Ajker Patrika

চেয়ারম্যান ও সচিবের স্বাক্ষরে পিতৃ পরিচয়হীন নারী

আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৮: ৫২
চেয়ারম্যান ও সচিবের স্বাক্ষরে পিতৃ পরিচয়হীন নারী

যশোর মনিরামপুর উপজেলায় এক ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবের ওয়ারিশ সনদে পিতার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন খাদিজা খাতুন নামের এক নারী। শুধু সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত নন, এতে পিতৃ পরিচয়ও হারিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মেয়ের সঙ্গে স্বামীর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন মা কহিনুর বেগম।

ঘটনাটি উপজেলার মাছনা গ্রামের। খানপুর ইউপি চেয়ারম্যান গাজী মোহাম্মদ আলী ও সচিব ফরিদ হোসেনের দেওয়া ভুল ওয়ারিশ সনদে খাদিজা ও তাঁর মা কহিনুর বেগমকে করা হয়েছে অধিকার বঞ্চিত। তাঁরা সঠিক তদন্ত না করে সনদ দিয়েছেন বলে অভিযোগ। তা ছাড়া ইউপি সদস্য ইদ্রিস আলীর অর্থলিপ্সা মেটাতে না পেরে মা-মেয়ের এই করুন পরিণতি এমন অভিযোগও উঠেছে। 

বিষয়টি নিরসনে মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন খাদিজা। তাতেও অধিকার ফিরে পাননি তিনি বলে অভিযোগ করেন খাদিজা। খাদিজার দাবি, তাঁর পিতা মাছনা গ্রামের ফজলু গাজী। দেড় বছর আগে ৮-৯ বিঘা জমি রেখে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন তিনি। 

খাদিজার মা কহিনুর বেগম বলেন, ‘বহু আগে মাছনা গ্রামের ফজলু গাজীর সাথে আমার বিয়ে হয়। আমি তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী। বিয়ের তিন মাসের মধ্যে আমার গর্ভে সন্তান আসে। তখন চুরির অভিযোগ দিয়ে পেটের সন্তানসহ আমাকে পিতার বাড়িতে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। মাছনা গ্রামে আমার পিতার বাড়ি। সেই থেকে আমি পিতা আমির আলীর বাড়িতে থাকি। সেখানে জন্ম হয় মেয়ে খাদিজার। এরপর মাঠে কাজ করে মেয়েকে নিয়ে চলছি। পিতার বাড়ি থাকলেও আমার ও মেয়ের খোঁজ নিতেন স্বামী ফজলু গাজী। কিন্তু মেয়েকে নিয়ে কোনো দিন আমি আর স্বামীর ভিটেয় যেতে পারিনি।’ 

কহিনুর বলেন, ‘আমার মেয়ের ভোটার কার্ডে পিতার নাম ফজলু গাজী লেখা। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি ২০-২২ বছর আগে। সেখানে কাবিননামায় ওর পিতার নাম ফজলু গাজী দেওয়া। দেড় বছর আগে আমার স্বামী মারা যান। এরপর আমাদের মা মেয়েকে বাদ রেখে চেয়ারম্যান এবং সচিব আমার সতিন ও তাঁর চার সন্তানের নামে ওয়ারিশ সনদ দিছে।’ 

কহিনুর বেগমের মেয়ে খাদিজা খাতুন বলেন, ‘আব্বা মারা যাওয়ার খবর পেয়ে আমি ছুটে যাই। ওই দিন সন্ধ্যায় মেম্বরসহ সবাই আমার বিষয়টি নিয়ে বসে মীমাংসা করতে চান। পরে মীমাংসা না করে তাঁরা আমাকে ফেরত দেন। মাকে নিয়ে আমি চেয়ারম্যানের কাছে যাই। চেয়ারম্যান মার বিয়ের কাবিন দেখতে চান। সেটা দেখানোর পরেও আমাদের বাদ রেখে আমার সৎ ভাইবোনদের ওয়ারিশ সনদ দিছে।’ 

খাদিজা বলেন, ‘ওয়ারিশ সনদ দেওয়ার খবর শুনে গ্রামের মেম্বর ইদ্রিস আলীর কাছে গেলে তিনি ২০ হাজার টাকা চান। ১০ হাজার টাকা নিয়ে আমাদের একটা ভুয়া কাগজ ধরিয়ে দেন। মেম্বর চেয়ারম্যানের কাছে সমাধান না পেয়ে কয়েক মাস আগে ইউএনওর কাছে দরখাস্ত দিছি। তাতেও সমাধান পাইনি। ইউএনও আদালতে মামলা করতে বলেছেন। আমার মা ও স্বামী দিনমজুর। টাকা না থাকায় আদালতে যেতে পারিনি।’ 

খাদিজা অভিযোগ করেন, ‘ইউএনওর কাছে অভিযোগ দিলে তিনি সচিবের ওপর দায়িত্ব দেন। সচিব আমাদের লোকজনসহ পরিষদে ডাকেন। ওরা টাকা দিয়ে অনেক লোক ভাড়া করে নিছে। আমাদের পক্ষে লোক কম ছিল। পরিষদে মারামারির পর্যায়ে গেলে সচিব কোনো সমাধান না দিয়ে ফিরিয়ে দেন। পরে ওদের পক্ষে রায় দেন সচিব।’ 

মাছনা ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইদ্রিস আলী বলেন, কহিনুর বেগমকে ফজলু গাজী বিয়ে করেছিলেন এটা সত্য। পরে তাঁকে তালাক দিছেন। বর্তমান চেয়ারম্যান গাজী মোহাম্মদ তখন মেম্বর ছিলেন। তাঁর উপস্থিতিতে তালাক হয়েছিল। 

ইদ্রিস আলী বলেন, ‘খাদিজার পিতা ফজলু গাজী কি’না সেটা আমি জানি না। তা ছাড়া চেয়ারম্যান সচিব আমার কাছে না শুনে ফজলু গাজীর প্রথম স্ত্রী ও চার সন্তানকে ওয়ারিশ সনদ দিয়েছেন। আমি সনদ দেওয়ার কথা বলে কোনো টাকা নিইনি।’ 

এ বিষয়ে খানপুর ইউপি সচিব ফরিদ হোসেন বলেন, ‘আমি খাদিজাকে চিনি না। মাছনার দুই ইউপি সদস্যর তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ওয়ারিশ সনদ দিয়েছি। পরে ইউএনও অফিসে খাদিজা অভিযোগ করলে বিষয়টির তদন্ত চাওয়া হয়। তদন্ত করে একই রিপোর্ট পাইছি। সেটা লিখিত আকারে ইউএনও’র অফিসে জমা দিয়েছি।’ 

খানপুর ইউপি চেয়ারম্যান গাজী মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘মেম্বরদের সাথে কথা বলে ওয়ারিশ সনদ দিছি। ফজলু গাজী তাঁর ছোট স্ত্রী কহিনুরকে তালাক দিছিলেন সেটা মনে আছে। তবে তালাক লিখিত হইছিল কি’না জানা নেই।’   

মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হাসান বলেন, অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি তদন্তের জন্য খানপুর ইউপি সচিবকে বলেছি। তিনি তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন। কি লিখেছেন সেটা দেখতে হবে।  

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬১৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ: এক্সিম ব্যাংকের নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ ৩০ জনের নামে মামলা

‘কথিত আওয়ামী লীগ সদস্যদের’ বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতার বিষয়ে ভারত অবহিত নয়: মুখপাত্র

কলকাতার নিউটাউনে বসে আয়েশ করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা

চাকরি না ছেড়েই বিদেশে পাড়ি, ৪৮ শিক্ষক বরখাস্ত

ভিসা ছাড়া পাকিস্তান সফরের চুক্তি হতে পারে শিগগির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত