Ajker Patrika

শালবন উজাড় করে রাস্তা নির্মাণ, এলজিইডির একক সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন

রাতুল মণ্ডল, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
শালবন উজাড় করে রাস্তা নির্মাণ, এলজিইডির একক সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ২০ ধারায় সংরক্ষিত বনের বুক চিরে সড়ক নির্মাণকাজ শুরু করেছে গাজীপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)। পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি না নিয়ে, গাজীপুর জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এবং বন বিভাগকে না জানিয়ে ‘নতুন সড়ক’ নির্মাণকাজ অব্যাহত রেখেছে এলজিইডি।

সড়কটি নির্মাণ করতে গিয়ে কাটা হয়েছে কয়েক হাজার গজারি গাছ (শালকপিচ)। সুরক্ষিত বনে এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটা হয়েছে। এর আগেই নির্মাণাধীন সড়কটির দুই পাশে বনে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে দুষ্কৃতকারীরা ধ্বংস করেছে বিভিন্ন প্রজাতির চারাগাছ। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অগণিত শাল বৃক্ষ। বাস্তুচ্যুত হয়েছে বন্যপ্রাণী। হুমকির মুখে পড়েছে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য। 

নির্মাণাধীন সড়কটির এক কিলোমিটারে মধ্যে আশপাশে কোনো বসতি লক্ষ্য করা যায়নি। এরপরও এই সড়ক নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২২–২৩ অর্থবছরে আইআরআইডিপি–৩–এর আওতায় গাজীপুর শ্রীপুর বীর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারি কলেজের পেছন থেকে পেলাইদ পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার ২০ ধারায় সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে আড়াই কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। দুই কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে সড়কটি নির্মাণের কাজ পায় মেসার্স পূর্ণতা এন্টারপ্রাইজ। গত বছরের ১৯ নভেম্বর গাজীপুর জেলা উন্নয়ন কমিটির সভায় ‘নতুন রাস্তা নির্মাণের আগে যাচাই–বাছাই ও বনের ক্ষতিসাধন করে কোনো রাস্তা নির্মাণ করা যাবে না’ বলে সিদ্ধান্ত হয়। পরে ওই সিদ্ধান্ত জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভার কার্যবিবরণীতে (ক্রমিক নম্বর ৭, খ) অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম।

শ্রীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য বলছে, গত ১২ মার্চ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি ছাড়াই কাঁচা রাস্তা পিচ ঢালাই করতে এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটার কাজ শুরু করা হয়। অথচ নির্মাণাধীন আড়াই কিলোমিটার সড়কটির মধ্যে দেড় কিলোমিটার সংরক্ষিত বনভূমি কাদিম গাজিয়ারন, গাড়ারন ও পটকা মৌজার ৯৪২,১০৬৪ এবং ৪৪৩ সিএস দাগের। ওই তিনটি সিএস দাগ থেকে সৃষ্ট আরএস দাগগুলো হলো, ৪১৯৪, ৪১৯৫,৪১৯৮, ৪৩৬৪,৪২৮৭, ৪৩০৭,৪২৯৭, ৪৩৫৯,৪৩৫৪, ৪৩৫৯ এবং ৪৩৪৭। পরবর্তীতে স্থানীয় রেঞ্জ অফিসের পক্ষ থেকে সড়কটির কাজ বন্ধ রাখতে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিকে জানানো হয়। সে অনুযায়ী, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক সোহেল মৃধা বনের মধ্যে রাস্তা নির্মাণ করবেন না—মর্মে শ্রীপুর ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তার কাছে লিখিত দেন। এরপরও গত ১৯ মার্চ শালবন বিনষ্ট করে সড়কটির নির্মাণকাজ অব্যাহত রাখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। 

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স পূর্ণতা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সোহেল মৃধা বলেন, সড়কটি নির্মাণের জন্য বিগত দিনে চারবার দরপত্র আহ্বান করলেও কেউ সাড়া দেয়নি। তিনি আগে থেকে জানতেন না সড়কটি বনভূমির ওপর দিয়ে গেছে। বন বিভাগের সঙ্গে বিরোধে জড়াতে চান না। তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী–এমপি এলজিইডিকে নতুন সড়ক নির্মাণের কথা বললে এলজিইডির হুঁশ থাকে না! অথচ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ঠিকাদারেরা।’ 

 এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গাজীপুর এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘পরবর্তীতে নতুন করে বনে রাস্তা নির্মাণ করতে গেলে বন বিভাগকে আগে থেকে জানানো হবে। বিষয়টি সমাধানের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীকে জানানো হয়েছে।’ 

ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস, এম সাজ্জাদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বনভূমিতে বনায়ন ব্যতীত অন্য কোনো কিছু করার সুযোগ নেই। জাতীয় স্বার্থে প্রয়োজন হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি না নিয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সড়কটি নির্মাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা প্রতিটি দপ্তরে চিঠি দিয়ে অবহিত করেছি। অথচ জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে কার স্বার্থে বনের ভেতর দিয়ে রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা চলছে সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। বনের মধ্যে রাস্তা তৈরি হলে তা বনাঞ্চলের জন্য হুমকি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সুদান হামলা: মিশন যাত্রার ১ মাস ৮ দিনের মাথায় প্রাণ গেল শান্তিরক্ষী মাসুদের, পরিবারে মাতম

নাটোর ও লালপুর প্রতিনিধি 
মাসুদ রানার মৃত্যুর খবরে পরিবারে কান্নার রোল উঠেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাসুদ রানার মৃত্যুর খবরে পরিবারে কান্নার রোল উঠেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশন যাত্রার মাত্র এক মাস আট দিনের মাথায় সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন করপোরাল মাসুদ রানা। তাঁর মৃত্যুর খবরে নাটোরের লালপুরের বাড়িতে এখন কান্নার রোল উঠেছে।

গতকাল শনিবার সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিক বেসে সন্ত্রাসী ড্রোন হামলায় ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হন। নিহত শান্তিরক্ষীদের মধ্যে মাসুদ রানাও রয়েছেন।

মাসুদ রানা নাটোরের লালপুর উপজেলার আড়বাব ইউনিয়নের বোয়ালিয়াপাড়া গ্রামের মৃত সাহার উদ্দিনের ছেলে। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। তাঁর ছোট দুই ভাই মনিরুল ইসলাম জনি ও রনি আহমেদও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত।

মাসুদের শোকে তাঁর স্ত্রী আসমাউল হুসনা আঁখি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এই দম্পতির আট বছরের মেয়ে আছে। আঁখি বলেন, ‘আমার মেয়েকে এতিম করে সে চলে গেল। বাকি জীবন আমরা কীভাবে কাটাব? গতকালও (শনিবার) আমাদের সঙ্গে সে কথা বলেছিল। আজ সে নেই, ভাবতে পারছি না।’

ছেলের মৃত্যুর খবরে মা মর্জিনা খাতুন (৫৫) বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার তিন সন্তান সেনাবাহিনীতে। এক সন্তান দেশের জন্য প্রাণ দিল। আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না। সরকার যেন আমার সন্তানের বিধবা স্ত্রী ও এতিম মেয়ের কথা ভাবে। আমাদের আর কেউ নাই।’

প্রতিবেশীরা জানান, মাসুদ রানা ছিলেন শান্ত ও মিশুক স্বভাবের মানুষ। পরিবারের সুখের স্বপ্ন নিয়ে তিনি শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়েছিলেন।

লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জুলহাস হোসেন সৌরভ বলেন, নিহত মাসুদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। দ্রুত এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

এদিকে আজ রোববার বিকেলে নাটোর আর্মি স্টেডিয়ামের সেনাক্যাম্পের কমান্ডার মেজর মো. নাজমুল আলম আবীর নিহত শান্তিরক্ষী মাসুদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি বলেন, শহীদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রয়োজনীয় সব কার্যক্রম চলমান রয়েছে। একই সঙ্গে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কুমিল্লায় শিশুখাদ্যে নিষিদ্ধ রং ব্যবহার, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

কুমিল্লা প্রতিনিধি
কুমিল্লায় শিশুখাদ্যে নিষিদ্ধ রং ব্যবহার, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

কুমিল্লা নগরীর পাথুরিয়া এলাকায় বেকারি পণ্য ও শিশুখাদ্য প্রস্তুতকারী একটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত পরিচালিত অভিযানে ওজনে কম দেওয়া, শিশুখাদ্যে নিষিদ্ধ রং ব্যবহার, পোড়া তেল দিয়ে শিশুখাদ্য ভাজা এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য সংরক্ষণ ও প্রস্তুতের অভিযোগে ‘আরব বেকারি’কে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯-এর বিভিন্ন ধারায় এ জরিমানা করা হয়।

অভিযানকালে দেখা গেছে, পার্টি কেকের ক্ষেত্রে প্রতি দুই পাউন্ডে প্রায় ৭০ গ্রাম কম দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া শিশুখাদ্য প্রস্তুতে নিষিদ্ধ রং ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের একাধিক প্রমাণ পাওয়া যায়।

অভিযানে নেতৃত্ব দেন ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কুমিল্লার সহকারী পরিচালক মো. কাউছার মিয়া। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নমুনা সংগ্রহকারী মো. সাকিব। অভিযানে কুমিল্লা জেলা পুলিশের একটি দল সহযোগিতা করে।

ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কুমিল্লার সহকারী পরিচালক মো. কাউছার মিয়া বলেন, অভিযানে জরিমানার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটিকে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করা হয়। জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাড্ডায় যাত্রীবাহী বাসে আগুন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাসে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। ছবি: সংগৃহীত
বাসে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর বাড্ডায় একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট কাজ করছে।

আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাত ৮টা ৩৫ মিনিটের দিকে অছিম পরিবহনের মিরপুরগামী একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়ার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।

ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার মো. শাজাহান শিকদার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে।

প্রত্যক্ষদর্শী শামীম জানান, উত্তর বাড্ডার এএমজেড হাসপাতালের সামনের সড়কে বাসটিতে আগুন দেওয়া হয়।

বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিরুল ইসলাম বলেন, কারা বাসে আগুন দিয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে যাচ্ছে এবং বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।

এর আগে, গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ৮টার দিকে বাড্ডার গুদারাঘাট এলাকায় একটি চলন্ত যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। সে সময় ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘চিকিৎসা না পেয়ে’ গর্ভের সন্তানের মৃত্যু: চট্টগ্রামে ৪ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৫৭
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের । ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের । ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা অবহেলায় এক নারীর গর্ভের সন্তানের মৃত্যুর অভিযোগে চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা সাত্তারের আদালতে ভুক্তভোগী নারী নাসরিন আক্তার মামলার আরজি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সিরাজুন নূর, হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) মো. নুরুল হক, পরিচালক (মেডিকেল অ্যাফেয়ার্স) এ এফ এম আশরাফুল করিম এবং ডেপুটি ডিরেক্টর (অ্যাডমিন-আইসিইউ) মো. আবু সাইদ চৌধুরী।

বাদীপক্ষের আইনজীবী রিগ্যান আচার্য্য জানান, মামলার আবেদনের পর আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন এবং মামলাটি তদন্তের জন্য ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) আদেশ দেন। আদালত আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন।

মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ সকালে প্রসবব্যথা নিয়ে নাসরিন আক্তারকে চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন তাঁর গর্ভকাল ছিল ৩৭ সপ্তাহ। আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট অনুযায়ী গর্ভস্থ সন্তান সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল। ভর্তির পর রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলেও কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সরা তাৎক্ষণিক জরুরি চিকিৎসা দেননি বলে অভিযোগ করা হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোগীকে চিকিৎসা না দিয়ে রেখে দেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা। রোগীর স্বজনদের ভাষ্য অনুযায়ী, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হলেও আলট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়, এমন অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করা হয়।

অভিযোগে আরও বলা হয়, দীর্ঘ সময় লেবার রুমে ফেলে রাখার কারণে রোগীর রক্তক্ষরণ বেড়ে যায় এবং অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটে। পরে একজন সিনিয়র কনসালট্যান্ট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে জরুরি অস্ত্রোপচারের নির্দেশ দেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ওই নারী মৃত সন্তান প্রসব করেন। পরে রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে মায়ের প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব হয়।

বাদীপক্ষের দাবি, সময়মতো সঠিক ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হলে গর্ভস্থ শিশুটিকে বাঁচানো যেত। ঘটনার পর দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জানানো হলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি; বরং বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয় এবং ভুক্তভোগী পরিবারকে দীর্ঘদিন অপেক্ষায় রাখা হয়।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক মো. নুরুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মামলার বিষয়টি জানলাম। তবে ওই রোগীর কাগজপত্র না দেখে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত