Ajker Patrika

গ্যাসের সংকট চরমে, শিল্প উৎপাদন বন্ধের উপক্রম

  • উচ্চমূল্য দিয়েও সারা দিনে দুই-তিন ঘণ্টাও প্রয়োজন অনুযায়ী গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না।
  • কারখানা চালু রাখতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দিহান মালিকেরা।
  • সকাল ৬টার পর গ্যাসের সরবরাহ আশঙ্কাজনকভাবে কমে কারখানা বন্ধ হয়ে যায়।
মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, গাজীপুর 
আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৯: ৩৩
গ্যাসের সংকট চরমে, শিল্প উৎপাদন বন্ধের উপক্রম

গাজীপুর জেলা ও মহানগরী এলাকার বিভিন্ন শিল্পকারখানায় গ্যাসের সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এতে প্রভাব পড়েছে উৎপাদনে। বিশেষ করে পোশাকশিল্পসংশ্লিষ্ট কারখানাগুলোতে উৎপাদন প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এমন অবস্থায় ভবিষ্যতে শ্রমিকদের বেতন, ব্যাংকের সুদ ইত্যাদি পরিশোধ করে কারখানা চালু রাখতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দিহান কারখানা মালিকেরা। তাঁরা বলছেন, একদিকে মার্কিন শুল্ক আরোপ, অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশের আন্তর্জাতিক বাজার দখলের চেষ্টা এবং দেশীয় পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের জ্বালানিনীতি এই শিল্পকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

গাজীপুরের কালিয়াকৈরের সাদমা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সহসভাপতি নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা এখন নানামুখী সংকট মোকাবিলা করছি। রপ্তানির ক্ষেত্রে আমেরিকা যখন পালটা শুল্ক আরোপ করল, ঠিক তখনই সরকার দেশের জ্বালানিনীতি পরিবর্তন করে গ্যাসের দাম বাড়াল। অন্যদিকে দাম বাড়ালেও গ্যাসের চাপ ও সরবরাহ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। এতে উৎপাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে।’

ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন আরও বলেন, ‘রাত ৮-৯টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কোনো রকমে কারখানা চালু রাখা হলেও সকাল ৬টার পর গ্যাসের চাপ এবং সরবরাহ আশঙ্কাজনকভাবে কমে কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। আমার উৎপাদন দৈনিক ৬০ টন থেকে কমে ১০ টনে নেমে এসেছে।’ তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের সুদ ও কিস্তি পরিশোধ এবং শ্রমিকদের বেতন ও অন্যান্য খরচ কোনোভাবেই থেমে থাকবে না। ফলে আগামী দিনগুলোয় এ অবস্থা চলতে থাকলে কীভাবে এসব পরিশোধ করব, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি।’ বিষয়গুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেও সন্তোষজনক কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।

গাজীপুর মহানগরীর তিন সড়ক এলাকার স্প্যারো অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক শাওন ইসলাম বলেন, ‘সরকার আমাদের আবেদন উপেক্ষা করেই শিল্পকারখানায় গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। এখন উচ্চমূল্য দিয়ে সারা দিনে দুই-তিন ঘণ্টাও প্রয়োজন অনুযায়ী গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। এতে তৈরি পোশাকশিল্প-সংশ্লিষ্ট যেসব প্রতিষ্ঠান যেমন—নেট কম্পোজিট, টেক্সটাইল, নিটওয়্যারের অবস্থা খুবই খারাপ।’

শাওন ইসলাম জানান, গত সোমবার থেকে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সরবরাহ প্রায় বন্ধ। ফলে গ্যাসনির্ভর কারখানাগুলোতে উৎপাদনও বন্ধ। তবে অনেকেই গ্যাসের বিকল্প হিসেবে ডিজেল দিয়ে বাধ্য হয়ে কারখানার উৎপাদন চালু রাখার চেষ্টা করছেন। তিনি আরও বলেন, ডিজেল দিয়ে শিল্প উৎপাদন অব্যাহত রাখলে গ্যাসের তুলনায় ৩ গুণ খরচ হয়। উৎপাদনও কম হয়। বর্তমানে দেশের তৈরি পোশাকশিল্প নানামুখী সংকটের বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম এই খাত টিকিয়ে রাখার স্বার্থে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের দ্রুত ও সহানুভূতিশীল কার্যকর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক শাওন বলেন, ‘মার্কিন শুল্কহার আমাদের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। বায়াররা পণ্য নিতেও নানামুখী শর্ত আরোপ করছেন। অনেক সময় আগের দামের চেয়েও ছাড় দিয়ে কম দামে পণ্য রপ্তানি করতে বাধ্য হচ্ছি। তার ওপর প্রতিবেশী দেশের সাম্প্রতিক নীতির পরিবর্তনের কারণে এই শিল্প কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। এর মধ্যে গ্যাসের সংকট আরও কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলেছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়বে।’

গাজীপুরের প্যাসিফিক ফাইবার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু রায়হান বলেন, গ্যাসের সংকট, মূল্যবৃদ্ধিসহ নানামুখী প্রতিকূলতার কারণে জটিল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশের তৈরি পোশাকশিল্প। গ্যাসের সংকটে অনেক কারখানার উৎপাদন প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। অনেকে বিকল্প উপায়ে বেশি খরচ করে উৎপাদন চালু রাখলেও রপ্তানিতে নানা জটিলতার মুখে পড়ছেন।

গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২-এর পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম জানান, গাজীপুরে বিভিন্ন ধরনের নিবন্ধিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ২ হাজার ১৭৬টি। এসবের মধ্যে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত মোট কারখানা আছে ৭৪৩টি। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১২৪টি। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১২৮টি।

তিতাসের গাজীপুর আঞ্চলিক পরিচালন বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী ফারুক জানান, গাজীপুরে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ৬০০-৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। বর্তমানে দৈনিক সর্বোচ্চ ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। সরবরাহ কম থাকায় কোনো কোনো এলাকায় গ্যাসের চাপ কম রয়েছে।

গাজীপুরের বিভিন্ন শিল্পকারখানায় চাহিদা অনুযায়ী নির্ধারিত চাপে গ্যাস সরবরাহ করতে না পারার বিষয়টি স্বীকার করেছেন গাজীপুরের তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির উপমহাব্যবস্থাপক সুরুজ আলম। তিনি বলেন, ‘গাজীপুরে চাহিদার তুলনায় গ্যাস সরবরাহ অনেক কম। সরবরাহ কম থাকায় গ্যাসের চাপও কমে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি জাতীয়ভাবে সমন্বয় করে কীভাবে পরিস্থিতির উন্নতি করা যায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মুন্সিগঞ্জে প্রতিপক্ষের গুলিতে যুবক নিহত

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

মুন্সিগঞ্জের মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের বেহেরকান্দি গ্রামে প্রতিপক্ষের গুলিতে তুহিন দেওয়ান (২২) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। রোববার রাত ১০টার দিকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত তুহিন দেওয়ান মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের দক্ষিণ বেহেরকান্দি এলাকার ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি সেলিম দেওয়ানের ছেলে।মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির বিবদমান দুই গ্রুপের পূর্ববিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে।

এ ঘটনার পর থেকে মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের বেহেরকান্দি ও মুন্সিকান্দি গ্রামের বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। এতে স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিহত তুহিন মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ওয়াহিদ মোল্লা ও বিএনপি নেতা আতিক মল্লিকের অনুসারী।

নিহতের চাচাতো ভাই আকাশ দেওয়ান জানান, রোববার রাতে তুহিন হাঁটার জন্য বাসা থেকে বের হয়। এ সময় মুন্সিকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির নেতা ওজির আলী ও আওলাদ গ্রুপের অনুসারী লিটন ব্যাপারীর নেতৃত্বে পেছন থেকে তুহিনকে লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় ও গুলি করে। এ সময় তুহিন গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। স্থানীয় রাজনৈতিক আধিপত্য নিয়ে তাদের মধ্যে পূর্বের বিরোধ ছিল বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক প্রান্ত সর্দার জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর পিঠে ও ঘাড়ে একাধিক গুলির চিহ্ন রয়েছে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবির জানান, কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তদন্ত করলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাজশাহীতে মৌসুমের প্রথম কুয়াশা: তাপমাত্রা কমে ২০-এর নিচে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
শিশিরভেজা ঘাসে খেলায় মত্ত শিশুরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিশিরভেজা ঘাসে খেলায় মত্ত শিশুরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহীতে নেমে এসেছে এ বছরের প্রথম কুয়াশা। সোমবার (৩ নভেম্বর) ভোর থেকেই রাজশাহী শহর ও আশপাশের উপজেলার গ্রামগুলোর চারপাশ মোড়ানো ছিল ঘন কুয়াশার চাদরে। এই কুয়াশাময় সকাল যেন জানিয়ে দিয়েছে, আসছে শীত, আসছে স্নিগ্ধতার মৌসুম।

শীতের এমন আগমনী ছোঁয়ায় বদলে গেছে প্রকৃতির রূপ। কুয়াশাঢাকা সকাল জানিয়ে দিচ্ছে, শীত আর বেশি দূরে নয়। এদিন ভোরের আলো ফুটলেও মহাসড়কে যানবাহনগুলোকে চলতে দেখা যায় হেডলাইট জ্বালিয়ে। কুয়াশা ভেদ করে গন্তব্যের পথে ছুটে যায় মানুষ।

এদিকে গ্রামের মাঠে শিশিরভেজা ঘাসে খেলায় মত্ত শিশুরা যেন প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে ওঠে। মাকড়সার জালে ঝুলে থাকা শিশিরবিন্দু আর ধূসর আকাশে সূর্যের মিটিমিটি আলো মিলেমিশে সৃষ্টি করে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।

মাকড়সার জালে ঝুলে থাকা শিশিরবিন্দু আর ধূসর আকাশে সূর্যের মিটিমিটি আলো। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাকড়সার জালে ঝুলে থাকা শিশিরবিন্দু আর ধূসর আকাশে সূর্যের মিটিমিটি আলো। ছবি: আজকের পত্রিকা

শহরের রেলগেট এলাকায় কাজের সন্ধানে আসা শ্রমিক আবদুল জব্বার বলেন, ‘আজকের সকালেই এবার প্রথমবার শীত টের পেলাম। এখন থেকে হয়তো শীত বাড়বে।’

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন জানান, সোমবার ভোরে রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন রোববার ভোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ২৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এখন থেকে তাপমাত্রা কমবে বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২ বছরেই ফাটল বিদ্যালয়ের ২ কোটি টাকার ভবনে, নিম্নমানের কাজের অভিযোগ

চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) সংবাদদাতা
চিরিরবন্দরের বানিয়াখাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন বিল্ডিংয়ের বারান্দা, মেঝে ও দেয়ালে ফাটল। ছবি: আজকের পত্রিকা
চিরিরবন্দরের বানিয়াখাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন বিল্ডিংয়ের বারান্দা, মেঝে ও দেয়ালে ফাটল। ছবি: আজকের পত্রিকা

দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের বানিয়াখাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনে ক্লাস চালুর দুই বছর পার হতে না হতেই ফাটল দেখা দিয়েছে। প্রায় দুই কোটি দুই লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ভবনের বারান্দা, সিঁড়ি, মেঝে ও দেয়ালে ফাটল ধরায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন অভিভাবকেরা।

চিরিরবন্দর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র জানায়, উপজেলার ভিয়াইল ইউনিয়নের বানিয়াখাড়ী সরকারি বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণে ২০২১-২২ অর্থবছরে দুই কোটি দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়।

নিম্নমানের কাজের অভিযোগ এনে স্থানীয় অভিভাবক মোস্তাফিজুর রহমান এবং বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় দুই বছরের মধ্যেই বিল্ডিংয়ের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। নির্মাণকাজের সময় আমরা মৌখিকভাবে ইঞ্জিনিয়ারকে অভিযোগ করেছিলাম, কিন্তু তিনি আমাদের কথায় কোনো গুরুত্ব দেননি।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুফিয়া খাতুন বলেন, ‘নতুন ভবনে ক্লাস চালুর দুই বছর ঘুরতে না ঘুরতেই নিচতলার সিঁড়ির বারান্দায় বড় ফাটল ধরেছে। এ ছাড়া শ্রেণিকক্ষের মেঝে ও পিলারের সঙ্গে দেয়ালেও ফাটল দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানোর পর তিনি এসে ছবি তুলে নিয়ে গেছেন।’

চিরিরবন্দরের বানিয়াখাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন বিল্ডিংয়ের বারান্দা, মেঝে ও দেয়ালে ফাটল। ছবি: আজকের পত্রিকা
চিরিরবন্দরের বানিয়াখাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন বিল্ডিংয়ের বারান্দা, মেঝে ও দেয়ালে ফাটল। ছবি: আজকের পত্রিকা

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মিনারা খাতুন বলেন, ‘নতুন বিল্ডিংয়ের দুই বছর এখনো হয়নি, তাতেই মেঝেসহ অনেক জায়গায় ফাটল ধরেছে। আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি এবং তারা দ্রুত মেরামত করার জন্য আশ্বাস দিয়েছে।’

এ বিষয়ে ঠিকাদার আবেদ আলী মাস্টার বলেন, ‘বিল্ডিং হস্তান্তর করার প্রায় দুই বছর হয়েছে। মেঝেতে শুধু পলেস্তারায় “চিড়” ধরেছে, তেমন কোনো সমস্যা নেই। আমি আমার ম্যানেজারকে পাঠিয়ে দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করব।’

এলজিইডির চিরিরবন্দর উপজেলা প্রকৌশলী মাসুদার রহমান একই সুরে বলেন, ‘বিল্ডিংয়ের মেঝে ও সিঁড়ির কিছু অংশে কেবল পলেস্তারার ওপরে ফাটল বা চিড় ধরেছে। আমি ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত মেরামতের জন্য বলব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নেত্রকোনার সীমান্ত গ্রাম ভবানীপুর: পাকা রাস্তা-সেতুর অভাবে চরম দুর্ভোগ

দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি 
ঝুঁকিপূর্ণ কাঠ-বাঁশের সাঁকোই ভবানীপুরের বাসিন্দাদের ভরসা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঝুঁকিপূর্ণ কাঠ-বাঁশের সাঁকোই ভবানীপুরের বাসিন্দাদের ভরসা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় ভারত সীমান্তঘেঁষা গ্রাম ভবানীপুর। স্বাধীনতার অর্ধশতক পেরিয়ে আজও এই জনপদ পিছিয়ে আছে অন্ধকারে। এখানকার কয়েক হাজার মানুষের জীবন যেন দুর্গম যাতায়াতে আটকা—নেই কোনো পাকা সড়ক, নেই স্থায়ী সেতু। ভাঙা মাটির রাস্তা আর ঝুঁকিপূর্ণ কাঠ-বাঁশের সাঁকোই তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। দুই চাকার বাইসাইকেল বা মোটরসাইকেল ছাড়া এই গ্রামে অন্য কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে পারে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী আনা থেকে শুরু করে গর্ভবতী নারী বা রোগীকে জরুরি মুহূর্তে হাসপাতালে নিতেও চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়।

গ্রামের একমাত্র সেতুটি ২০১৪ সালের দিকে ভেঙে যাওয়ার পর কাঠ-বাঁশের সেতুই এখন একমাত্র ভরসা। উন্নয়ন যেন এখানকার মানুষের কাছে সোনার হরিণ। কবে মিলবে স্থায়ী সেতু ও পাকা রাস্তা জানেন না কেউই।

স্থানীয় বাসিন্দা সজীব মিয়া বলেন, ‘যুগের পর যুগ কেটে গেলেও আমরা উন্নয়নবঞ্চিত। স্বাধীনতার পর থেকে এ গ্রামে কোনো দিন পাকা রাস্তা বা স্থায়ী সেতু হয়নি। গ্রামের দুটি সেতুর মধ্যে একটি কাঠ-বাঁশের আর অন্যটি পাকা হলেও সেটিও সড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে। নিজেদের স্বেচ্ছাশ্রমেই পথ মেরামত করে যাতায়াত করছি।’

দুই চাকার বাইসাইকেল বা মোটরসাইকেল ছাড়া এই গ্রামে অন্য কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে পারে না। ছবি: আজকের পত্রিকা
দুই চাকার বাইসাইকেল বা মোটরসাইকেল ছাড়া এই গ্রামে অন্য কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে পারে না। ছবি: আজকের পত্রিকা

আরেক বাসিন্দা সামছু মিয়া জানান, গর্ভবতী নারী বা রোগীকে জরুরি মুহূর্তে হাসপাতালে নিতে নদীপথই ভরসা। কৃষিজাত পণ্যও বাজারে নেওয়া কষ্টসাধ্য।

স্কুলশিক্ষার্থী মুর্শিদা আক্তার বলে, ‘প্রতিদিন কাঁচা রাস্তায় কয়েক কিলোমিটার হাঁটতে হয় স্কুলে যেতে। বর্ষায় কাদা-জলে ভিজে স্কুলে পৌঁছানোই দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। ফলে পড়ালেখায় মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায়। আমাদের দাবি পাকা রাস্তা ও সেতু নির্মাণ করা হোক।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা আফসানা বলেন, ‘গ্রামটি দেখেছি। মানুষ সত্যিই কষ্টে আছে। ভবানীপুরের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হবে। শিগগিরই যাতে গ্রামের মানুষ যাতায়াত সুবিধা ভোগ করতে পারে, সে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত