Ajker Patrika

২৩০ শিক্ষার্থীর শিক্ষক ২ জন

মিজানুর রহমান নয়ন, কুমারখালী (কুষ্টিয়া)
আপডেট : ০২ অক্টোবর ২০২১, ১২: ৫০
২৩০ শিক্ষার্থীর শিক্ষক ২ জন

শিক্ষকসংকটে ধুঁকছে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের ৬৭ নম্বর পীতাম্বরবশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২৩০ শিক্ষার্থীর পাঠদানের জন্য বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক আছেন মাত্র দুজন। এ অবস্থায় ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যালয়টির মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা ও বিদ্যালয় পরিচালনা। দীর্ঘ ১২ বছর এমন সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে বিদ্যালয়টি।

গত বৃহস্পতিবার সকালে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, এলোমেলো ঘুরে বেড়াচ্ছে শিক্ষার্থীরা। প্রধান শিক্ষক অফিস কক্ষে দাপ্তরিক কাজ করছেন। আর একজন সহকারী শিক্ষক পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন। স্কুলে শিক্ষক পদের সংখ্যা সাত। অথচ কাগজে-কলমে শিক্ষক আছেন চারজন। এর মধ্যে নিয়মিত স্কুলে আসেন মাত্র দুজন। তাঁদের মধ্যে একজন আবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে।

দুজন শিক্ষকের বিপরীতে স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৩০। কাগজে-কলমের অপর দুজন সহকারী শিক্ষকের একজন কোহিনুর খাতুন আছেন পিটিআই প্রশিক্ষণে। অপরজন মাহজুবা উম্মে ফেরদৌস প্রায় চার বছর ধরে স্কুলে আসেন না। তিনি কোথায় কীভাবে আছেন খোঁজ মেলেনি আজও।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মশিউর রহমান বলেন, ‘এক যুগ ধরে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। ভারপ্রাপ্ত দিয়ে কাজ চলছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদ আছে সাতটি। এর মধ্যে কাগজে-কলমে আছেন চারজন, কিন্তু কর্মরত আছি আমিসহ আরেকজন। আমাকে অধিকাংশ সময় অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। তখন মাত্র একজন শিক্ষক দিয়ে স্কুল চলে। শিক্ষকসংকটে আমাদের নাকাল অবস্থা। আমরা এ থেকে রেহাই চাই।’

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক স্মিতা মজুমদার বলেন, ‘২৩০  শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক আছেন মাত্র দুজন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। তখন আমি একাই স্কুল চালায়। একজনের পক্ষে এত বড় স্কুল চালানো কোনোভাবেই সম্ভব না। এতে মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ব্যক্তিগতভাবে আমি শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভুগছি। এর প্রভাব আমার পারিবারিক জীবনেও পড়ছে।’

এলাকাবাসীরা জানান, পীতাম্বরবশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহজুবা উম্মে ফেরদৌস উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের ডাঁসা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম লুৎফর রহমানের মেয়ে। কুষ্টিয়া জেলসুপার তায়েব উদ্দিন মিয়ার স্ত্রী তিনি। এ বিষয়ে মাহজুবার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাঁর এক নিকটাত্মীয় বলেন, ‘মাহজুবা বিনা বেতনে ছুটিতে আছেন। তাঁর বদলির চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তিনি আর ওই স্কুলে যাবেন না।’

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ওই বিদ্যালয়ের ক্লাস্টার এটিও। মাহজুবা নামের এক সহকারী শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে আসেন না। কোনো ছুটিও নেননি তিনি। এর আগে তাঁকে শোকজ করা হয়েছিল। কিন্তু শোকজের জবাব দেননি। বর্তমানে তিনি কোথায় আছেন তা জানার জন্য পুনরায় শোকজ করা হবে।’ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি সদ্য যোগদান করেছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ক্লাস্টার এটিওকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত