Ajker Patrika

কাঠের ঘানিতে বের করা হচ্ছে খাঁটি সরিষার তেল

কুমারখালী (কুষ্টিয়া), প্রতিনিধি
কাঠের ঘানিতে বের করা হচ্ছে খাঁটি সরিষার তেল

ঘাড়ে ঘানি আর চোখের ওপর মোটা কাপড়ের পর্দা দেওয়া অবস্থায় চলছে কলুর বলদ। কাঠের তৈরি ঘানিটা ঘুরছে আর সরিষা পিষে তা থেকে বের হচ্ছে তেল। ধীরে ধীরে টিনের পাত্রে সে সরিষার তেল জমা হচ্ছে। এভাবে তৈরি হয় খাঁটি তেল। এ তেলের ঝাঁজালো গন্ধে চোখে পানি এসে যায়। এই ধারা বজায় রাখতে কাজ করছেন প্রবাস ফেরত মিজানুর রহমান। 

এলাকার সূত্রে জানা যায়, কাঠের ঘানির সাহায্যে ফোঁটা ফোটায় নিংড়ানো খাঁটি সরিষার তেল এক সময় কুষ্টিয়ার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জের হাটবাজারে বিক্রি হতো। এই তেল বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করতেন কলু সম্প্রদায়। তবে গ্রামবাংলার অতি পরিচিত দৃশ্যটি এখন খুব একটা চোখে পড়ে না। এখন বৈদ্যুতিক যন্ত্রেই করা হয় তেল ভাঙানোর কাজ। 

তবে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা শেরকান্দি গ্রামে প্রবাসী ফেরত মিজান সাম্প্রতিক সময়ে শুরু করেছেন ঐতিহ্য ও সনাতন পদ্ধতিতে খাঁটি তেল উৎপাদন। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে এ খাঁটি তেল কুষ্টিয়াসহ দেশের সকল জেলা ও উপজেলা শহরগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে। অনেকে আবার খাঁটি তেলের আশায় ছুটে আসছে ঘানিতে। 

উপজেলার যদুবয়রা থেকে আগত ক্রেতা আব্দুস সাত্তার (৬৫) বলেন, কয়েক বছর আগেও এই ঘানির সরিষার তেল দিয়েই মিটত সকল পরিবারের চাহিদা। বর্তমানে এ খাঁটি সরিষার তেল প্রত্যন্ত গ্রামেও খুঁজে পাওয়া যায় না। 

জেলা শহর থেকে আসা কনক নামের অপর একজন ক্রেতা বলেন, যদি কোনো ভেজাল না মেশানো হয় তাহলে এই তেলের ওপরে আর কোনো তেল নেই। মার্কেটিং আর চমকদার বিজ্ঞাপনের জন্য সবাই ভুলতেই বসেছেন আসল নকলের পার্থক্য। তবে মিজানের ঘানিতে প্রতিদিনই আসে আগ্রহী ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা। বর্তমানের ভেজালের দিনে শতভাগ খাঁটি জিনিস খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এ কারণে তাঁর ক্রেতাও বেশি। শুধু এলাকার মানুষ তাঁর এ খাঁটি তেল কেনেন না, জেলা শহর থেকেও আগ্রহী ক্রেতারা এসে তেল নিয়ে যায়। 

এ বিষয়ে মিজানের মা মাসুমা খাতুন বলেন, পৈতৃক ব্যবসা ফিরিয়ে আনা, সৎ পথে উপার্জন আর ভেজালমুক্ত মানুষকে খাওয়ার জন্যই আমার ছেলেকে এ কাজ শুরু করতে উৎসাহ দিয়েছি। 

মিজানুর রহমান বলেন, একসময় সংসারের হাল ফেরাতে জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমাই সুদূর বিদেশে। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দিনরাত খেয়ে না খেয়ে কাটিয়েছি বিদেশে। ৫ বছর পর এক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই পা ভেঙে যায়। ফলে স্থবির হয়ে পড়ে জীবন। এরপর আর বিদেশ থাকা হয়নি। দেশে ফিরে যৎসামান্য টাকা আর হালের দুইটি বলদ দিয়ে শুরু করি পৈতৃক ব্যবসা। এখন নিজের সংসারের হাল আর লোকজনদের ভেজাল মুক্ত তেল খাওয়ানোর প্রতিশ্রুতি নিয়ে কাজ করছি। আর এই কাজে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন আমার মা। প্রথমে দুইটা গরু দিয়ে একটা ঘানি চলত। তবে মানুষের ভালো সাড়া পাওয়ায় বর্তমানে চারটি গরু দিয়ে দুইটি ঘানি চলছে। 

মিজানুর রহমান আরও বলেন, যান্ত্রিক যুগে সবাই ভেজাল পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন। তাই ভেজালমুক্ত পণ্য পরিবেশনের লক্ষ্যে নিয়ে তেল উৎপাদন করছি। ক্রেতাদের খুব ভালো সাড়াও পাচ্ছি। তবে করোনায় অনেকটায় থমকে পড়েছিলাম। সরকারিভাবে ঋণ পেলে ঘানি পরিচালনা সহজ হতো। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত