Ajker Patrika

৩ বছরে অস্ত্রোপচার একটি, বন্ধ এক্স-রে

  • ১০৭টি পদের খালি আছে ৪২টি
  • গত ফেব্রুয়ারি থেকে বন্ধ এক্স-রে
  • তিন বছরের মধ্যে অস্ত্রোপচার হয়েছে গত অক্টোবরে
  • শিগগির সব সমস্যার সমাধান: স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা
রাকিবুল ইসলাম (গাংনী) মেহেরপুর
আপডেট : ০৪ মে ২০২৫, ০৮: ৫৭
চিকিৎসা সরঞ্জাম সবই আছে, তবে সংকট চিকিৎসকের। এ কারণে বন্ধ রয়েছে অস্ত্রোপচার। অলস পড়ে রয়েছে অস্ত্রোপচার কক্ষটিও। গতকাল মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ছবি: আজকের পত্রিকা
চিকিৎসা সরঞ্জাম সবই আছে, তবে সংকট চিকিৎসকের। এ কারণে বন্ধ রয়েছে অস্ত্রোপচার। অলস পড়ে রয়েছে অস্ত্রোপচার কক্ষটিও। গতকাল মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ছবি: আজকের পত্রিকা

এক্স-রে মেশিন, অপারেশন থিয়েটার—সবই আছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তবে জনবলসংকটে এক্স-রে ও অস্ত্রোপচার হচ্ছে না। গত ৩ বছরে মাত্র একবার অস্ত্রোপচার হয়েছে। তা-ও এক প্রসূতির। আর এক্স-রে বন্ধ রয়েছে গত ফেব্রুয়ারি থেকে। সব মিলিয়ে জনবলসংকটে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার তিন লক্ষাধিক মানুষ। তাঁদের দাবি, এই সংকট কাটিয়ে সেবার উপযোগী করা হোক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র বলেছে, হাসপাতালে মোট পদ রয়েছে ১০৭টি। এগুলোর মধ্যে আছেন ৬৫ জন। চিকিৎসক পদ রয়েছে ২১টি, আছেন ৮ জন। নার্সের পদ রয়েছে ৩০টি, আছেন ২৯ জন। ওয়ার্ড বয় তিনজনের মধ্যে আছেন একজন। চার ফার্মাসিস্ট পদের বিপরীতে আছেন দুজন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী পাঁচজনের মধ্যে আছেন একজন। পিয়ন চারজনের মধ্যে আছেন একজন। অফিস সহকারী তিনটি পদই শূন্য। নিরাপত্তাকর্মীর দুই পদই খালি। এক্স-রে মেশিন অপারেটর পদটিও শূন্য। এ ছাড়া যেসব পদ রয়েছে, তা-ও বেশির ভাগ শূন্য।

জানা গেছে, ১৯৬৩ সালে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়। রোগীর চাহিদা বিবেচনায় ২০০৬ সালে হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করে নতুন ভবনে ২০১৭ সালে রোগীদের সেবা কার্যক্রম শুরু হয়।

চিকিৎসা নিতে আসা পারভিন আক্তার বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আমরা কম খরচে অপারেশন করতে পারব। কিন্তু তা আর হয় না। অপারেশন দীর্ঘদিন বন্ধ আছে। এতে চরম ভোগান্তিতে রয়েছে আমাদের মতো সেবা নিতে আসা অসহায় মানুষ।’ ছনিয়া আক্তার নামের আরেকজন বলেন, ‘ডেলিভারি (সন্তান প্রসব) অপারেশন হওয়ার জন্য এর আগে সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু ডাক্তার না থাকায় অপারেশন হয়নি। বাধ্য হয়ে স্থানীয় ক্লিনিকে অপারেশন করাতে হয়। এতে আমাদের খরচ বেড়ে যায়।’

মিয়ারুল ইসলাম নামের একজন বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমার হাত ভেঙে গেলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাই। কিন্তু তারা অন্য ক্লিনিক থেকে এক্স-রে করিয়ে আনতে বলেন। যদি হাসপাতালে এক্স-রে মেশিনটা চালু থাকত, তাহলে অল্প খরচে চিকিৎসা হয়ে যেত।’

গাংনী থানাপাড়ার রজনী খাতুন বলেন, ‘আমার ১৯ দিন আগে সিজারিয়ান অপারেশন হয়েছে। এটা যদি সরকারি হাসপাতালে হতো, তাহলে আমার অনেক খরচ কমে যেত। প্রাইভেট ক্লিনিকে করার কারণে আমার খরচ অনেক বেড়ে গেছে; যা পরিবারের জন্য একটা বড় বোঝা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েছিলাম, কিন্তু সেখানে অপারেশন হয় না। তাই প্রাইভেট হাসপাতালে অপারেশন করাতে হয়েছে। অনেক অসহায় পরিবার সিজার করাতে গিয়ে চরম অভাবে পড়ে যায়।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুপ্রভা রানী বলেন, ‘দীর্ঘদিন অ্যানেসথেসিয়া ও সার্জারি ডাক্তার না থাকায় অপারেশন হচ্ছে না। অ্যানেসথেসিয়া, সার্জারি ডাক্তারসহ যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলো সমাধান হলে আমরা অতিদ্রুত অপারেশন শুরু করতে পারব। আমার এখানে যোগদান করা প্রায় তিন বছর হলো। এই তিন বছরে মাত্র একটি সিজারিয়ান অপারেশন হয়েছে গত বছরের অক্টোবর মাসে।’ তিনি বলেন, ‘আর এক্স-রে মেশিন যিনি চালাতেন, তিনি গত ২০ ফেব্রুয়ারি অবসরে গেছেন। এরপর থেকে এক্স-রে কার্যক্রম বন্ধ আছে। আশা করছি, অতিদ্রুত সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তা ছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অন্য কোনো সমস্যা নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত