তামীম আদনান, দৌলতপুর (কুষ্টিয়া)
আত্মানুসন্ধানের বেরিয়ে পড়েছিলেন ফরাসি দেশের রাজধানী প্যারিসের মেয়ে দেবোরাহ কিউকারম্যান। ৫০টির বেশি দেশ ঘুরে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসে পড়েন বাংলাদেশে। লক্ষ্য ফকির লালন শাহের আখড়া। লালনের দর্শনে মুগ্ধ দেবোরাহ আর বাড়ি ফেরেননি। এখানে ঘর বেঁধেছেন। তিনি এখন বাংলাদেশি বধূ। তিনি এখন দেবোরাহ জান্নাত। সাধুসঙ্গই তাঁর দৈনন্দিন রুটিন।
২০১৭ সালে লালনের তিরোধান দিবসে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার রাজন ফকিরকে বিয়ে করেন দেবোরাহ। রাজন ফকির উপজেলার প্রাগপুর ইউনিয়নের দীঘিরপাড় এলাকার ফকির গুরু নহির শাহ্র ভাতিজা ও শিষ্য। এখন জায়গাটি ‘হেম আশ্রম’ নামেই পরিচিত।
বিদেশি এই নারীর সাবলীল বাংলায় কথা বলা ও লেখায় মুগ্ধ হবেন যে কেউ। বাঙালি নারীদের মতো চলাফেরাও রপ্ত করেছেন। পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব দেবোরাহের সঙ্গে কথা হয় আজকের পত্রিকার এ প্রতিবেদকের। কেন বাংলাদেশে আসা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে সাধুসঙ্গ দেখতে এসেছি দুইটা লক্ষ্যে—ব্যক্তিগত কৌতূহল ও পিএইচডি গবেষণার জন্য। কিন্তু শেষ বেলায় সিদ্ধান্ত নিতে হলো কোনটা আমার জন্য বেশি জরুরি—সামাজিক আর একটা সার্টিফিকেট অর্জন করা নাকি গুরুকে ধরে সত্যিকারে ভক্ত হওয়া। এ সময় সাধু বা সাধকের আধ্যাত্মিকতা দেখে প্রেমে পড়ে যাই লালনের। খ্যাতি ও অর্থের মোহ পিছু ঠেলে থেকে যাই এ দেশে। মাঝে মধ্যে মাতৃভূমি ও পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে প্যারিসে যাই।’
দেবোরাহের ভাষায়, ফকির লালন শাহকে যতই জেনেছেন ততই তাঁর প্রেমে পড়েছেন। বেড়েছে শ্রদ্ধাভক্তি ও প্রেমবোধ। গুরু ফকির নহির শাহ্র কাছ থেকে দীক্ষা নিয়ে তাঁরই ভাতিজাকে বিয়ে করেছেন। বাউল–ফকিরদের জীবনাচারে প্রশান্তি খুঁজে পেয়েছেন তিনি। আর বাংলার মাটি ও বাতাসকে খুব আপন করে নিয়েছেন। লালন শাহেই জীবনের সব প্রশ্নের উত্তরও পেয়েছেন বলে জানান দেবোরাহ।
ফ্রান্সিস ও লিন্ডা কুকিয়েরমানের মেয়ে তিনি। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। ২০০৭ সালে লন্ডন কিংস্টোন ইউনিভার্সিটি থেকে নৃতত্ত্বে স্নাতক। দেশে থাকাকালীন ফরাসি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদের কাজও করতেন। দর্শনে এমএ করে ফ্রান্সে একসময় যোগের শিক্ষকতাও করেছেন।
আমি কে—এই প্রশ্ন নিয়ে তিনি কেন ঘুরেছেন, এর জবাবে দেবোরাহ বলেন, ‘কারণ, নিজের পরিচয় সবাই দেখাতে পারে কিন্তু কোনটা সত্য সেটা বেছে নিতে হয়। প্যারিসে ছেলেবেলা কাটিয়েছি, বড় হয়েছি, অনার্স পড়েছি, লন্ডন-আমেরিকাতে থেকেছি। আমি একসময় সিনেমাতে কাজ করতাম। আর সব সময় যোগের মধ্যে একটা সাধনা ছিল। সাধনা এতই বেশি হয়ে যায় তখন চাকরি ত্যাগ করে যোগেই মনোযোগী হই। ওই সময়টাতে আরও বেশি করে মনে প্রশ্ন জাগে “কে আমি? ” আসলে প্রশ্নের কোনো শেষ নেই। শেখারও শেষ নেই। তখন ফ্রান্স ছেড়ে চলে আসি ভারতে একটা আশ্রমে, যেখানে ধ্যান সাধনা শেখান হয়। গবেষণা করতে ও নিজের সাধনায় আরও গভীরে যেতে হয়। তারপর পথ খুঁজতে খুঁজতে প্রাগপুরের এই দীঘিরপাড়ে।’
বিয়ে এবং বর্তমান সংসার জীবন কেমন কাটছে? দেবোরাহ বলেন, ‘এ দেশে এসে ঘর-সংসার করা আমার জন্য এত সহজ ছিল না। সত্যি বলতে কী ভীষণ কষ্ট যে করেছি! তবে এখন ভালো আছি। এই বাংলার মাটি আমার খুব চেনা। এখানে যেন শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে পারি। এখানে আসার পর কেন জানি আমার বারবারই মনে হয়েছে, এই দেশ আমার আপন ঠিকানা। আমি যেই গুরুকে খুঁজছিলাম তাঁকে পেয়েছি। এখানে এসে একজন স্বামী পেয়েছি যে আমার থেকেও অনেক বেশি জ্ঞানী। আমার প্রতি যত্নবান। এ ছাড়া আমার গুরু নহির শাহকে নিয়ে কিছু বলার নেই! তিনি ভীষণ ভালো মানুষ।’
দীঘিরপাড়ে তিনতলা বাড়ি করেছেন দেবোরাহ। স্বামীকে নিয়ে সুখেই আছেন। নিজের থাকার ঘরটিতে ফরাসি সংস্কৃতির ছোঁয়া। তাকে সাজানো সারি সারি বই। তাঁর কণ্ঠে লালন সংগীতও মনোমুগ্ধকর।
সাধুদের জীবনযাপন কেমন লাগছে? একটু গম্ভীর হয়ে যান দেবোরাহ। বলেন, ‘কেউ সহজে সাধু হয় না, কোন রহস্যে মনটা ব্যতিক্রম হয়, হৃদয়ের টান বেশি জোরে বাজায়। আমার ক্ষেত্রে মুখের কথা, চিন্তা-ভাবনা, ও কর্মকে মিলাতে গিয়ে সাধনায় পড়েছি। বিশ্বজুড়ে সাধারণ সমাজে যে অমিল থাকে এই তিনটি স্তরে, সেটা আমার কাছে অসহনীয় ছিল। ‘‘সত্য বল সুপথে চল ওরে আমার মন’’ এই কথার ওপরে আর কোনো আদর্শ নেই আমার কাছে। কিন্তু সাধকের জীবন যাপন করতে গেলে অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়, নিজের মধ্যে ও সমাজের সম্মুখে। সাধু হওয়া অনেক বড় একটা জিহাদ। তবু ভোগে সুখ নেই, ত্যাগে শান্তি।’
দেবোরাহ বলেন, ‘আমাদের গুরু বলেন, আমরা সর্বশ্রেষ্ঠ জীব, আমাদের মানুষ হতে হবে। কয়েক দিন ধরে আমার কানে একটাই কথা বাজছে: ধর্ম যার যার, মনুষ্যত্ব সবার। এটা বাস্তবায়ন করতে হলে নিজের পরিবেশ থেকে দূরে যেতে হয়, নিজের সামাজিক পরিচয়কে শূন্য করতে হয়। যেটা সাধুগুরুর আখড়ায় গিয়ে সাধুগুরুর সান্নিধ্য লাভ করলে মাত্র সম্ভব। এটা মানব জাতির মূল সম্পদ এবং নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে করি যে বাংলাদেশে আসতে পেরেছি। একাকিত্ব বোধ থেকে আমরা স্বার্থপর হয়ে থাকি, ভয় ও লোভের ফাঁদে পড়ে। মানুষ হতে পারলে, নিজের সঙ্গে ও অন্যের সঙ্গে ঐক্যবোধটা আমাদের শান্তি ও আনন্দে বেঁচে রাখে।’
বাবা–মা, স্বজনেরা এই বিদেশ বিভুঁইয়ে এমন জীবন গ্রহণকে কীভাবে নিয়েছেন? এমন প্রশ্নে দেবোরাহ বলেন, ‘বাবা ও ভাই এসেছেন। বাবা এসেছেন আমার বিয়ের সিদ্ধান্ত শুনে, ২০১৭ সালের মে মাসে। যে মেয়ে ছোটকাল থেকে বলত বিয়ে করবে না, তার সর্বাঙ্গ সাধনায় আজীবন মুগ্ধ থাকবে, আবার প্যারিসে ফিরে এসে বলছে, বাংলাদেশে একজন ফকিরের সঙ্গে বিয়ে করতে চাচ্ছে—এ কী রকম পাগলামি! তাই বাবা পরিবেশটি দেখতে এলেন, আমাদের গুরুকে অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। যাওয়ার সময় বললেন, তোমার পছন্দ ঠিক আছে। তোমার সঙ্গে সবদিকে মিল আছে, গভীর আধ্যাত্মিক চিন্তা, নিরামিষ ভোজন, যোগসাধনা, সংগীত চর্চা। পরিবেশটি শান্ত। এরা অনেক শুদ্ধ, শিক্ষিত, ভদ্র, মমতাময়, এদের মন মানসিকতা সুস্থ। তোমার সিদ্ধান্ত স্থির হলে আমাদের আপত্তি নেই। আর আমার ভাই আমাদের বিয়ের পরে এসেছে, তাকে একটা সাধুসঙ্গে নিয়ে গিয়েছি। ওখানে ছিলাম তিন দিন। যাওয়ার সময় বলল, সহজ জীবন যাপন আসলে খুব কঠিন ব্যাপার!’
এরই ফাঁকে কথা হয় হাস্যোজ্জ্বল রাজন ফকিরের সঙ্গে, দেবোরাহ জান্নাতের স্বামী। বিদেশিনীর সঙ্গে সংসার জীবন কেমন কাটছে—রাজন ফকির বলেন, ‘আমরা দুজন খুব ভালো আছি। দেবোরাহ মানুষটা খুবই ভালো, একজন সহজ মানুষ। এ অঞ্চলের মানুষ খুব ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে, সেও সবাইকে ভালোবাসে এবং অনেক জ্ঞানী।’
উল্লেখ্য, ফকির নহির শাহ্ বাংলাদেশের একজন প্রবীণ লালনভক্ত সাধক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। ১৯৮৩ সালে উপজেলার প্রাগপুর ইউনিয়নের দীঘিরপাড়ে ‘হেম আশ্রম’ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। আধ্যাত্মিক চর্চাই এখন তাঁর জীবনের একমাত্র ব্রত।
আত্মানুসন্ধানের বেরিয়ে পড়েছিলেন ফরাসি দেশের রাজধানী প্যারিসের মেয়ে দেবোরাহ কিউকারম্যান। ৫০টির বেশি দেশ ঘুরে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসে পড়েন বাংলাদেশে। লক্ষ্য ফকির লালন শাহের আখড়া। লালনের দর্শনে মুগ্ধ দেবোরাহ আর বাড়ি ফেরেননি। এখানে ঘর বেঁধেছেন। তিনি এখন বাংলাদেশি বধূ। তিনি এখন দেবোরাহ জান্নাত। সাধুসঙ্গই তাঁর দৈনন্দিন রুটিন।
২০১৭ সালে লালনের তিরোধান দিবসে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার রাজন ফকিরকে বিয়ে করেন দেবোরাহ। রাজন ফকির উপজেলার প্রাগপুর ইউনিয়নের দীঘিরপাড় এলাকার ফকির গুরু নহির শাহ্র ভাতিজা ও শিষ্য। এখন জায়গাটি ‘হেম আশ্রম’ নামেই পরিচিত।
বিদেশি এই নারীর সাবলীল বাংলায় কথা বলা ও লেখায় মুগ্ধ হবেন যে কেউ। বাঙালি নারীদের মতো চলাফেরাও রপ্ত করেছেন। পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব দেবোরাহের সঙ্গে কথা হয় আজকের পত্রিকার এ প্রতিবেদকের। কেন বাংলাদেশে আসা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে সাধুসঙ্গ দেখতে এসেছি দুইটা লক্ষ্যে—ব্যক্তিগত কৌতূহল ও পিএইচডি গবেষণার জন্য। কিন্তু শেষ বেলায় সিদ্ধান্ত নিতে হলো কোনটা আমার জন্য বেশি জরুরি—সামাজিক আর একটা সার্টিফিকেট অর্জন করা নাকি গুরুকে ধরে সত্যিকারে ভক্ত হওয়া। এ সময় সাধু বা সাধকের আধ্যাত্মিকতা দেখে প্রেমে পড়ে যাই লালনের। খ্যাতি ও অর্থের মোহ পিছু ঠেলে থেকে যাই এ দেশে। মাঝে মধ্যে মাতৃভূমি ও পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে প্যারিসে যাই।’
দেবোরাহের ভাষায়, ফকির লালন শাহকে যতই জেনেছেন ততই তাঁর প্রেমে পড়েছেন। বেড়েছে শ্রদ্ধাভক্তি ও প্রেমবোধ। গুরু ফকির নহির শাহ্র কাছ থেকে দীক্ষা নিয়ে তাঁরই ভাতিজাকে বিয়ে করেছেন। বাউল–ফকিরদের জীবনাচারে প্রশান্তি খুঁজে পেয়েছেন তিনি। আর বাংলার মাটি ও বাতাসকে খুব আপন করে নিয়েছেন। লালন শাহেই জীবনের সব প্রশ্নের উত্তরও পেয়েছেন বলে জানান দেবোরাহ।
ফ্রান্সিস ও লিন্ডা কুকিয়েরমানের মেয়ে তিনি। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। ২০০৭ সালে লন্ডন কিংস্টোন ইউনিভার্সিটি থেকে নৃতত্ত্বে স্নাতক। দেশে থাকাকালীন ফরাসি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদের কাজও করতেন। দর্শনে এমএ করে ফ্রান্সে একসময় যোগের শিক্ষকতাও করেছেন।
আমি কে—এই প্রশ্ন নিয়ে তিনি কেন ঘুরেছেন, এর জবাবে দেবোরাহ বলেন, ‘কারণ, নিজের পরিচয় সবাই দেখাতে পারে কিন্তু কোনটা সত্য সেটা বেছে নিতে হয়। প্যারিসে ছেলেবেলা কাটিয়েছি, বড় হয়েছি, অনার্স পড়েছি, লন্ডন-আমেরিকাতে থেকেছি। আমি একসময় সিনেমাতে কাজ করতাম। আর সব সময় যোগের মধ্যে একটা সাধনা ছিল। সাধনা এতই বেশি হয়ে যায় তখন চাকরি ত্যাগ করে যোগেই মনোযোগী হই। ওই সময়টাতে আরও বেশি করে মনে প্রশ্ন জাগে “কে আমি? ” আসলে প্রশ্নের কোনো শেষ নেই। শেখারও শেষ নেই। তখন ফ্রান্স ছেড়ে চলে আসি ভারতে একটা আশ্রমে, যেখানে ধ্যান সাধনা শেখান হয়। গবেষণা করতে ও নিজের সাধনায় আরও গভীরে যেতে হয়। তারপর পথ খুঁজতে খুঁজতে প্রাগপুরের এই দীঘিরপাড়ে।’
বিয়ে এবং বর্তমান সংসার জীবন কেমন কাটছে? দেবোরাহ বলেন, ‘এ দেশে এসে ঘর-সংসার করা আমার জন্য এত সহজ ছিল না। সত্যি বলতে কী ভীষণ কষ্ট যে করেছি! তবে এখন ভালো আছি। এই বাংলার মাটি আমার খুব চেনা। এখানে যেন শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে পারি। এখানে আসার পর কেন জানি আমার বারবারই মনে হয়েছে, এই দেশ আমার আপন ঠিকানা। আমি যেই গুরুকে খুঁজছিলাম তাঁকে পেয়েছি। এখানে এসে একজন স্বামী পেয়েছি যে আমার থেকেও অনেক বেশি জ্ঞানী। আমার প্রতি যত্নবান। এ ছাড়া আমার গুরু নহির শাহকে নিয়ে কিছু বলার নেই! তিনি ভীষণ ভালো মানুষ।’
দীঘিরপাড়ে তিনতলা বাড়ি করেছেন দেবোরাহ। স্বামীকে নিয়ে সুখেই আছেন। নিজের থাকার ঘরটিতে ফরাসি সংস্কৃতির ছোঁয়া। তাকে সাজানো সারি সারি বই। তাঁর কণ্ঠে লালন সংগীতও মনোমুগ্ধকর।
সাধুদের জীবনযাপন কেমন লাগছে? একটু গম্ভীর হয়ে যান দেবোরাহ। বলেন, ‘কেউ সহজে সাধু হয় না, কোন রহস্যে মনটা ব্যতিক্রম হয়, হৃদয়ের টান বেশি জোরে বাজায়। আমার ক্ষেত্রে মুখের কথা, চিন্তা-ভাবনা, ও কর্মকে মিলাতে গিয়ে সাধনায় পড়েছি। বিশ্বজুড়ে সাধারণ সমাজে যে অমিল থাকে এই তিনটি স্তরে, সেটা আমার কাছে অসহনীয় ছিল। ‘‘সত্য বল সুপথে চল ওরে আমার মন’’ এই কথার ওপরে আর কোনো আদর্শ নেই আমার কাছে। কিন্তু সাধকের জীবন যাপন করতে গেলে অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়, নিজের মধ্যে ও সমাজের সম্মুখে। সাধু হওয়া অনেক বড় একটা জিহাদ। তবু ভোগে সুখ নেই, ত্যাগে শান্তি।’
দেবোরাহ বলেন, ‘আমাদের গুরু বলেন, আমরা সর্বশ্রেষ্ঠ জীব, আমাদের মানুষ হতে হবে। কয়েক দিন ধরে আমার কানে একটাই কথা বাজছে: ধর্ম যার যার, মনুষ্যত্ব সবার। এটা বাস্তবায়ন করতে হলে নিজের পরিবেশ থেকে দূরে যেতে হয়, নিজের সামাজিক পরিচয়কে শূন্য করতে হয়। যেটা সাধুগুরুর আখড়ায় গিয়ে সাধুগুরুর সান্নিধ্য লাভ করলে মাত্র সম্ভব। এটা মানব জাতির মূল সম্পদ এবং নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে করি যে বাংলাদেশে আসতে পেরেছি। একাকিত্ব বোধ থেকে আমরা স্বার্থপর হয়ে থাকি, ভয় ও লোভের ফাঁদে পড়ে। মানুষ হতে পারলে, নিজের সঙ্গে ও অন্যের সঙ্গে ঐক্যবোধটা আমাদের শান্তি ও আনন্দে বেঁচে রাখে।’
বাবা–মা, স্বজনেরা এই বিদেশ বিভুঁইয়ে এমন জীবন গ্রহণকে কীভাবে নিয়েছেন? এমন প্রশ্নে দেবোরাহ বলেন, ‘বাবা ও ভাই এসেছেন। বাবা এসেছেন আমার বিয়ের সিদ্ধান্ত শুনে, ২০১৭ সালের মে মাসে। যে মেয়ে ছোটকাল থেকে বলত বিয়ে করবে না, তার সর্বাঙ্গ সাধনায় আজীবন মুগ্ধ থাকবে, আবার প্যারিসে ফিরে এসে বলছে, বাংলাদেশে একজন ফকিরের সঙ্গে বিয়ে করতে চাচ্ছে—এ কী রকম পাগলামি! তাই বাবা পরিবেশটি দেখতে এলেন, আমাদের গুরুকে অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। যাওয়ার সময় বললেন, তোমার পছন্দ ঠিক আছে। তোমার সঙ্গে সবদিকে মিল আছে, গভীর আধ্যাত্মিক চিন্তা, নিরামিষ ভোজন, যোগসাধনা, সংগীত চর্চা। পরিবেশটি শান্ত। এরা অনেক শুদ্ধ, শিক্ষিত, ভদ্র, মমতাময়, এদের মন মানসিকতা সুস্থ। তোমার সিদ্ধান্ত স্থির হলে আমাদের আপত্তি নেই। আর আমার ভাই আমাদের বিয়ের পরে এসেছে, তাকে একটা সাধুসঙ্গে নিয়ে গিয়েছি। ওখানে ছিলাম তিন দিন। যাওয়ার সময় বলল, সহজ জীবন যাপন আসলে খুব কঠিন ব্যাপার!’
এরই ফাঁকে কথা হয় হাস্যোজ্জ্বল রাজন ফকিরের সঙ্গে, দেবোরাহ জান্নাতের স্বামী। বিদেশিনীর সঙ্গে সংসার জীবন কেমন কাটছে—রাজন ফকির বলেন, ‘আমরা দুজন খুব ভালো আছি। দেবোরাহ মানুষটা খুবই ভালো, একজন সহজ মানুষ। এ অঞ্চলের মানুষ খুব ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে, সেও সবাইকে ভালোবাসে এবং অনেক জ্ঞানী।’
উল্লেখ্য, ফকির নহির শাহ্ বাংলাদেশের একজন প্রবীণ লালনভক্ত সাধক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। ১৯৮৩ সালে উপজেলার প্রাগপুর ইউনিয়নের দীঘিরপাড়ে ‘হেম আশ্রম’ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। আধ্যাত্মিক চর্চাই এখন তাঁর জীবনের একমাত্র ব্রত।
রাজধানীতে কোনো ধরনের মব জাস্টিসকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। তিনি আরও বলেন, এসব ঘটনায় মামলা করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। এ ছাড়া মব জাস্টিস বা গণপিটুনির মতো ঘটনাগুলো প্রতিরোধে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের...
১ ঘণ্টা আগেনারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে একটি পাটকলের শ্রমিকেরা বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। আজ মঙ্গলবার সকালে মহাসড়কের কাচঁপুর এলাকায় মালেক জুট মিলের শ্রমিকের এ মিছিল করেন।
১ ঘণ্টা আগেনারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ভাড়াটিয়ার সঙ্গে দ্বন্দে আহত হয়ে এক বাড়িয়েওয়ার মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। নিহত ওই ব্যক্তির নাম মো. আবুল বাশার (৭০)। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদি নতুন মহল্লা এলাকায় এ দ্বন্দের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভাড়াটিয়া পরিবারের তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
১ ঘণ্টা আগেচাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে আশু পাটওয়ারী ওরপে আশিক (৪০) নামের এক ব্যক্তিকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ফেসবুক ব্যবহারকারী ও স্থানীয়দের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
১ ঘণ্টা আগে