Ajker Patrika

নিয়মানুবর্তী এক সত্যজিৎ স্যার

আনোয়ার হোসেন (মনিরামপুর) ও রবিউল ইসলাম (অভয়নগর)
আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২১, ১০: ৩৯
নিয়মানুবর্তী এক সত্যজিৎ স্যার

সত্যজিৎ স্যার অবসরে যাচ্ছেন। ৯ অক্টোবর থেকে তিনি আর স্কুলে যাবেন না পড়াতে।

যেকোনো শিক্ষকই সময় হলে অবসরে যাবেন, এ আর নতুন কী?

একটু নতুনত্ব আছে বৈকি! সত্যজিৎ স্যার মানে সত্যজিৎ বিশ্বাস তাঁর ৩৫ বছরের শিক্ষকতাজীবনে এক দিনের জন্যও স্কুলে অনুপস্থিত থাকেননি। ঝড়-বৃষ্টি-বিয়ে-মৃত্যু—কিছুই তাঁর স্কুলে উপস্থিতির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হতে পারেনি।

বাড়ি তাঁর মনিরামপুরের কুচলিয়া গ্রামে। শিক্ষকতা করেন অভয়নগর উপজেলার ধোপাদী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। পড়ান নবম ও দশম শ্রেণির গণিত, সাধারণ বিজ্ঞান ও পদার্থবিজ্ঞান।

১৯৮৪ সালে বিএসসি পাস করার দুই বছর পর ১৯৮৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন ধোপাদী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। তখনই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, এক দিনও কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকবেন না। সেই অঙ্গীকার ভাঙেননি কখনো।

১৯৯০ সালে এক শুক্রবার রাতে নড়াইলের পঁচিশা গ্রামের আরতী বিশ্বাসকে বিয়ে করেন সত্যজিৎ স্যার। বিয়ের অর্ধেক কাজ সেরে নববধূকে রেখে শনিবার সকালে স্কুলে চলে যান তিনি। ২০ কিলোমিটার যান সাইকেল চালিয়ে। বিকেলে ছুটির পর শ্বশুরবাড়ি গিয়ে বিয়ের বাকি কাজ শেষ করেন।

১৯৯৩ সালে এক সোমবার সকালে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান তাঁর বাবা মাধব চন্দ্র বিশ্বাস। পাড়ার লোকজন ডেকে নিজের প্রতিজ্ঞার কথা বলে যোগ দেন ক্লাসে। বিকেলে ছুটি হলে বাবার সৎকার করেন।

৬০ বছর বয়সী সত্যজিৎ বিশ্বাসের সঙ্গে কথা হয় গত ২৯ সেপ্টেম্বর তাঁর স্কুলে। তিনি বলেন, ‘কর্মজীবনে যোগ দেওয়ার সময় প্রতিজ্ঞা করেছিলাম জীবনে কোনো দিন স্কুল ফাঁকি দেব না। বিধাতা আমাকে এই কাজে সাহায্য করেছেন। ঠিকমতো হাজির হয়েছি স্কুলে। শুধু দুই দিন স্কুলে পৌঁছানোর পর কিছুটা অসুস্থ বোধ করি। এক দিন ক্লাস শুরুর আগে সমাবেশ চলা অবস্থায় মাথা ঘুরে পড়ে যাই। অফিসকক্ষে নিয়ে মাথায় পানি দিলে আমি সুস্থ হই।’

গুণী এই শিক্ষক বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমি এমন। গ্রামের দিগঙ্গা কুচলিয়া হরিদাসকাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। স্কুলজীবনে অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে কোনো দিন অনুপস্থিত থাকিনি। অসুস্থতার জন্য দশম শ্রেণিতে দুই দিন অনুপস্থিত ছিলাম।’

স্ত্রী আরতী বিশ্বাস সংসারের প্রথম দিকে একটু-আধটু রাগ করতেন। পরে সেরা শিক্ষক হিসেবে নানা পুরস্কার পেলে সত্যজিৎ স্যারের ত্যাগকে শ্রদ্ধাই করে আসছেন তিনি।

অবসরজীবন কীভাবে কাটাবেন? শুনে সত্যজিৎ বিশ্বাসের চেহারা বিষণ্ন হয়। বলেন, ‘তখন বাড়ি বসে কর্মজীবনের কথা ভাবা ছাড়া গতি নেই। আমার গ্রামের মানুষও আমাকে ঠিকভাবে চেনেন না। মনিরামপুর উপজেলায় বাড়ি হলেও আমার সব পরিচিতি স্কুলকে ঘিরে।’

সত্যজিৎ স্যারের ছেলে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে চাকরির অপেক্ষায় রয়েছেন। মেয়ে পশুপালনের ওপর স্নাতকোত্তর পড়ছেন ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্ত্রী গৃহিণী।

দশম শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া খাতুন বলেন, ‘স্যার অন্য রকম মানুষ। আমাদের গণিত পড়ান। কোনো কিছু না বুঝলে বারবার বুঝিয়ে দেন। স্যার আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন, এটা ভাবতে কষ্ট হচ্ছে।’

৯ অক্টোবর সত্যজিৎ বিশ্বাস বিদায় নিচ্ছেন স্কুল থেকে। তাঁর বর্ণাঢ্য নিয়মানুবর্তী জীবন নিয়ে স্কুলটি গর্ব করতে পারবে আজীবন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

মানবিক করিডর না ভূরাজনৈতিক কৌশল? সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতায় উদ্বেগ

আইসিএক্স বাদ দিলে ঝুঁকিতে পড়বে দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব, বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ

‘কলেমা পড়ে বিয়ে’ করা স্ত্রীর ঘরে গিয়ে মধ্যরাতে ঘেরাও পুলিশ কনস্টেবল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত