Ajker Patrika

আদালতে নাইকোর কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণের বর্ণনা দিলেন কানাডীয় দুই পুলিশ কর্মকর্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আদালতে নাইকোর কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণের বর্ণনা দিলেন কানাডীয় দুই পুলিশ কর্মকর্তা

বাংলাদেশে গ্যাসক্ষেত্রে কাজ পেতে কানাডীয় কোম্পানি নাইকো রিসোর্স লিমিটেড ঘুষ লেনদেন করে। আজ সোমবার কানাডীয় দুই পুলিশ কর্মকর্তা বাংলাদেশের আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে এ কথা বলেন।

ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯-এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান কানাডার রয়্যাল মাউন্টেড পুলিশের দুই কর্মকর্তা কেভিন ডুগান ও লিওড স্কোয়েপের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। 

ঢাকার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকে স্থাপিত বিশেষ এজলাসে এই সাক্ষ্য গ্রহণ চলে। প্রথমে সাক্ষ্য দেন লিওড স্কোয়েপ। তাঁকে আসামিপক্ষের জেরা করা শেষ হয়। এরপর সাক্ষ্য দেন কেভিন ডুগান। তাঁকে আসামি সেলিম ভূঁইয়া ও গ্যাস উদ্দিন আল মামুনের পক্ষে জেরা শুরু হওয়ার পর আদালত মুলতবি ঘোষণা করা হয়। আগামীকাল মঙ্গলবার আবার তারিখ ধার্য করা হয়। 

সাক্ষীরা খালেদা জিয়ার নাম না বলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে তাঁর আইনজীবী জেরা করবেন না বলে আদালতকে জানান। খালেদা জিয়ার আইনজীবী জিয়াউদ্দিন জিয়া ও আসামি সেলিম ভূঁইয়ার আইনজীবী জাকারিয়া হায়দার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 
 
এর আগে কানাডার দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য হাজির হতে গত ১৯ অক্টোবর সমান জারি করেন আদালত। দুই দিন আগেই দুই সাক্ষী বাংলাদেশে আসেন সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য। জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান ও মোশারফ হোসেন কাজল দুই সাক্ষীকে নিয়ে সকালে আদালতে যান। এই মামলায় কারাগারে থাকা আসামি গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে আদালতে হাজির করা হয়। খালেদা জিয়ার পক্ষে তাঁর আইনজীবী হাজিরা দাখিল করেন। অন্যরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। 

দুই সাক্ষী আদালতকে বলেন তাঁরা কানাডার ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসেস ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট গ্রুপের এবং রয়্যাল কানাডীয় মাউন্টেড পুলিশের আন্তর্জাতিক দুর্নীতি প্রতিরোধ ইউনিটের সদস্য। তাঁরা কানাডার ফরেন পাবলিক অফিশিয়াল অ্যাক্ট অনুযায়ী নাইকো রিসোর্সের দুর্নীতি তদন্তের সঙ্গে জড়িত থাকার সূত্রে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল ২০১৭ সালের মার্চ মাসে এই মামলায় সাক্ষ্য দিতে অনুরোধ করেন। তাঁরা তখন সাক্ষ্য দিতে সম্মতি প্রকাশ করেন। সেই কারণে আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসেছেন। 

সাক্ষীরা বলেন ২০০৫ সালের জুন মাসে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তৎকালীন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী একেএম মোশারফ হোসেনকে নাইকো রিসোর্স লিমিটেড ঘুষ হিসেবে একটি গাড়ি দেয়। ওই সংবাদের ভিত্তিতে কানাডার আলবার্তার ক্যালগরির আন্তর্জাতিক দুর্নীতি দমন ইউনিট তদন্ত শুরু করে। 

বিষয়টি কানাডার আদালতে উত্থাপিত হলে ২০১১ সালে নাইকো রিসোর্স লিমিটেড দোষ স্বীকার করে। নাইকোকে ৯ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার জরিমানা করা হয়। কানাডার পুলিশের দুর্নীতি দমন ইউনিট তিন বছর তদন্ত করে জানতে পারে নাইকো রিসোর্সের কাছ থেকে বাংলাদেশের কোম্পানি স্ট্রেটাস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের মালিক কাসেম শরীফ ২ দশমিক ৯৩ মিলিয়ন ইউএস ডলার নেন। সেলিম ভূঁইয়ার নির্দেশে কাসেম শরীফ সেখান থেকে ২০ হাজার ইউএস ডলার ফজলে সিদ্দিক নামে একজনকে পাঠান। জামাল শামসি নামে একজনকে ৫৭ হাজার ইউএস ডলার পাঠান। পরে আরও এক লাখ ৩৩ হাজার ইউএস ডলার জামাল শামসিকে পাঠানো হয়। তাঁরা সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে তাঁদের অ্যাকাউন্টে এই টাকা পাঠান। গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ও সেলিম ভূঁইয়া কাশেম শরীফের কোম্পানির পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। তবে শর্ত থাকে কাসেম শরীফ গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের অনুমতি ছাড়া বা তাঁর কথার বাইরে কারও সঙ্গে এই বিষয়ে কথাবার্তা বলতে পারবেন না। তাহলে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে তাঁর ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া হবে। 

গত ১৭ সেপ্টেম্বর এফবিআইয়ের কর্মকর্তা ডেবরা ল্যাপ্রেভোট গ্রিফিত ও কানাডার রয়্যাল মাউন্টেড পুলিশের দুই কর্মকর্তা কেভিন ডুগান ও লিওড স্কোয়েপকে মামলায় সাক্ষ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন আদালত। এদের মধ্যে দুজনের প্রতি সমন জারি করা হয়। অন্য একজনকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য পরবর্তীতে সমন জারি করা হবে বলে দুদকের আইনজীবী জানান। এই তিনজনই নাইকো কেলেঙ্কারি নিয়ে এর আগে তদন্ত করেছেন। 

মামলার বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ শেষ হয় গত ১৭ সেপ্টেম্বর। গত ২৩ মে এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। 

এই মামলার প্রধান আসামি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। অন্য আসামিরা হলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, বাগেরহাটের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ এইচ সেলিম ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ। 

সাবেক মন্ত্রী মওদুদ আহমদ, এ কে এম মোশারফ হোসেন ও বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান মৃত্যুবরণ করায় ইতিপূর্বেই তাঁদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পিটুনিতে নিহত সেই শামীম মোল্লাকে বহিষ্কার করল জাবি প্রশাসন, সমালোচনার ঝড়

১০-১২তম গ্রেডে নিয়োগ: প্রতি পদের বিপরীতে দুজন থাকবেন অপেক্ষমাণ

জনবল-সরঞ্জাম বেশি হলেও সমরশক্তিতে ভারত কি পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে

মধুপুরে বিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষককে জুতাপেটা

র‍্যাবকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার ঠেকাতে হচ্ছে নতুন আইন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত