Ajker Patrika

যশোরে এক দশকে শতাধিক পুকুর ভরাট, বিপন্ন জলাধার ও কৃষিজমি

­যশোর প্রতিনিধি
যশোর আইইডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা
যশোর আইইডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন উপেক্ষা করে যশোর শহর ও শহরতলিতে গত এক দশকে ভরাট হয়ে গেছে এক শর বেশি পুকুর-দীঘি। শহরের একাধিক ঐতিহ্যবাহী জলাধারের জায়গায় গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন। শুধু যশোর পৌরসভার মধ্যেই অন্তত এক ডজন পুকুর এখন অস্তিত্বহীন। একইভাবে কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন করে গড়ে তোলা হচ্ছে আবাসন প্রকল্প। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে শহরের পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা, বাস্তুতন্ত্র ও স্থানীয় কৃষি উৎপাদন।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোরে আইইডি কার্যালয়ে ‘প্রাকৃতিক জলাধার ও কৃষিজমি সুরক্ষার দাবিতে’ জনউদ্যোগ যশোর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী নাজির আহমদ। সূচনা বক্তব্য দেন প্রবীণ সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রুকুনউদ্দৌলাহ। লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন শ্রমিক নেতা মাহবুবুর রহমান মজনু।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, যশোর পৌরসভা এলাকায় বর্তমানে পৌরসভা, জেলা প্রশাসক ও বেসরকারি মালিকানায় মোট ৩২০টি জলাশয় রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি পৌরসভা, ৪০টি জেলা প্রশাসনের ও ২৭৪টি বেসরকারি মালিকানাধীন। তবে এক দশক আগেও এই সংখ্যা ছিল আরও বেশি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেশির ভাগ জলাধার ভরাট হয়ে গেছে।

নেতারা বলেন, এক থেকে দেড় যুগে যশোর শহরের ডাকঘরের সামনে, রেলগেট এলাকার চোরমারা দীঘি, নিরালা সিনেমা হলসংলগ্ন পুকুর, বেজপাড়ার শ্রীধর পুকুর, আরবপুরের বড় পুকুর, ইসলামিয়া স্কুলের পুকুর, পুরাতন কসবা এলাকার আবু তালেব সড়কের পুকুরসহ ২০টির বেশি পুকুর ভরাট হয়েছে। এসব জায়গায় গড়ে উঠেছে বাড়িঘর, বাণিজ্যিক স্থাপনা ও আবাসন প্রকল্প।

সম্প্রতি শহরের বারান্দিপাড়া ও চাঁচড়া এলাকায় নতুন দুটি পুকুর ভরাটের অভিযোগ উঠেছে। শুধু জলাধার নয়, শহরের আশপাশে বিস্তীর্ণ কৃষিজমিও আবাসন প্রকল্পের জন্য গ্রাস করা হচ্ছে। বিশেষ করে, যশোর সদরের হরিণার বিল এলাকায় ধান ও সবজি চাষের জমি ভরাট করে গড়ে তোলা হচ্ছে আবাসন প্রকল্প। এসব কাজে কোনো শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমতি ছাড়াই মাটি ফেলে জমি ভরাট করা হচ্ছে। ফলে ধ্বংস হচ্ছে ফসলি জমি, বিনষ্ট হচ্ছে সড়ক, আর আশঙ্কাজনক হারে কমছে পানি ধারণের ক্ষমতা।

নেতারা জানান, ৫০৭ হেক্টর আয়তনের হরিণার বিল যশোরের অন্যতম শস্যভান্ডার। বর্ষাকালে এই বিলে থই থই পানি থাকায় মাছ ধরা ও ধান চাষ হয়। শুকনা মৌসুমে বিভিন্ন সবজি ও ফলের আবাদও হয়। এ ছাড়া শহরের বড় অংশের পানি নিষ্কাশন এই বিলের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। অথচ বর্তমানে এই বিলে ভাতুড়িয়া ও মাহিদিয়া সড়কের আশপাশে গড়ে তোলা হচ্ছে আবাসন প্রকল্প। ফলে বিলের স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে, যা শহরের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশগত বিপর্যয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পুকুর ও বিল ভরাটের কারণে যশোর শহর প্রতিবছর বর্ষায় ডুবে যাচ্ছে। পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নিচ্ছে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে ভবিষ্যতে শহর ও আশপাশের এলাকাগুলোতে ভয়াবহ দুর্ভোগ নেমে আসবে।

জনউদ্যোগ যশোর নেতারা অবিলম্বে সব পুকুর ও কৃষিজমি ভরাট বন্ধ, বিদ্যমান জলাধার রক্ষা এবং দখল করা জলাশয় পুনরুদ্ধারে প্রশাসনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ দাবি করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক সুরাইয়া শরীফ, ধনঞ্জয় বিশ্বাস, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান মিলন, আইইডি যশোর কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক বীথিকা সরকার ও সদস্যসচিব কিশোর কুমার কাজল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আস্থায় বাজিমাত ইসলামী ব্যাংক

চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে গেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

‘ফের ধর্ষণচেষ্টার ক্ষোভে’ বাবাকে খুন, ৯৯৯-এ কল দিয়ে আটকের অনুরোধ মেয়ের

আ. লীগের ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিদের বিএনপির সদস্য হতে বাধা নেই: রিজভী

১৫ স্থাপনায় পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, আকাশেই ধ্বংসের দাবি ভারতের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত