Ajker Patrika

নিঃস্ব নূরজাহান, তিতাসের ঘরে নীরব আর্তনাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
নিঃস্ব নূরজাহান, তিতাসের ঘরে নীরব আর্তনাদ

‘কাকা যখন মারা যান, আঁখি নয় মাসের শিশু। ও-ই ছিল কাকির বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। ওকে হারিয়ে কাকি একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেলেন!’ বলছিলেন চিকিৎসায় গাফিলতিতে নবজাতকসহ প্রাণ হারানো মাহবুবা রহমান আঁখির চাচাতো ভাই সাখাওয়াত হোসেন শামীম।

মঙ্গলবার (২০ জুন) দুপুরে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা হয় তাঁর। তিনি জানান, আঁখির বাবা মাহবুবুর রহমান ছিলেন তেজগাঁও থানার এসআই। ১৯৯৯ সালে ডিউটিরত অবস্থায় দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর। আঁখির মা নূরজাহান আক্তার সে সময় তরুণী গৃহবধূ। একমাত্র সন্তান আঁখির কথা ভেবে দ্বিতীয়বার বিয়েও করেননি তিনি। সেই সন্তানও চলে যাওয়ায় নূরজাহান বেগম যেন বেঁচে থাকার ইচ্ছেটুকুই হারিয়ে ফেলেছেন। আঁখির মৃত্যুসংবাদ শোনার পর থেকেই শয্যাশায়ী তিনি। কথা বলার শক্তিটুকুও নেই।

আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী সুমন কুমিল্লার তিতাস উপজেলার বাতাকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। বিবাহিত জীবন মাত্র তিন বছরের হলেও পরিচয় প্রায় এক যুগের। ২০১৫ সালে কুমিল্লা থেকে মাধ্যমিক পাস করার পর ঢাকার মিরপুরের শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন আঁখি। সুমন সে সময় ছিলেন রাজধানী আইডিয়াল কলেজের প্রভাষক।

স্মৃতিচারণ করে সুমন জানান, সে সময় থেকেই আঁখির সঙ্গে তাঁর সখ্য। পরিবারের সম্মতিতে ২০২০ সালের ২৭ মে বিয়ে হয় তাঁদের। তবে ক্লাস-পরীক্ষার কারণে ঢাকাতেই বেশির ভাগ সময় থাকতেন আঁখি। তাই পাকাপাকিভাবে সংসার শুরু করতে কেটে যায় আরও দু’বছর। গত বছর তিতাসে ভাড়া করা ছোট্ট ঘরে সংসার সাজাতে শুরু করেন আঁখি। একটু একটু করে কেনা হচ্ছিল প্রয়োজনীয় সবকিছু। এর মধ্যেই চলছিল বিসিএস, ব্যাংকসহ বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার পড়াশোনা। ঘরকন্না আর চাকরির পড়াশোনা চলছিল সমানতালে।

পরিবারের সদস্য এবং কলেজের সহপাঠীরা জানান, আঁখি ছিলেন যেমন মেধাবী, তেমন পরিপাটি, সংসারী। রান্নাবান্না, ঘর গোছানো সব নিজ হাতে করতে পছন্দ করতেন। মনের মতো করে সাজাচ্ছিলেন নিজের ঘর।

গৃহকর্ত্রীকে হারিয়ে তিতাসের সেই ছোট্ট ঘরে যেন আজ নীরব আর্তনাদ।

ইডেন কলেজে উচ্চতর গণিতে শেষ বর্ষের ছাত্রী ছিলেন আঁখি। সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর। বিসিএস, ব্যাংকসহ বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সন্তানসম্ভবা হওয়ায় খুব ভালো প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও ৪৫ তম বিসিএস প্রিলিমিনারিতে অংশ নিতে পারেননি।

গত ৯ জুন সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দিন পনেরো আগে নবজাতকের জন্য বিছানা, বালিশ, মশারিসহ প্রয়োজনীয় সবকিছুর তালিকা করে স্বামীকে দিয়েছিলেন আঁখি। সুমন জানান, নিউমার্কেট থেকে লিস্টের সবকিছু কিনে এনেছিলেন। নবজাতকের জন্য কাঁথা, জামা-কাপড় সেলাইয়ের কাজও চলছিল। মাত্র সপ্তাহ দু-একের ব্যবধানে সবকিছু যে এভাবে ওলটপালট হয়ে যাবে—চরমতম দুঃস্বপ্নেও এমন সময় আসেনি তাঁর।

 ২৪ বছর আগে কুমিল্লার লাকসামে গাইনের ডহরা গ্রামে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছিলেন আঁখির বাবা মাহবুবুর রহমান। গত সোমবার রাতে সেই কবরের পাশেই সন্তানসহ দাফন করা হয় আঁখিকে। সেই কবরে যেন একই সঙ্গে চাপা পড়ল আঁখি–সুমনের এক যুগ ধরে বুনে চলা সমস্ত স্বপ্ন আর নূরজাহানের বেঁচে থাকার অবলম্বন!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত