Ajker Patrika

মাগুরায় শিশু ধর্ষণ

প্রধান আসামি স্ত্রী-ছেলেকে বাঁচাতে মিথ্যা বলেছেন, দাবি বাদীর

মাগুরা প্রতিনিধি 
আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৫, ১০: ২৩
প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।

মাগুরার সেই আট বছরের শিশুটিকে একাই ধর্ষণ ও নির্যাতন করেছিলেন বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন তার বড় বোনের শ্বশুর ও মামলার প্রধান আসামি। কিন্তু তা মানতে রাজি নন শিশুটির মা ও মামলার বাদী। তাঁর দাবি, এ ঘটনার সঙ্গে প্রধান অভিযুক্তের স্ত্রী ও ছেলেরাও জড়িত ছিলেন।

শিশুটির মায়ের সঙ্গে গতকাল রোববার বিকেলে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা মেয়ের বাপকে নিয়ে ব্যস্ত আছি। সে গত ৯ মাস ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন। মেয়েটা মারা যাওয়ার পর আরও ব্রেন বিগড়ে গেছে। তাকে ঢাকায় চিকিৎসা দেওয়া চলছে। তাকে সুস্থ করলে আমাদের আয়ের একটা গতি হবে। তাই মামলায় কী হচ্ছে না হচ্ছে ভালো জানি না। মাঝেমধ্যে পুলিশ আসে, নানা কিছু শুনতে পাই, এই পর্যন্তই।’

মামলার প্রধান অভিযুক্তের জবানবন্দিকেই কেন একমাত্র সত্য ধরে নেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বাদী। তিনি বলেন, ‘সে তো এসব খারাপ কাজ করেছে, তাহলে সে যা বলল তাকেই আপনারা মনে করতেছেন ক্যান সত্যি? সে তো তার ছেলে ও বউরে বাঁচানোর চেষ্টা করার জন্য এসব কথা বলিছে। এসব মিথ্যা জবানবন্দি আমরা মানি না। আমরা আদালতে এসব উকিলের মাধ্যমে তুলি ধরব। তয় মেয়ের বাপ সুস্থ হলি মামলার বিষয়ে আমরা সময় দিতে পারব।’

১৫ মার্চ মাগুরার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সব্যসাচী রায় প্রধান আসামির ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দিতে আসামি জানান, তিনি সকালে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন এবং এ সময় চিৎকার আটকাতে তার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে টেনে ধরেছিলেন।

এ বিষয়ে শিশুটির মা বলেন, ‘গলায় ওড়না প্যাঁচানোর দাগ আমার বড় মেয়ে সকাল ৯টায় দেখেনি। ওরা সবাই মিলে অকাজ করে মেয়েকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। আর এটা সকাল ১০টার দিকে প্রকাশ পায়। প্রধান আসামির স্ত্রী পটোল তুলতে যায়নি। সে ঘরেই ছিল বলে আমার বড় মেয়ে আগেই বলেছে। ঘটনা রাতের বলে বড় মেয়ে আমাদের জানায়ছে, সকালে তা প্রকাশ পায়। (জবানবন্দিতে) দিনের বেলা ঘটনার কথা কইছে। কারণ, প্রধান আসামির ছেলে ও বউ বাইরে থাকার কথা বলে যাতে দোষ ঢাকা যায়। রাতের কথা কলি তো সবাই ধরা খেয়ে যাবে। আমরা সব আসামির ফাঁসি চাই।’

শিশুটির বড় বোন ঘটনার পর কয়েকটি গণমাধ্যমে জানিয়েছিল, রাতে ঘুম থেকে ওঠার পর শিশুটিকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে সে। তখন শিশুটিকে মেঝে থেকে খাটে ওঠায় সে। তবে তখন সে কিছু খেয়াল করেননি। পরে সকালে শিশুটি একবার বাইরে বের হলেও পরে বোনের সামনেই মেঝেতে শুয়ে পড়ে অচেতন হয়ে যায়।

এ প্রসঙ্গে বাদী বলেন, ‘আমার বড় মেয়ে যা এর আগে বলেছে তা মিথ্যা নয়।’

মামলার এজাহারে শিশুটির মায়ের অভিযোগ ও গ্রেপ্তার প্রধান আসামির জবানবন্দিতে মিল না থাকায় বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েছে পুলিশ। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রেপ্তার আসামিরা এক কথা বলছেন। কিন্তু ভুক্তভোগী শিশুটির বোন একেকবার একেক কথা বলছে। যে কারণে কোনটা সত্য তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে প্রাথমিক তদন্তে প্রধান আসামি ছাড়া এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় আর কারও সম্পৃক্ততা পাননি তাঁরা।

এই বিষয়ে রোববার মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. মিরাজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মামলার প্রধান আসামি ধর্ষণের দায় স্বীকার করে ইতিমধ্যে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ঘটনায় বাকি আসামিরা জড়িত ছিলেন কি না, সেটি ডিএনএ ও ফরেনসিক রিপোর্ট পাওয়ার পর জানা যাবে।’

প্রসঙ্গত, শিশুটি বড় বোনের শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে এসে ধর্ষণের শিকার হয় চলতি মাসের ৬ তারিখে। অচেতন অবস্থায় তাকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতাল, এরপর ফরিদপুর হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ মার্চ দুপুরে মারা যায় শিশুটি।

ধর্ষণের ঘটনায় ৮ মার্চ মাগুরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন শিশুটির মা। মামলায় শিশুটির বড় বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়। চারজনই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত