Ajker Patrika

অ্যাপসে টাকা পাঠালেই মুনাফার নামে প্রতারণা, চীনা নাগরিকসহ দুই বাংলাদেশি গ্রেপ্তার

নুরুল আমিন হাসান, উত্তরা (ঢাকা)  
গ্রেপ্তার চীনা নাগরিক মি. কুকি, বাংলাদেশি মোর্শেদ আলম ও জামাল উদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
গ্রেপ্তার চীনা নাগরিক মি. কুকি, বাংলাদেশি মোর্শেদ আলম ও জামাল উদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

পজিশন-৫

বাছেদ

ক্যাটা: ঢাকা

ট্যাগ:

মেটা:

ছবি: গ্রেপ্তার

ক্যাপ: গ্রেপ্তার চীনা নাগরিক মি. কুকি, বাংলাদেশি মোর্শেদ আলম ও জামাল উদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘পলারস্টেপ’ নামে একটি অ্যাপসে টাকা পাঠালেই আকর্ষণীয় মুনাফা। প্রথমবার টাকা পাঠানোর পর কথামতো মুনাফা দেয়। কিন্তু পরেরবার লোভে পড়ে বড় অঙ্কের টাকা পাঠালেই আর কোনো টাকা আসেনা। অ্যাকাউন্ট হয়ে যায় লক। এমন প্রতারণার অভিযোগে চীনা নাগরিকসহ দুই বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত রোববার (২২ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১টা থেকে গতকাল সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত উত্তরখানের মাজার বাবুর্চি বাড়ির মোড় এবং গুলশান-১ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিএমপির উত্তরখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউর রহমান মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) আজকের পত্রিকাকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন— চীনের আপআও এর ছেলে মি. কুকি, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার ধন্যপুর গ্রামের মৃত আমির হোসেনের ছেলে মোর্শেদ আলম ও সোনাপুর গ্রামের আলতাফ হোসেনের ছেলে জামাল উদ্দিন। মোর্শেদ ও জামাল বর্তমানের উত্তরখানের মাজার বাবুর্চি বাড়ির মোড়ে বসবাস করেন।

গ্রেপ্তারকালে তাঁদের কাছ থেকে ৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, ৪ হাজার মার্কিন ডলার, ৩০০ ভারতীয় রুপি, ৫ সিঙ্গাপুরি ডলার, ২০০ নেপালি রুপি, ডাচ বাংলা ব্যাংকের ৫০টি চেক, ১টি আইফোন ও দুইটি অনর মোবাইলসহ ৫টি মোবাইল জব্দ করা হয়েছে।

গুলশান থেকে চীনা নাগরিককে গ্রেপ্তার করা উত্তরখান থানার এসআই জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মি. কুকি পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। পরে কৌশলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

ভুক্তভোগী নাহিদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এক নারী আমাকে টেলিগ্রামে কল দিয়ে কাজের অফার দেয়। তারপর একটি টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত করে নেয়। যেখানে ৬০ জন মেম্বার রয়েছে। গ্রুপে থাকা নারী, পুরুষ, যুবক-যুবতীরা টাকা দিয়ে লাভ পাচ্ছে এমন স্ক্রিনশট দেয়। তারপর পরে ওই নারীও আমাকে পলারস্টেপ সফটওয়্যারে (অ্যাপস) কাজ করা জন্য বলে। আমি কাজ শুরু করলে তাঁরা ৮২০ টাকা দেয়। পরে লোভে পড়ে তাদের দেখানো অফারে ২ লাখ টাকা দেই। তখন আর লাভ দেয়নি।’

নাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘কল দিলে তাঁরা বলে, এমন হওয়ার কথা না, আপনি তো ভাগ্যবান, তাই এমন হয়েছে। আপনি আরও ২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা দিলে দ্বিগুণ টাকা ওঠাতে পারবেন। তাঁদের কথায় ফের সেই টাকা দেই। কিন্তু কোনো লাভ না পেয়ে ফের যোগাযোগ করি। আপনার ভাগ্য অনেক ভালো তাই অ্যাকাউন্ট লক হয়েছে। এখন ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিলে লক খুলে যাবে এবং এক সঙ্গে ১২ লাখ টাকা তুলতে পারবেন। আমার কাছে এত টাকা না থাকায় পরিচিত লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করে বুঝতে পারি, আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি।’

এ বিষয়ে উত্তরখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনলাইনে ‘পলারস্টেপ’ নামের একটি অ্যাপসের মাধ্যমে চাকরি প্রলোভন দেখিয়ে ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৩৭৭ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে নাহিদুল ইসলাম নামের এক যুবক অভিযোগ করেন। পরে অভিযোগের ভিত্তিতে মাজারের বাবুর্চি বাড়ির আনাস এন্টারপ্রাইজের মালিক মোর্শেদ আলমকে আটক করা হয়। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই এলাকা থেকে জামাল উদ্দিনকে আটক করা হয়। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গুলশান-১ থেকে চক্রটির মূল হোতা চীনা নাগরিক মি. কুকিকে আটক করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা অনলাইনে চাকরির লোভ দেখিয়ে টাকা আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নাহিদুল বাদী হয়ে আটক হওয়া তিনজনের বিরুদ্ধ একটি মামলা করেন। তাঁদের ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। চক্রের বাকি সদস্যদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।’

ওসি জিয়া বলেন, ‘চীনা ও বাংলাদেশি মিলে গড়ে তুলেছিল একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। চক্রের মূল হোতা চীনা নাগরিক কুকি। তারই সহযোগী হলো মোর্শেদ ও জামাল। মোর্শেদের ডাচ বাংলা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে শুধুমাত্র গত রোববারই (২২ ডিসেম্বর) প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া ৩২ লাখ টাকা যোগ হয়েছে। পরে মোর্শেদ ১০ লাখ টাকা তোলে জামালকে দেওয়ার জন্য। আর জামালের কথায় বাকি টাকা বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করিয়ে দেয়। আর জামালকে এসব অ্যাকাউন্ট নম্বর দিত কুকি।’

তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার হওয়া এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরেই সাধারণ মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও অনলাইনে ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করে আসছিল। যার মধ্যে আমরা দেখেছি, একটি অ্যাকাউন্টে ১ দিনে ৩২ লাখ টাকা এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এরা মানুষের কাছ থেকে আত্মসাৎ করা টাকা বিটকয়েনে রূপান্তর করে বিদেশে পাচার করছিল।’

তিনি বলেন, ‘এমন একাধিক চক্র সারা দেশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। আর টেলিগ্রাম গ্রুপে যারা টাকা পেয়েছি বলে স্ক্রিনশট দেখায়, তাঁরাও প্রতারক চক্রেরই লোকজন। যেন টাকার পাওয়ার স্ক্রিনশট দেখে অন্যরা লোভের ফাঁদে পা ফেলে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত