Ajker Patrika

কুয়েটে অচলাবস্থা: গাড়ি ফেরত পাঠালেন ভিসি, অনাস্থা ঘোষণা শিক্ষক সমিতির

খুলনা প্রতিনিধি
কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. হযরত আলী। ছবি: সংগৃহীত
কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. হযরত আলী। ছবি: সংগৃহীত

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. হযরত আলী কুয়েটের যে গাড়িতে চড়ে ঢাকায় গিয়েছেন, সেই গাড়ি ফেরত পাঠিয়েছেন। ফলে তিনি আর ক্যাম্পাসে ফিরছেন না বলে মনে করা হচ্ছে। অপরদিকে অন্তর্বর্তীকালীন ভিসি অধ্যাপক ড. হযরত আলীর পদত্যাগের এক দফা ঘোষণাসহ তাঁর প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেছে কুয়েট শিক্ষক সমিতি। আজ বুধবার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. ফারুক হোসেন দাবি করেন, কুয়েটের যে গাড়িতে ভিসি ঢাকায় গেছেন, সেটি ফেরত পাঠিয়েছেন। রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিত দিয়ে ভিসি তাঁর দায়িত্ব পালনে অপারগতার কথা জানিয়েছেন।

গত তিন দিন ধরে উপাচার্যবিহীন অবস্থায় রয়েছে কুয়েট। শিক্ষকদের আন্দোলন ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকেরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

আজ বুধবার জরুরি সভা শেষে সাংবাদিক সম্মেলন করে কুয়েটের শিক্ষক সমিতি। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ বুধবার জরুরি সভা শেষে সাংবাদিক সম্মেলন করে কুয়েটের শিক্ষক সমিতি। ছবি: আজকের পত্রিকা

আজ দুপুরে শিক্ষক সমিতির জরুরি সভা শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে অধ্যাপক ড. হযরত আলীর পদত্যাগের দাবিসহ তাঁর প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, ‘কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন ভিসি দায়িত্ব পালনে অক্ষম। কুয়েটের যে গাড়িতে তিনি (ভিসি) ঢাকায় গিয়েছেন, সেই গাড়িটি ফেরত পাঠিয়েছেন। রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিত দিয়ে ভিসির দায়িত্ব পালনে অপারগতার কথা জানিয়েছেন। সুতরাং এখন শিক্ষকদের একমাত্র দাবি তাঁর পদত্যাগ। পাশাপাশি একজন যোগ্য ভিসি নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক’।

কুয়েটের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় শিক্ষক সমিতির ব্যানারে মানববন্ধন করা হবে বলেও জানান ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, এখন শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার দাবি ক্লাস শুরু করা হোক। কিন্তু এমন অবস্থায় অন্তর্বর্তীকালীন ভিসি কাউকে কিছু না জানিয়েই খুলনা ছেড়েছেন। প্রথমে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে সংকট সমাধানের দাবি জানানো হয়। এরপর পরপর দুদিন ২৪ ঘণ্টা করে ৪৮ ঘণ্টার সময় দিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকেরা। কিন্তু এর মধ্যেই ভিসি কাউকে কিছু না বলে গত সোমবার ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, এ জন্য তৃতীয় দিনের মতো শিক্ষকেরা আজ দুপুরে অবস্থান কর্মসূচি পালন ছাড়াও জরুরি সাধারণ সভা করে ভিসির পদত্যাগের এক দফা ঘোষণা করেছেন। শিক্ষক সমিতির এই নেতা বলেন, যিনি পারবেন তাঁকে এখানে দায়িত্ব দেওয়া হোক। এই মুহূর্তে কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন ভিসির পদত্যাগই একমাত্র দাবি উল্লেখ করে তিনি সরকারের কাছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নতুন ভিসি পদায়নের দাবি জানান।

এদিকে ভিসির লিখিত দিয়ে দায়িত্ব পালনের অপারগতা জানানোর ব্যাপারে রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আনিছুর রহমান ভুঞা কোনো মন্তব্য করেননি। এ ব্যাপারে তাঁর মন্তব্য জানতে আজ মোবাইলে কল দেওয়া হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও মানবিক অনুষদের ডিন এবং গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘গত রোববার রাতে ভিসি স্যার আমাকে মোবাইল ফোনে বলেন যে তিনি ঢাকায় যাবেন। সোমবার সকালে তিনি বলেন, তিনি ঢাকা যাচ্ছেন, পরদিন ফিরবেন। আমি তখন জিজ্ঞেস করি, কাকে দায়িত্ব দিলেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘রূপসা নদী পার হচ্ছি। কাল ফিরব।’’ এদিকে ভিসির গাড়ি ফেরত পাঠানোর প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের যান্ত্রিক শাখায় মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাতে কোনো সাড়া মিলেনি।

এর আগে টানা ৭৫ দিন বন্ধ থাকার পর ৪ মে কুয়েটের ক্লাস শুরুর কথা থাকলেও শিক্ষক লাঞ্ছিতের বিচার চেয়ে শিক্ষকেরা ক্লাস বর্জন করেন। ৫ মে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা শেষে সাত কর্মদিবসের আলটিমেটাম দিয়ে দাবিতে অটল থাকেন শিক্ষকেরা। পক্ষান্তরে ১৮ ফেব্রুয়ারি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ঘটনা ও শিক্ষকদের সঙ্গে সব ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য তিন দফায় ক্ষমা প্রার্থনা করা হয় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরাও দ্রুত ক্লাস শুরুর দাবি জানান। কিন্তু এরই মধ্যে কুয়েট প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরাও ফুঁসে ওঠেন। কিন্তু একপর্যায়ে শিক্ষক আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন শিক্ষার্থীরা অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েন।

সর্বশেষ গত সোমবার ও গতকাল শিক্ষকদের সঙ্গে কুয়েটের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এক হয়ে দ্রুত ক্লাস শুরুর দাবি জানান। কিন্তু গত সোমবার সকালেই খুলনা ত্যাগ করেন অন্তর্বর্তীকালীন ভিসি অধ্যাপক ড. হযরত আলী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শেখ হাসিনাসহ ৩৯৩ জনের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করে নিলেন বিএনপি নেতা

ডিসেম্বরেই নির্বাচন হওয়া উচিত: সেনাপ্রধান

৪ ধরনের শৃঙ্খলাভঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাস্তি চাকরিচ্যুতি

বদলে গেল স্কুল-কলেজের শপথ, বাদ মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা

শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান আটক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত