Ajker Patrika

রূপগঞ্জ ট্র্যাজেডি: ঈদের আনন্দ নেই কিশোরগঞ্জের ২৫টি পরিবারে

মো. শাহজাহান সাজু, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ জুলাই ২০২১, ১৭: ০৬
রূপগঞ্জ ট্র্যাজেডি: ঈদের আনন্দ নেই কিশোরগঞ্জের ২৫টি পরিবারে

করোনাকালেও পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে আনন্দে ভাসছে দেশ-বিদেশের মুসলমানরা। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে কিশোরগঞ্জের নিহত, আহত ও নিখোঁজ ২৫ শ্রমিকদের পরিবারে নেই ঈদের আনন্দ। প্রতিটি পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তাঁরা। ঈদের দিনেও প্রতিটি পরিবারে দেখা গেছে কান্নার রুল। এমন দুর্দিনেও হতাশাগ্রস্ত ২৫ পরিবারের পাশে এগিয়ে আসেননি সরকারি-বেসরকারি কিংবা কোন বিত্তবানরা।

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ মথুরাপাড়া গ্রামের মো. তাহের উদ্দিন ও জামেনার একমাত্র ছেলে নাঈম (১৮)। বাড়িতে মা বাবার সঙ্গে রোজার ঈদের ছুটি কাটিয়ে ঢাকায় ফেরার সময় মাকে বলে গিয়েছিল 'কোরবানির ঈদে তোমার জন্য সুন্দর একটা শাড়ি নিয়ে আসব। আর বাবার জন্য পাঞ্জাবি। চিন্তা করোনা মা, বেতনের টাকা জমিয়ে জমিয়ে বাড়িতে নতুন একটা ঘর বানাব। এই ভাঙা ঘরে আর তোমাদের থাকতে হবে না।'

ঈদের দিনেও ভালো নেই রূপগঞ্জের অগ্নিকাণ্ডে নিহত, আহত ও নিখোঁজ কিশোরগঞ্জের ২৫ শ্রমিকদের পরিবারএমন সুখের স্বপ্ন দেখা নাঈম নিজেই পুড়ে ছাই হয়ে যাবে তা কল্পনা করেননি তাঁর বাবা-মা। ঈদের দিনেও একমাত্র ছেলের ছবি বুকে জড়িয়ে মাতম করছিলেন তাঁরা। তাদের নিদারুণ আর্তনাদে চোখের জল ধরে রাখতে পারছিলেন না প্রতিবেশীরাও। ঈদের দিন নাঈমের পরিবারের মতো একই অবস্থা জুস কারখানার অগ্নিকাণ্ডে নিখোঁজ, হতাহত ও আহত জেলার চারটি উপজেলার ১৫টি গ্রামের ২৫টি পরিবারের।

একই গ্রামের নিখোঁজ রয়েছেন মো. খোকনের স্ত্রী জাহানারা (৩৫)। তাঁর দুই ছেলে জাকির (১৬) ও রাকিব (১০) শোকে নিথর হয়ে মায়ের ছবি নিয়ে বসে আছে ঘরের সামনে। তারা বলেন, 'আমরা এতিম হয়ে গেছি। এখন মায়ের লাশ পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।'

ঈদের দিনেও ভালো নেই রূপগঞ্জের অগ্নিকাণ্ডে নিহত, আহত ও নিখোঁজ কিশোরগঞ্জের ২৫ শ্রমিকদের পরিবারমথুরাপাড়া গ্রামের আব্দুল কাইয়ুমের স্ত্রী পাখিমা (৩৫) কারখানার পাশেই একটি বাসা নিয়ে স্বামী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে থাকতেন। কারখানায় যাওয়ার সময় শেষ দেখা হয় মায়ের সঙ্গে। কিশোরী মেয়েটির কান্না যেন থামছেই না। সে শুধু বলছে, 'আমার আর কীসের ঈদ? আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। মা নেই কিছুই আর নেই।'

ঈদের দিনেও ভালো নেই রূপগঞ্জের অগ্নিকাণ্ডে নিহত, আহত ও নিখোঁজ কিশোরগঞ্জের ২৫ শ্রমিকদের পরিবারএদিকে আগুনের ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া জয়কা ইউনিয়নের কুকিমাদল গ্রামের হারুনর রশিদের স্ত্রী মিনা আক্তারের পরিবারকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ২ লাখ টাকা অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সংসারে উপার্জনক্ষম মানুষকে হারিয়ে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটছে তাঁদের। এখন প্রিয়জনের মরদেহের অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা। ঈদের দিনেও চোখের জলে ভাসছেন তাঁরা।

জানা গেছে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিখোঁজদের মধ্যে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ সদর, করিমগঞ্জ, কটিয়াদী ও মিঠামইন উপজেলার ২১ শ্রমিক রয়েছেন। এ ছাড়া নিহত হয়েছেন এক নারী। আহত হয়েছেন তিনজন। এদের মধ্যে শুধুমাত্র করিমগঞ্জ উপজেলার একই গ্রামের ৩ জনসহ নিখোঁজ রয়েছেন ১০ জন।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ শামীম আলম আজকের পত্রিকাকে জানান, নিখোঁজ ও হতাহতদের পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে। নিহত একজনের পরিবারকে দুই লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। আহত একজনকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নিখোঁজ সকলের পরিবারকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। মরদেহ শনাক্ত ও পরিবারের কাছে হস্তান্তরের পর তাঁদের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত ৮ জুলাই বিকেলে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে কারখানার ৫২ শ্রমিক মারা যান। কিন্তু পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় এখনো তাঁদের নিখোঁজ হিসেবে দেখানো হচ্ছে। ডিএনএ পরীক্ষার পর তাঁদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত