Ajker Patrika

যমুনায় ভাঙছে চর বাঘুটিয়া

আব্দুর রাজ্জাক (ঘিওর) মানিকগঞ্জ 
আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০: ২৫
মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার চর বাঘুটিয়া এলাকা বিলীন হওয়ার পথে। ছবি: আজকের পত্রিকা
মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার চর বাঘুটিয়া এলাকা বিলীন হওয়ার পথে। ছবি: আজকের পত্রিকা

মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার দুর্গম চর বাঘুটিয়া এখন যমুনার করালগ্রাসে। নদীর অবিরাম ভাঙনে একের পর এক বসতভিটা, আবাদি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ক্লিনিক—সবকিছু বিলীন হয়ে যাচ্ছে। প্রতিমুহূর্তে ধসে পড়ছে মানুষের বেঁচে থাকার অবলম্বন।

গত দুই মাসেই নদীভাঙনে নিঃস্ব হয়েছে দুই শতাধিক পরিবার। এক যুগ আগেও যেখানে ছিল প্রায় ২৫ হাজার মানুষের আবাস, আজ তা কমে এসেছে মাত্র সাড়ে ১৪ হাজারে। ভিটেমাটি হারিয়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে আত্মীয়ের বাড়িতে, কেউ পথের পাশে, আবার কেউ জীবনের চরম অনিশ্চয়তায় খোলা আকাশের নিচে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, যমুনা নদীতে অপরিকল্পিত ও অব্যাহত ড্রেজিংয়ের কারণে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। চর বাঘুটিয়ার লাগোয়া এলাকাগুলোতে দিন-রাত চলছে বালু উত্তোলন, অথচ প্রশাসনের কোনো কার্যকর নিয়ন্ত্রণ নেই।

স্থানীয় কৃষক শহীন মিয়া বলেন, ‘ড্রেজার বসিয়ে নদীর বুক কেটে ফেলা হচ্ছে, আর সেই স্রোতেই আমাদের ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না।’

নদীর অবিরাম ভাঙনে একের পর এক বসতভিটা, আবাদি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ক্লিনিক—সবকিছু বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
নদীর অবিরাম ভাঙনে একের পর এক বসতভিটা, আবাদি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ক্লিনিক—সবকিছু বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় কৃষক শহিদুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আগে ভাঙন ছিল, কিন্তু এত তীব্র ছিল না। এখন ড্রেজার যেদিক থেকে বালু তোলে, সেদিক দিয়েই আমাদের বাড়িঘর ভেঙে নিয়ে যায়। আমার ৪০ বিঘা জমি ছিল, সব নদীতে চলে গেছে। দুইটা ঘর বানিয়েছিলাম, সেগুলোও নদী খেয়ে ফেলেছে। আমরা গ্রামবাসী একসঙ্গে প্রতিবাদও করেছি, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। সরকার শুধু দেখছে, কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমরা এখন কোথায় যাব, কীভাবে বাঁচব বুঝতে পারছি না।

বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. গোলাম ইয়াছিন জানান, রাহাতপুর এলাকায় বালুমহল ইজারা দেওয়া হয়েছে। ইজারার বাইরে বিশেষ করে পারুরিয়া এলাকায় নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছিল। এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয় জনতা কয়েকটি বাল্কহেড আটকও করেছিল। এ ধরনের বালু উত্তোলনের কারণেই প্রতিবছর নদীভাঙন বাড়ছে। বালু উত্তোলন বন্ধ হলেই ভাঙন কমে যাবে।

নদীর অবিরাম ভাঙনে একের পর এক বসতভিটা, আবাদি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ক্লিনিক—সবকিছু বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
নদীর অবিরাম ভাঙনে একের পর এক বসতভিটা, আবাদি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ক্লিনিক—সবকিছু বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিয়ান নুরেন জানান, নিজভারাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনতলা ভবন সম্পূর্ণরূপে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া, পারুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রংদারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান জরুরি ভিত্তিতে অন্যত্র স্থানান্তরের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মানিকগঞ্জ নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে ভাঙন ঠেকাতে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। তবে চরাঞ্চলে বালু বেশি থাকায় অল্প পানির স্রোতেই ভাঙন শুরু হয়। তাই প্রতিবছরই নতুন করে কাজ করতে হয়।’

তিনি আরও বলেন, নদীপাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোর ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে ১৪ হাজার জিও ব্যাগ ফেলানোর কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এ ছাড়া নদীভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক প্রকল্প গ্রহণের লক্ষ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি চলমান রয়েছে এবং কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত