Ajker Patrika

কুমারখালীতে ৫১ বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য ৪৬টি 

কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৪: ৪৬
কুমারখালীতে ৫১ বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য ৪৬টি 

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় শিক্ষকের সংকটের মধ্য দিয়ে চলছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। এক-তৃতীয়াংশ বিদ্যালয়ে রয়েছে শিক্ষকের সংকট। দীর্ঘদিন ধরে ১৪৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫১টিতে রয়েছে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। সহকারী শিক্ষকদের পদ শূন্য রয়েছে ৪৬টি এবং দপ্তরি কাম প্রহরীর শূন্য পদ ৩টি। প্রতিটি বিদ্যালয়ে ন্যূনতম চারজন শিক্ষক থাকার বিধান থাকলেও উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বিদ্যালয়ে রয়েছে দুই-তিনজন। এতে পাঠদানের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। 

প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় রয়েছে ১৪৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর মধ্যে ৫১টিতে রয়েছে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য এবং সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ৪৬টিতে। এতে ব্যাহত হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম। এ ছাড়া কর্মরত শিক্ষকেরা বাৎসরিক নিয়মিত ছুটি, মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং পিটিআই ট্রেনিংসহ উপজেলার রিসোর্স সেন্টারে বিভিন্ন ট্রেনিংয়ে থাকছেন। অনেক প্রধান শিক্ষককে ব্যস্ত থাকতে হয় দাপ্তরিক কাজে। এতে করে অনেক বিদ্যালয়ে স্বল্প শিক্ষক দিয়ে করোনাকালীন কয়েকটি শিফটে ক্লাস চালিয়ে নেওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরেজমিন উপজেলার পান্টি বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পীতামবরবশী, লক্ষ্মীপুর, জোতমোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের শিক্ষকের পদ থাকলেও নেই শিক্ষক। ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধার জন্য ডেপুটেশন নিয়ে অনেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। কেউ আবার মেডিকেল ছুটি কাটাচ্ছেন বছরের পর বছর। ফলে শিক্ষকের স্বল্পতায় ব্যাহত হচ্ছে মানসম্মত পাঠদান। এ ছাড়া প্রধান শিক্ষকবিহীন স্কুলগুলোতে কোনো নিয়মনীতি না থাকায় বাকি শিক্ষকেরা ইচ্ছামতো যাওয়া-আসা করেন। 

এ বিষয়ে অভিভাবকেরা বলেন, অনেক শিক্ষকই গ্রামীণ স্কুলগুলো থেকে শহরে বদলির চেষ্টায় ব্যস্ত থাকেন। যাতায়াতের সুব্যবস্থা থাকার পরও গ্রামে স্থায়ী হচ্ছেন না। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সহকারী শিক্ষক বলেন, ৫০০ কিংবা তার চেয়েও অধিক শিক্ষার্থীকে মাত্র দু-তিন জন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান করতে হয়। এতে করে পাঠদানে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। 

পান্টি ইউনিয়নের পীতামবরবশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মশিউর রহমান বলেন, `বর্তমানে বিদ্যালয়ে ২৩০ জন শিক্ষার্থী আছেন। শিক্ষক নিয়োগের সাতটি পদের বিপরীতে আমিসহ শিক্ষক আছে মাত্র দুজন। প্রায় ২০ বছর বিদ্যালয়ে শিক্ষক নেই। খুব বিপাকে আছি।' 

যদুবয়রা ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৬৭। শিক্ষকের পদ আছে নয়টি, এর বিপরীতে শিক্ষক আছেন পাঁচজন। শিক্ষকের সংকট থাকায় স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। 

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, উপজেলায় ১৪৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট ৩২ হাজার ২৭৬ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে। এর মধ্যে ছাত্র ১৫ হাজার ৩২৯ জন এবং ১৬ হাজার ৯৪৭ জন ছাত্রী রয়েছে। 

শিক্ষা অফিসার আরও বলেন, `প্রতিষ্ঠানগুলো সবে খুলেছে আর আমি সদ্য যোগদান করেছি। শিক্ষকের স্বল্পতায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে এমন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে যেখানে বেশি শিক্ষক আছে, সেখান থেকে ডেপুটেশন করে শিক্ষক স্বল্প প্রতিষ্ঠানে দেওয়া হবে।  

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত