Ajker Patrika

এক্সপ্রেসওয়েতে নিহত চারজনের বাড়িতে শোকের মাতম

­যশোর প্রতিনিধি
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকা
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকা

মুন্সিগঞ্জে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত চারজনের বাড়িই যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নে। তাঁদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

নিহত চারজন হলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নওয়াপাড়া ইউনিয়ন সভাপতি ও পাগলাদাহ গ্রামের বাসিন্দা জালাল উদ্দিন (৬৫), মধুগ্রামের জিল্লুর রহমান (৬৫), শেখহাটির আব্দুল হালিম মোস্তফা (৫৫) ও পাগলাদাহের মো. বাপ্পির ছেলে হাসিব (৩২)। তাঁদের মধ্যে হাসিব বাসচালকের সহকারী ও অন্য তিনজন যাত্রী ছিলেন। দুর্ঘটনায় আহত হন অন্তত ১৫ জন।

স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, আজ শনিবার ঢাকায় ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশে যোগ দিতে গতকাল শুক্রবার রাতে হামদান এক্সপ্রেসের একটি রিজার্ভ বাস নিয়ে যাত্রা করেন নওয়াপাড়া ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী। পথে ভোররাতে এক্সপ্রেসওয়েতে একটি ট্রাককে পেছন থেকে বাসটি ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

আজ দুপুরে পাগলাদাহ গ্রামের পূর্বপাড়ায় নিহত জালালের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের ওপর শামিয়ানা টাঙাচ্ছেন কয়েকজন যুবক। কেউ কবর খুঁড়ছেন, কেউবা কয়েকটি বড় হাঁড়িতে পানি গরম করছেন। সড়কের ওপর সারিবদ্ধভাবে রাখা চেয়ারে বসে আছেন গোটা বিশেক মানুষ। বাড়ির ভেতরে নারীদের আহাজারি।

সেখানে কথা হয় ইসলামী আন্দোলনের কর্মী আইতুল্লাহর সঙ্গে। দুর্ঘটনায় তিনি আহত হন। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে পাগলাদাহ গ্রামে বাড়িতে চলে আসেন। তিনি বলেন, ‘সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে হামদান এক্সপ্রেস নামের একটি বাস রিজার্ভ করে রওনা দিই ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। বাসে উঠে ঘুমিয়ে পড়ি। মাঝে মহাসড়কের পাশে একটি দোকানে সবাই নেমে চা-বিস্কুট খাই। পরে আবার গাড়িতে উঠি। সিংপাড়া-নওয়াপাড়া ও হাঁসাড়া ব্রিজ-২-এর মধ্যবর্তী স্থানে এই দুর্ঘটনা ঘটে। হামদান এক্সপ্রেস চলন্ত এক ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দেয়। এতে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এক্সপ্রেসওয়ের মাঝখানের সড়কদ্বীপে রেলিংয়ের সঙ্গে আলাদাভাবে ধাক্কা খায়। দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মারা যান দুজন। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুজন মারা যান।’

নিহত জালালের বড় ভাই মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘এলাকায় আলেম ও চিকিৎসক হিসেবে সম্মানিত মানুষ জালাল। ভোররাতে সমাবেশে যাওয়ার পথে সে ও তার কর্মীদের দুর্ঘটনায় নিহতের খবরে আমরা ভেঙে পড়েছি। এলাকায় শোকের মাতম চলছে। আহত ও নিহত ব্যক্তিদের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।’

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকা
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকা

এদিকে দুর্ঘটনায় প্রথমে গুরুতর আহত হন বাসটির চালকের সহকারী হাসিব। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ছোটবেলা এক দুর্ঘটনায় বাবা বাপ্পিকে হারান হাসিব। পরে পোশাক কারখানায় কাজ করে হাসিবকে বড় করেন মা শায়লা বেগম। এখন তিনি বয়সের কারণে ও নানা রোগে অসুস্থ। হাসিবের অসুস্থ মা, স্ত্রী ও আড়াই বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। তিনি পরিবারের হাল ধরতে কিছু দিন আগে বাসে চাকরি নেন। এখন দুর্ঘটনায় তাঁকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা ও স্ত্রী।

হাসিবের শাশুড়ি মর্জিনা বেগম বলেন, ‘হাসিবই ছিল সব। এভাবে তার প্রাণ দিতে হবে জানলে বাসে চাকরি নিতে দিতাম না। আমাগের এখন কী হবে? তার মেয়েটার কী হবে? তারে হারিয়ে তো আমরা অথই সাগরে পড়ে গেলাম।’

মেয়েকে কোলে নিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন হাসিবের স্ত্রী। তিনি নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বলেন, ‘শুক্রবার রাতে একবার কথা হয়েছিল। বলেছিল, “যেহেতু হুজুরদের প্রোগ্রাম, শেষ না হলে আর ফিরা হবে না।” তবে সে যে আর ফিরবে না, সেটা তো বলেনি। এখন আমার মেয়েটার কী হবে, আমার কী হবে?’

এ বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসনাত বলেন, ‘গণমাধ্যমে শুনেছি যশোরের চারজন নিহত হয়েছেন। পুলিশ সদস্যরা নিহতের বাড়িতে গিয়েছিলেন।’

দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় শোক জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। ফেসবুকে পোস্ট করা এক শোকবার্তায় তিনি লেখেন, ‘আজ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসমাবেশে যোগ দিতে আসা যশোরের একটি বাস মাওয়া এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হয়। এই দুর্ঘটনায় মহান আল্লাহর চারজন বান্দা ইন্তেকাল করেছেন। মহান রাব্বুল আলামিন তাঁদের শহীদ হিসেবে কবুল করুন। আরও কতিপয় ব্যক্তি আহত হয়েছেন। মহান আল্লাহ তাঁদের সুস্থতার নিয়ামত দান করুন। আমিন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালদূষণকারী কারখানা পেল পরিবেশবান্ধব পুরস্কার

ইস্পাহানে বাংকার বাস্টার মারেনি যুক্তরাষ্ট্র, অক্ষত ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম

ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ভারতের সংসদীয় কমিটির দীর্ঘ বৈঠক

বাবুই পাখির কান্না কেউ শুনল না, কেটে ফেলা হলো তালগাছটি

নামের ভুলে বেতন বন্ধ ৫,০০০ শিক্ষক-কর্মচারীর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত