন খানের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তিনি লিলি বেগমকে মারধর শুরু করেন। মাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে লামিয়াও মারধরের শিকার হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় মা ও মেয়েকে স্বজনেরা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল রাতে লামিয়া আক্তার মারা যায়। আহত লিলি বেগম বর্তমানে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযুক্ত জাকির হোসেন খানকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন। একই সঙ্গে এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

কাঁঠালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাছের রায়হান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বরিশালে ময়নাতদন্ত শেষে আজ বুধবার দুপুরে নিহত ব্যক্তির মরদেহ দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে গোপালগঞ্জ

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জিয়াউর রহমানের পাশে খালেদা জিয়ার দাফন সম্পন্ন

দুই উপদেষ্টার ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়েও দেশে আসতে পারেননি সাকিব

ভারতে চলন্ত গাড়িতে ২ ঘণ্টা দলবদ্ধ ধর্ষণের পর ছুড়ে ফেলা হলো রাস্তায়

এরশাদের ১২৬টি আসনের টোপ প্রত্যাখ্যান করে সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন খালেদা জিয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত