Ajker Patrika

ঢাকা ছাড়ছে মানুষ, ঘাট-স্টেশনে উপচে পড়া ভিড় 

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২১, ১৭: ৫৬
ঢাকা ছাড়ছে মানুষ, ঘাট-স্টেশনে উপচে পড়া ভিড় 

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। বন্ধ হচ্ছে গণপরিবহন। আগামীকাল সোমবার থেকেই সরকারের নতুন নির্দেশনা কার্যকর হবে। 

আজ রোববার দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সাত দিনের নিষেধাজ্ঞার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তবে গতকাল লকডাউনের খবর প্রকাশের পর থেকেই রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছে মানুষ। বাস টার্মিনাল, ট্রেন স্টেশন ও লঞ্চঘাটে ঢল নেমেছে ঘরমুখী মানুষের। সবগুলো পরিবহনেই গাদাগাদি করে উঠছেন তারা। কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না।

গত শনিবার দুপুর এবং আজ সকাল থেকেই গাবতলী বাস টার্মিনাল, কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেল স্টেশন এবং সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে মানুষের প্রচণ্ড ভিড় দেখা গেছে।

আজ সকালে গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, রাজধানী ছাড়তে টার্মিনাল এলাকায় মানুষের ঢল নেমেছে। স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই। বাসের অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখার নির্দেশনা থাকলেও কোথাও মানা হচ্ছে না। বেশিরভাগ যাত্রীর মুখে মাস্ক নেই।   

গাবতলীতে ঘরে ফেরা যাত্রী মইনুল হাসান বলেন, ‘আমার কোনো চাকরি নেই, রাইড শেয়ারিং করে সংসার চালাতাম। কয়েকদিন আগেই রাইড শেয়ারিংয়ে যাত্রী পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। এমন অবস্থায় ঢাকা শহরে বসে থেকে লাভ নাই। যেহেতু সরকার চলাচল আরও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে। তাই পরিবার নিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছি।’    

হানিফ পরিবহনের জেনারেল ম্যানেজার মোশারফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাস বন্ধ হওয়ার সিদ্ধান্তে যাত্রীরা ঘরে ফিরতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আমাদেরও যে কয়টি রুটে গাড়ি চলে সবগুলো গাড়ির টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। কোনো গাড়িতেই সিট ফাঁকা নেই।

হানিফ পরিবহনের এ কর্মকর্তার দাবি, তারা অর্ধেক আসনে যাত্রী পরিবহন করছেন। বাড়তি ভাড়াও রাখা হচ্ছে না। 

ছবি: ফোকাস বাংলাসরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘরে ফিরতে কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেল স্টেশনেও মানুষের ভিড়। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে এমন নির্দেশনা আসার পরও আজ যাত্রীর ব্যাপক চাপ রয়েছে দুটি স্টেশনেই।   

ঘরে ফেরা যাত্রীরা বলছেন, যেহেতু লকডাউন হলেই সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়। কাজকর্ম থাকে না তাই আগেভাগেই গ্রামে চলে যাচ্ছি। সবকিছু বন্ধ রাখার জন্য সরকার এক সপ্তাহের নির্দেশনা জারি করলেও পরে যদি আবার সেটা বাড়ানো হয় তখন আর রাজধানী ছাড়ারও সুযোগ পাবো না। তাই আগেভাগেই চলে যাচ্ছি।

কমলাপুর রেলস্টেশনে দেখা গেছে, স্টেশনে আসা যাত্রীদের নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। স্টেশন কর্তৃপক্ষও নির্দেশনা মানানোর ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। রেলওয়ে পুলিশেরও সংকট রয়েছে। একটি টেম্পারেচার স্ক্যানার দিয়ে একসঙ্গে ৪-৫ জন করে ঢুকে যাচ্ছেন। নেই পর্যাপ্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার।

Komlapur-Rail-Station-3

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) সাদেকুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, লকডাউনে যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধ থাকবে এমন সিদ্ধান্তে হঠাৎ স্টেশনে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। আমরা চেষ্টা করছি স্বাস্থ্যবিধি মেনে ট্রেনের এক সিট ফাঁকা রেখে যাত্রীদের যাওয়া নিশ্চিত করতে। তবে হঠাৎ করেই মানুষের ঘরে ফেরার চাপ বেড়ে যাবে এটা আমরা বুঝতে পারিনি। এক্ষেত্রে আমি যাত্রীদের সচেতনভাবে যাত্রা করার অনুরোধ করেবো। তাছাড়া প্রয়োজন না থাকলে রাজধানী থেকে ঢাকার বাইরে না যাওয়াই ভালো। 

সাদেকুর রহমান আরও বলেন, যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধ রাখার জন্য শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ রেলওয়েল পক্ষ থেকে আমাদের কাছে নির্দেশনা এসেছে। সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। সোমবার থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধ থাকবে, মালবাহী ট্রেন চলাচল করবে। 

ছবি: আজকের পত্রিকা বাস টার্মিনাল এবং ট্রেন স্টেশনের মতই অবস্থা সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। সদরঘাট ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি লঞ্চেই অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে।

সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হচ্ছে লঞ্চে। এক আসন ফাঁকা রেখে বসার কোনো সুযোগ নেই। লঞ্চের ডেকে বিছানা পেতে একসঙ্গে চার-পাঁচজন করে বসে আছেন।

লঞ্চে যাত্রী পরিবহনের সার্বিক বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. বদিউজ্জামান বাদল আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত দুই দিনে সদরঘাট থেকে অন্যান্য দিনের তুলনায় অতিরিক্ত লঞ্চ ছেড়ে গেছে। এর কারণ হলো যাত্রীদের বাড়ি ফেরার চাপ বেড়েছে। লঞ্চ মালিকদের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য যাত্রীদেরকে অনুরোধ করছি। যাত্রীরা সচেতন না হলে, আমাদের কিছু করার নেই। 

sadarghat

এদিক ঢাকা নদীবন্দরের (সদরঘাট) যুগ্ম পরিচালক ট্রাফিক মো. জয়নাল আবেদিন বলেন, আগামী সোমবার সকাল ছয়টা থেকেই সকল রুটের যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে। সেই নির্দেশনা আমরা পেয়েছি। তবে পণ্যবাহী জাহাজ চলবে।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত