Ajker Patrika

বিদ্যুৎ বিল বকেয়া: কিশোরগঞ্জের দুই হাসপাতালের সংযোগ বিচ্ছিন্ন, ভোগান্তিতে রোগী

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি ও ভৈরব সংবাদদাতা
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

১ কোটি ১ লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। এতে তিন ঘণ্টা বন্ধ ছিল হাসপাতালের সব কার্যক্রম। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়ে সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনেরা। আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা ১০ মিনিট পর্যন্ত হাসপাতালে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে।

এদিকে জেলার ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৪০ লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। এতে হাসপাতালটির রোগীরা চরম দুর্ভোগে পড়ে। বিদ্যুৎ না থাকায় পানি সরবরাহ, পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। চার ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ-সংযোগ চালু হয়।

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা জানান, সকাল থেকে হাসপাতালে বিদ্যুৎ ছিল না। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে সেবা তো দূরের কথা, তাঁরা উল্টো অসুস্থ হয়ে পড়েন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। দুপুরের দিকে বিদ্যুৎ-সংযোগ এলে ভোগান্তি লাঘব হয়।

হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা সেলিম, রানা, ফারুক, হান্নানসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, চিকিৎসক রোগনির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়েছেন, কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় হাসপাতালে তা করানোর কোনো সুযোগ ছিল না।

চিকিৎসা নিতে আসা রোগী রাকিব, আফতাব, শহীদুল্লাহ, মানিক বলেন, ‘চিকিৎসক রক্তের কয়েকটি পরীক্ষা দিয়েছেন, কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকার কারণে হাসপাতালে করাতে পারিনি। বেশি টাকা খরচ করে বাইরে থেকে পরীক্ষা করাতে হয়েছে।’

এ বিষয়ে কথা বলতে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হেলিশ রঞ্জন সরকারকে মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি তা ধরেননি।

কিশোরগঞ্জ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুর রউফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হাসপাতালের আট মাসের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে; যার পরিমাণ ১ কোটি ১ লাখ টাকা। সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই সকাল ৯টায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। পরে লিখিতভাবে বিল পরিশোধের আশ্বাস দিলে দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে পুনরায় সংযোগ দেওয়া হয়।’

এদিকে ৪০ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ সংযোগ বন্ধ বিচ্ছিন্ন রাখে।

স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, ভৈরব বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের আওতায় ১০০ শয্যাবিশিষ্ট ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া হাসপাতালটির আওতাধীন বিশেষায়িত ট্রমা সেন্টারেও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিল পরিশোধ না করায় ৪০ লাখ টাকা বকেয়া পড়ে। ফলে দফায় দফায় বকেয়া বিল পরিশোধে নোটিশ দেয় বিদ্যুৎ অফিস। বিল পরিশোধের আশ্বাস দিলে চার ঘণ্টা পর পুনরায় বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া হয়।

ভৈরব বিদ্যুৎ বিক্রি ও বিতরণ কেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী মো. শামসুল আলম বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দফায় দফায় বকেয়া বিল পরিশোধের নোটিশ দেওয়া হলেও তারা বিল পরিশোধ করছে না। সে জন্যই সকালে হাসপাতালের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। পরে স্বাস্থ্য বিভাগের ডিজি (মহাপরিচালক) মহোদয়ের বিল প্রদানের আশ্বাসে পুনরায় বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া হয়।

ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. আব্দুল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই সকাল ৯টায় বিল বকেয়া থাকায় হাসপাতালে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। এতে ভোগান্তিতে পড়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শতাধিক রোগী। চার ঘণ্টা হাসপাতালে বিদ্যুৎ-সংযোগ না থাকায় হাসপাতালের সব কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

আব্দুল করিম আরও বলেন, হাসপাতালটি ১০০ শয্যার হলেও বরাদ্দ আসে ৫০ শয্যার। কিন্তু বিদ্যুৎ বিল আসে ১০০ শয্যার। ফলে আর্থিক সংকট দেখা দেয়। এ কারণে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়েছে। পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় বিদ্যুতের বিল দেওয়া যাচ্ছে না। হাসপাতালে বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্নের বিষয়টি ডিজি মহোদয়কে জানানো হলে তিনি বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে কথা বলে পুনরায় সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত