Ajker Patrika

ঘর দেওয়ার নামে প্রতারণা

সুমন পারভেজ, বাঘারপাড়া (যশোর) 
আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২১, ১১: ২৩
ঘর দেওয়ার নামে প্রতারণা

যশোরের বাঘারপাড়ায় সরকারি ঘর পাইয়ে দেওয়ার নামে একটি বেসরকারি সংগঠনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে।

আবেদন ফরম বাবদ টাকা আদায় করা হয়েছে—এমন পাঁচটি পরিবার মিলে সংগঠনটির বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।

ইউএনওর কার্যালয় থেকে সেই অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাঘারপাড়া থানায় পাঠানো হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া আফরোজ স্বাক্ষরিত চিঠির অনুলিপি যশোর জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ‘খ’ সার্কেলের কার্যালয়ে পাঠানো হয়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, মুজিব বর্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঘর দেওয়ার উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ করতে এবং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে প্রতারক চক্র এই টাকা আদায়ের কাজ করছে। গ্রামীণ জনগণের কাছ থেকে এভাবে টাকা আদায় সম্পূর্ণ বেআইনি ও অবৈধ।

ইউএনওর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত সংগঠনটির নাম শহীদ সামছুর রহমান সমাজকল্যাণ পরিষদ। উপজেলার পাকেরালী এলাকার জাহিদুল ইসলামসহ পাঁচজন মিলে ইউএনও বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন। ১৬ আগস্ট এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে চিঠি পাঠানো হয় ইউএনওর কার্যালয় থেকে।

অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, ঘর দেওয়ার কথা বলে টাকা নেওয়া শহীদ সামছুর রহমান সমাজকল্যাণ পরিষদের বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে নিবন্ধন রয়েছে। যার নম্বর যশোর-১২৬ / ৮৯। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় যশোরের অভয়নগর উপজেলার হিদিয়া এলাকায়। বাঘারপাড়ায় কর্মী হিসেবে পৌরসভার পরাজিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী ও যুব মহিলা লীগের সদস্য গোলাপি খাতুন কাজ করছেন। তিনি ওই সংগঠনের আবেদন ফরমের মাধ্যমে গৃহহীনদের ঘর দেওয়ার কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে নেন। এমন আটটি পরিবারের তথ্য জানা গেছে, যাঁরা প্রতারিত হয়েছেন।

প্রতারণার শিকার উপজেলার পাকেরালী এলাকার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি ঘর দেওয়ার জন্য শহীদ সামছুর রহমান সমাজকল্যাণ পরিষদের কর্মীরা আবেদন করতে বলেন। সেখানে আমিসহ আমার এলাকার অসহায় পাঁচ ব্যক্তি আবেদন করি।’

জাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আবেদন খরচ বাবদ আমরা প্রথম দফায় ৩০০ করে ১ হাজার ৫০০ টাকা দিয়েছি। দ্বিতীয় দফায় প্রত্যেকের কাছ থেকে ৪০০ করে আরও ২ হাজার টাকা দিয়েছি। এসব টাকা নিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত পুকুরিয়াভিটা এলাকার শিউলী খাতুন নামে এক ব্যক্তি। তাঁরা বলেছেন, আগামী মাসের মধ্যে সবাইকে ঘর দেওয়া হবে।’

জাহিদুল ইসলাম জানান, তাঁর মতো এমন প্রতারিত হয়েছে উপজেলার পাকেরালী গ্রামের আরও চার ব্যক্তি। তাঁরা হলেন লিটন হোসেন, শাহাদৎ মোল্যা, বদর মোল্যা ও ফরিদা বেগম।
অন্যদিকে পুকুরিয়াভিটা এলাকার শিউলী খাতুন, আবু হানিফ ও রুমিচা বেগমও প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

অভিযোগ আনা শিউলী খাতুন বলেন, ‘গোলাপি খাতুনের কাছে টাকা দেওয়া হয়েছে। তিনিই গৃহহীনদের ঘরের ব্যবস্থা করে দেবেন বলে নিশ্চিত করেছেন। আমিও ঘর পাওয়ার জন্য আবেদন করেছি।’

অভিযুক্ত শহীদ সামছুর রহমান সমাজকল্যাণ পরিষদে কর্মরত গোলাপি খাতুনের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ঘর দেওয়ার নাম করে কারও কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়নি। সব কাগজপত্র আমার কাছে আছে, পারলে দেখে যেতে পারেন।’

শহীদ সামছুর রহমান সমাজকল্যাণ পরিষদের নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রহমান বলেন, ‘বাঘারপাড়া উপজেলা সদরে গোলাপি খাতুন নামে একজন আমাদের কাজ করেন। আমাদের প্যাডে আবেদন করলে ঢাকা থেকে গৃহহীনদের ঘর এনে দেওয়া হয়।’

এ সময় ঘর দেওয়ার নামে টাকা আত্মসাতের প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা ধরেননি।

বাঘারপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ উদ্দীন ইউএনওর দপ্তর থেকে চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া আফরোজ বলেন, ‘প্রতারণার ঘটনাটি তদন্তে ওসিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। জেলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও প্রতারণার কথা জানানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত