Ajker Patrika

আমবাগানে কলেজ ছাত্রীর শিক্ষার বাতিঘর

প্রতিনিধি, কুমারখালী (কুষ্টিয়া) 
আমবাগানে কলেজ ছাত্রীর শিক্ষার বাতিঘর

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ঘরে বসে কেউ কেউ অনলাইনে ক্লাস করছেন। তবে বাড়িতে টিভি ও স্মার্টফোনের ব্যবস্থা না থাকায় এখনো প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের অনেক শিক্ষার্থীর পড়াশোনা শুরু হয়নি। ফলে তারা লেখাপড়ায় ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে।

তাই কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় পিছিয়ে পড়া প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে পড়াচ্ছেন জেসমিন যূথী নামের এক কলেজ ছাত্রী। তিনি উপজেলার চাদপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত মনোহারপুর গ্রামের বাসিন্দা ও কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী।

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায় জানায়, মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও সরকার চালু রেখেছে অনলাইন ক্লাস। কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের দুস্থ ও অসহায় অনেক শিক্ষার্থীর নেই স্মার্ট ফোন ও টেলিভিশন। ফলে করোনাকালীন সময়ে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার আলো থেকে। আবার অনেকের স্মার্ট ফোন থাকলেও নেটওয়ার্কজনিত কারণে ক্লাস করতে পারছে না।

এলাকাবাসী জানান, এখানকার দুস্থ, অসহায়, মেধাবী ও সুবিধাবঞ্চিত কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যেন জ্ঞানার্জনে পিছিয়ে না পড়ে সেই লক্ষ্যে জেসমিন যূথী নিজ উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন। যূথী বাড়ির আম বাগানে প্রতিদিন দুপুরে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান করানো হচ্ছে। স্কুল বন্ধ থাকায় এখানে নিয়মিত পাঠদান করতে পেরে অনেক খুশি শিক্ষার্থীরা। যূথীর আম বাগানে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থী আসে পড়াশোনা করতে।

শিক্ষার্থীরা বলেন, `করোনায় স্কুল বন্ধ। বাড়িতে টিভি ও স্মার্ট ফোন নেই। তা ছাড়া টিভিতে পড়তে ভালো লাগে না। এখানে যূথী আপা পড়ায়। আমরা প্রতিদিন পড়তে আসি। খুব ভালো লাগে।'

শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা বলেন, `করোনার কারণে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ। সন্তানেরা ঘরে বসে থাকায় পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে পড়েছিল। তাদের পড়াশোনার প্রতি অনীহা হয়ে পড়ছিল। আমাদের যূথী এখানে নিয়মিত পড়াশোনা করাচ্ছে। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার প্রতি ভালো আগ্রহ ও মনোযোগ বেড়েছে। এতে আমরাও অনেক খুশি।'

জেসমিন যূথী বলেন, করোনা আর লকডাউনে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। ফলে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের আলো নিভে যাচ্ছিল। তাই নিজ উদ্যোগে এলাকার সকল শিক্ষার্থীদের একত্রে করে নিয়মিত ফ্রি তে পাঠদান করাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, অসহায়, গরিব ও দুঃখীদের পাশে দাঁড়াতে চাই, ভবিষ্যতে শিক্ষার উন্নয়নকাজ করতে চাই।

চাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদুজ্জামান তুষার বলেন, যূথীর এমন মহৎ উদ্যোগের বিষয়টি সবার মনে স্থান পেয়েছে। উদ্যোগটি ভালো তবে করোনার বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার জালাল উদ্দিন বলেন, করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও অনলাইনে পাঠদান অব্যাহত রয়েছে। যাদের স্মার্ট ফোন, টিভি ও নেট ব্রাউজার নেই, তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কোন অবস্থাতেই একজন কলেজ ছাত্রী গাছের নিচে বাচ্চাদের এভাবে পড়াতে পারেন না। এটা ঝুঁকিপূর্ণ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত