Ajker Patrika

মালেকা বেগমদের ৭ ঘণ্টার অপেক্ষা, তবুও মেলে না ওএমএসের পণ্য

মান্ডি ডি কস্তা, ঢাকা
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ২০: ২৬
মালেকা বেগমদের ৭ ঘণ্টার অপেক্ষা, তবুও মেলে না ওএমএসের পণ্য

মালেকা বেগমের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল তখন বেলা ১২টা পার হয়ে গেছে। ভোর ৫টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। তা একেবারে বিনা মূল্যে পণ্য নিতে এসেছেন তাও নয়। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য সরকারের দেওয়া ভর্তুকি মূল্যে ৩০ টাকা কেজিতে ৫ কেজি চাল ও ২৪ টাকা কেজিতে ৩ কেজি আটা কেনার জন্য দাঁড়িয়েছেন। ৭ ঘণ্টা পার হওয়ার পরও চাল ও আটা হাতে পাননি। সুতরাং অপেক্ষার পালা তখনো শেষ হয় না। তাঁর স্বামী বিজি প্রেসের সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। ৯ হাজার টাকার পেনশনের আয় দিয়ে হিসাব মেলানো দায়। তিন সদস্যের পরিবারে টেনেটুনে চালাচ্ছেন।

পাশেই ইয়াসমিন কিবরিয়াও লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন ৫ ঘণ্টার বেশি। স্বামী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে যা পান বাসা ভাড়া দিয়ে থাকে মাত্র ২ হাজার টাকা। দুই মেয়ে মাস্টার্স করছেন, পাশাপাশি টিউশনিও করেন দুজনে। মেয়েদের ও স্বামীর আয়ে সংসারের হিসাব মেলাতে হয়। সময় আর লাইনে দাঁড়ানোর বিনিময়ে কিছুটা অর্থও যদি সাশ্রয় হয় সে হিসাবও করতে হয়। এই ওএমএস এর দোকানে অসংখ্য মানুষ এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। সপ্তাহে দুই দিন এই আটা ও চাল বিক্রি হয়। খাদ্য মন্ত্রণালয় এই খোলা বাজারে খাদ্যপণ্য বিক্রি বা ওএমএস কার্যক্রম পরিচালনা করছে। 

তবে এই কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে মালেকা বেগম, ইয়াসমিন কিবরিয়াসহ লাইনে দাঁড়ানো প্রত্যেকেরই অভিযোগ বিস্তর। তারা বলেন, ‘যদি কার্ড করে মাসে একবার করে এই চাল ও আটা দেওয়া হতো তাহলে তাদের এত ভোগান্তি পোহাতে হতো না, সময়ও নষ্ট হতো না। লাইনে দাঁড়ানো অনেকে আবার বাসাবাড়িতে কাজ করেন। ফলে মাসে তিন চারবার লাইনে দাঁড়ানো তাদের পক্ষে সম্ভবও হয় না।’ 

অন্যদিকে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ট্রেড করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য মাসে কার্ডের মাধ্যমে পরিবার ২ লিটার তেল, ২ কেজি ডাল, ১ কেজি চিনি ও সরবরাহ থাকলে ২ কেজি পেঁয়াজ দিচ্ছে। এখানে অবশ্য ভোগান্তি নেই। যাদের কার্ড আছে যখনই পণ্য আসে তারা কার্ড দেখিয়ে নিয়ে যান। এ মাসের টিসিবির পণ্য অবশ্য এখনো ডিলারদের কাছে এসে পৌঁছায়নি। তবে টিসিবির কার্ড আবার নিম্ন ও স্বল্প আয়ের সব মানুষ পাননি। চাহিদার তুলনায় এই সংখ্যা একেবারেই কম। 

সপ্তাহে দুই দিন এই আটা ও চাল বিক্রি হয়মালিবাগের শান্তিবাগ এলাকার ডিলার রেজাউল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের এই এলাকায় ডিলার আছি ৬ জন। কার্ড আছে মাত্র সাড়ে তিন হাজারের মতো। এই এলাকায় নিম্ন আয়ের হাজার হাজার মানুষ এখনো কার্ড পাননি। অনেকেই আমাদের কাছে আসেন একটা পাওয়া যাবে কিনা। এদের মধ্যে অনেকের অবস্থা এতই খারাপ যে আজকে খাওয়ার পর কাল কি খাবেন সেটা জানেন না। আমরা কমিশনারকে বলেছি যাতে আরও কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়। নতুন করে আরও কয়েক হাজার কার্ড আসার কথা ছিল কিন্তু এখনো আসেনি।’ 

এদিকে, খাদ্য অধিদপ্তরের সরবরাহ, বণ্টন ও বিপণন বিভাগের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) তপন কুমার দাস আজকের পত্রিকাকে বলেন, খোলা বাজারে পণ্য দেওয়ার মূল কারণ হলো যাতে ভাসমান মানুষসহ যাদেরই প্রয়োজন, তারা সবাই যাতে এটি কিনতে পারেন। গ্রামাঞ্চলে যাদের স্থায়ী ঠিকানা আছে তাদের কার্ডের মাধ্যমে পণ্য দেওয়া হচ্ছে।

তপন কুমার আরও বলেন, যেহেতু চাহিদা বেশি তাই এই কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যাতে আরও বেশি মানুষ এই কর্মসূচির সুবিধা পায়। এ মাসেই ঢাকা শহরে ৫০টি ট্রাকের সঙ্গে আরও নতুন করে ২০টি ট্রাক যোগ করা হয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে প্রতিদিন ৩০ টন চাল ও ২০ টন আটা বিক্রি করা হচ্ছে। আর ওএমএসএর দোকানগুলো তো আছেই। আসন্ন রমজান মাসে আরও ৫০ লাখ পরিবারকে কার্ডের মাধ্যমে পণ্য দেওয়ার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আন্দালিব রহমান পার্থর স্ত্রীকে বিদেশ যেতে বাধা

‘মেয়েরা যেন আমার মরা মুখ না দেখে’, চিরকুট লিখে ঠিকাদারের ‘আত্মহত্যা’

ফরিদপুরে পালিয়ে যাওয়া আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার, থানার ওসিকে বদলি

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় ভারতের উদ্বেগ

সৌদি আরবের সঙ্গে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করে নিজের রেকর্ড ভাঙল যুক্তরাষ্ট্র

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত