Ajker Patrika

চাকরির নামে ডেকে নিয়ে অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে টাকা আদায় করত চক্রটি

নুরুল আমিন হাসান, উত্তরা (ঢাকা)  
আপডেট : ০১ জুন ২০২৫, ১৮: ৪৪
গ্রেপ্তার চক্রের সদস্যরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গ্রেপ্তার চক্রের সদস্যরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

টার্গেট নিম্নবিত্ত পরিবারের তরুণী-কিশোরী ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া অসচ্ছল ছাত্রী। ‘বায়িং হাউসে’ চাকরির লোভ দেখিয়ে ডেকে আনা হতো। এরপর মাদক সেবন করিয়ে নগ্ন ছবি-ভিডিও ধারণ করা হতো। সেসব ভিডিও দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করে আদায় করা হতো মোটা অঙ্কের টাকা।

গত বুধবার (২৮ মে) রাতে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে এই চক্রের মূল হোতা মাসুম পারভেজসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পারভেজ মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট। কিন্তু তিনি মুগদা মেডিকেলে বসতেন না। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি কথিত এই বায়িং হাউসে সময় কাটাতেন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন চক্রের মূল হোতা টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার চরশিমলা গ্রামের মাসুম পারভেজ (৩৮), একই উপজেলার ছাতারকান্দি গ্রামের সোলাইমান হোসেন (৩৮), বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রায়েরবাড়ি দেরগতি গ্রামের শফিকুল ইসলাম সৌরভ (২৭), নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার পাংখাচর গ্রামের মেয়েরুলি খানম (১৯) ও শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার পশ্চিম পাগলাজামি গ্রামের মোছা. মায়া (২৫)।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের ওই কথিত বায়িং হাউসটিতে চারটি রুম রয়েছে। যার মধ্যে একটি রুমে ডিজে পার্টি করার জন্য সব ব্যবস্থা রয়েছে। সেই সঙ্গে মাদক সেবন ও যৌন নিপীড়ন করার জন্যও নানা ব্যবস্থা আছে। বাকি কক্ষে আছে লোকদেখানো আসবাবপত্র।

অভিযানকালে চক্রের আস্তানা থেকে ১ কোটি ৪১ লাখ টাকা, ৬০ পিস ইয়াবা, পর্নো ভিডিও ধারণে ব্যবহৃত দুটি হোম সিসিটিভি ক্যামেরা, তিনটি মোবাইল ফোন ও বহু বিদেশি মদের বোতল জব্দ করা হয়।

এক কিশোরীর মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশের অভিযানে ধরা পড়ে এ চক্র। ওই কিশোরীর মা পুলিশের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগের পর গ্রেপ্তার পাঁচজনসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে (ফুসলাইয়া অপহরণ করে আটক রেখে মুক্তিপণ দাবি) মামলা করেন।

মামলার এজাহারে ওই নারী উল্লেখ করেন, ২৬ মে বিকেলে তাঁর মেয়ে ঘুরতে বের হওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হন। পরে বাসায় না ফেরায় দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ফোনে কল করা হলেও ধরেনি, পরে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরদিন দুপুরে ফোন করে টাকা চায়। তাঁর অবস্থান বা টাকা দাবির কারণ জানতে চাইলে বাসা থেকে টাকা নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ফের মোবাইল বন্ধ করে দেন। ২৮ মে গভীর রাতে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি ফোন করে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন এবং টাকা না দিলে মেয়েকে মেরে ফেলার হুমকি দেন। তাঁরা টাকা নিয়ে উত্তরার শহীদ মুনসুর আলী মেডিকেলের সামনে যেতে বলেন। পরে তাঁরা উত্তরা পশ্চিম থানা-পুলিশকে জানালে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই কিশোরীকে উদ্ধার ও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে।

উদ্ধারের পর জিজ্ঞাসাবাদে মেয়েটি জানান, বাসা থেকে বের হওয়ার পর মধুমিতা নামের এক মেয়ে বায়িং হাউসে চাকরি দেওয়ার কথা বলে উত্তরা যেতে বলেন। সেখানে যাওয়ার পর সোহেল নামের এক ব্যক্তি তাঁকে রুমে ডেকে নিয়ে উলঙ্গ করে দৃশ্য ধারণ করেন এবং বলেন, ব্যবসার কাজে লাগবে। পরে সেসব ছবি ও ভিডিও দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। টাকা না দিলে এসব ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেন তাঁরা। সেই সঙ্গে তাঁকে একটি রুমে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়।

অপরদিকে মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করা ও ইয়াবা জব্দের ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু সাঈদ বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা করেন।

পর্নোগ্রাফি আইনে করা মামলার এজাহারে আবু সাঈদ জানান, আসামি মাসুম পারভেজ, সোলাইমান হোসেন ও শফিকুল ইসলাম সৌরভের মোবাইল ফোন থেকে ভুক্তভোগী ওই কিশোরীসহ বহু মেয়ের অশ্লীল ভিডিও ধারণ করা রয়েছে। এসব ভিডিও দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করে তাঁরা টাকা আদায় করতেন। এভাবে আদায় করা ১ কোটি ৪১ লাখ টাকাও তাঁদের হেফাজত থেকে জব্দ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরাও তা স্বীকার করেছেন।

অপরদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, তরুণীদের ধারণ করা পর্নো ভিডিও চড়া মূল্যে বিদেশি বিভিন্ন পর্নো সাইটে বিক্রি করা হতো।

এ বিষয়ে ডিএমপির উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, চক্রটির পাঁচজন সদস্য মিলে একটি কথিত বায়িং হাউস দেন। তাঁদের ছিল একটি নারী সিন্ডিকেট। নারীরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্রী ও নিম্নবিত্ত পরিবারের তরুণীদের পার্ট টাইম চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ডেকে নিয়ে আসতেন। সেখানে নিয়ে এসে উচ্চ বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে চক্রটি বলত, তাঁদের বিদেশি বায়ারদের ফেস করতে হবে। এর জন্য ফিগার দেখাতে হবে। তারপর নগ্ন করে তাঁদের ছবি ও ভিডিও ধারণ করা হতো। তাঁদের মদ-ইয়াবা সেবন করাত। আবার সেই দৃশ্যও ধারণ করে রাখা হতো।

চক্রটির কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওসি হাফিজ বলেন, প্রায় দেড় বছর ধরে চক্রটি বায়িং হাউসের আড়ালে এমন কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল। চক্রটিতে মোট আটজন সদস্য রয়েছেন। যার মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পলাতক তিনজনকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

ওসি হাফিজ বলেন, বায়িং হাউসের অন্তরালে গড়ে তোলা হয়েছিল পতিতালয়। কোনো তরুণী সেখান থেকে চলে যেতে চাইলে তখন তাঁকে সেসব নগ্ন ছবি-ভিডিও দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করে নোংরা কাজে বাধ্য করা হতো। অন্যথায় তাঁর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিত। আর যেসব তরুণী বাধ্য হয়ে সেখানে থাকতেন, তাঁদের দিয়ে করানো হতো পতিতাবৃত্তি।

ভুক্তভোগীর সংখ্যা ও ধারণ করা ভিডিও প্রসঙ্গ জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা হাফিজ বলেন, ‘তাদের হেফাজত থেকে শত শত কিশোর-তরুণীর নগ্ন ছবি ও ভিডিও পেয়েছি। যা দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে ধারণা করছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছি। আগামীকাল সোমবার রিমান্ড শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়েছে। রিমান্ড মঞ্জুর হলে আরও বিস্তারিত জানা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আইভী আরও ২ মামলায় গ্রেপ্তার

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। ফাইল ছবি
ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে আরও দুই মামলায় গ্রেপ্তার (শ্যোন অ্যারেস্ট) দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে একটি হত্যা মামলা ও অপরটি পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলা। দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোয় আটকে গেছে তাঁর জামিনপ্রক্রিয়া।

আজ সোমবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী এ তথ্য জানান।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ফতুল্লা থানায় করা একটি হত্যা মামলায় আইভীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। একই সঙ্গে সদর থানায় করা পুলিশের ওপর হামলার মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

এর আগে, গতকাল রোববার (৯ নভেম্বর) সেলিনা হায়াৎ আইভীকে পাঁচটি মামলায় জামিন দেন উচ্চ আদালত। তাঁর আইনজীবী অ্যাডভোকেট আওলাদ হোসেন জানিয়েছিলেন, হত্যা ও হত্যাচেষ্টার পাঁচটি মামলায় তাঁকে জামিন দিয়েছেন উচ্চ আদালত।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৯ মে ভোরে নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ এলাকায় নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় নাসিকের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে। সে সময় তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া চারটি হত্যা ও দুটি হত্যাচেষ্টা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের পদধারী সব জনপ্রতিনিধি এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেলেও নিজ বাড়িতেই অবস্থান করতেন আইভী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ট্রাকের নিচে ঢুকে গেল যাত্রীবাহী সিএনজি অটোরিকশা, নিহত ৩

চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি 
ট্রাকের নিচে দুমড়েমুচড়ে যাওয়া সিএনজি অটোরিকশা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ট্রাকের নিচে দুমড়েমুচড়ে যাওয়া সিএনজি অটোরিকশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ট্রাক-সিএনজিচালিত অটোরিকশা-ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে এক নারীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন। আজ সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার লাকসাম-চৌদ্দগ্রাম আঞ্চলিক সড়কের ফেলনা কাজী বাড়ি ইউটার্নে এ দুর্ঘটনা ঘটে। চৌদ্দগ্রাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হিলাল উদ্দিন আহাম্মেদ আজ সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নিহত ব্যক্তিরা সবাই সিএনজি অটোরিকশার আরোহী। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজনের পরিচয় মিলেছে। তাঁরা হলেন নাঙ্গলকোট উপজেলার মহিশ্বর গ্রামের আবু তৈয়ব (২৬), একই উপজেলার বাঙ্গড্ডার আব্দুর রহিম (২৭), ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক মাহবুবুল হক ও আনোয়ারা বেগম (৪২)। স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় তাঁদের উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে আব্দুর রহিম, আনোয়ারা বেগম, আবু তৈয়বসহ অজ্ঞাতনামা আরও একজনের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, সড়কের ফেলনা কাজী বাড়ির সামনে ইউটার্নে লাকসাম থেকে চৌদ্দগ্রামমুখী একটি ট্রাকের সঙ্গে চৌদ্দগ্রাম থেকে নাঙ্গলকোটগামী একটি সিএনজি অটোরিকশা ও একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষ হয়। এতে সিএনজি অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে ট্রাকের নিচে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই দুজন পুরুষ, একজন নারীসহ তিনজন নিহত হন।

অটোচালক মাহবুবুল হক জানান, ট্রাকটি বেপরোয়া সিএনজি অটোরিকশাটির সঙ্গে ধাক্কা খায়। এ সময় তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সিএনজি অটোরিকশার পেছনে ধাক্কা দেন। চৌদ্দগ্রাম মডেল থানার ওসি হিলাল উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস যায়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজন মারা গেছেন। মৃত ব্যক্তিদের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। ট্রাকের ভেতরে সিএনজিচালিত অটোরিকশাটি ঢুকে যাওয়ায় নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে ১০৯ বছরের কারমাইকেল কলেজ

রংপুর প্রতিনিধি
নানা আয়োজনে ঐতিহ্যবাহী কারমাইকেল কলেজের প্রতিষ্ঠার ১০৯ বছর উদ্‌যাপন। ছবি: আজকের পত্রিকা
নানা আয়োজনে ঐতিহ্যবাহী কারমাইকেল কলেজের প্রতিষ্ঠার ১০৯ বছর উদ্‌যাপন। ছবি: আজকের পত্রিকা

শতবর্ষ পেরিয়েও প্রাণচঞ্চল উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী কারমাইকেল কলেজ। আজ সোমবার নানা আয়োজনে উদ্‌যাপিত হচ্ছে প্রতিষ্ঠার ১০৯ বছর। বেলুন-পায়রায় সেজেছে ক্যাম্পাস, মিলেছেন প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। আলো-রং-সংগীতে মুখর বিদ্যাপীঠ যেন ফিরে পেয়েছে তার সোনালি দিনের গৌরব আর তারুণ্যের উচ্ছ্বাস।

সকাল ১০টায় কলেজের জি এল হোস্টেল মাঠে পতাকা উত্তোলন ও উদ্বোধন করেন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মুহম্মদ রেজাউল হক। পরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, কেক কাটা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মেতে ওঠেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। সভাপতিত্ব করেন অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মোস্তাফিজুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আমজাদ হোসেন, সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. ইসমাইল হোসেন সরকার, সরকারি সিটি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. বোরহান উদ্দিন, কারমাইকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. হাবিবুর রহমান ও কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক প্রফেসর দিলীপ কুমার রায়।

১০৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মো. সাইফুর রহমান জানান, ব্রিটিশ শাসন, পাকিস্তানি শোষণ ও বাংলাদেশ সৃষ্টির আন্দোলন-সংগ্রামসহ নানা প্রেক্ষাপটের সাক্ষী কারমাইকেল কলেজ একটি ইতিহাস। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শত বছরের যে গৌরব ও অর্জন, তা অবিস্মরণীয়। উত্তরের প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ কারমাইকেল কলেজের ১০৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপনে নবীন-প্রবীণ শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে পুরো ক্যাম্পাস।

ড. মো. সাইফুর রহমান আরও জানান, দুদিনের এই আয়োজনের সমাপনী দিনে (১১ নভেম্বর) বাংলাদেশ পুলিশের রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি মো. আমিনুল ইসলাম, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলীসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

নানা আয়োজনে ঐতিহ্যবাহী কারমাইকেল কলেজের প্রতিষ্ঠার ১০৯ বছর উদ্‌যাপন। ছবি: আজকের পত্রিকা
নানা আয়োজনে ঐতিহ্যবাহী কারমাইকেল কলেজের প্রতিষ্ঠার ১০৯ বছর উদ্‌যাপন। ছবি: আজকের পত্রিকা

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ১৯১৬ সালের ১০ নভেম্বর অবিভক্ত বাংলার গভর্নর লর্ড কারমাইকেল কলেজটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরের বছর থেকেই পাঠদান শুরু হয়। উত্তরবঙ্গের প্রাচীনতম এই কলেজ বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত, যেখানে উচ্চমাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যায় পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন।

ইন্দোস্যারানিক শৈলীতে নির্মিত ৬১০ ফুট দীর্ঘ সাদা মূল ভবন, শতবর্ষী বৃক্ষ ‘কাইজেলিয়া’, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্য ‘প্রজন্ম’, প্রাচীন গ্রন্থাগার ও নানা সাংস্কৃতিক সংগঠনে প্রাণবন্ত ক্যাম্পাস যেন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি। এখানে রয়েছে সাতটি আবাসিক হল, আধুনিক অডিটরিয়াম, লাইব্রেরি, মঞ্চ ও নানা সহপাঠক্রমিক সংগঠন।

কারমাইকেল কলেজে পড়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, লেখক আনিসুল হক, জাহানারা ইমাম, সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিন, প্রথম প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমসহ বহু কৃতী ব্যক্তি। স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রাম—সবখানেই কারমাইকেল কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা রেখেছেন অমর ভূমিকা।

তবে ৩৫ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে কারমাইকেল কলেজ ছাত্র সংসদ (কাকসু)। ১৯৯০ সালের পর আর নির্বাচন হয়নি। শিক্ষার্থীরা বলছেন, দীর্ঘবিরতির কারণে গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাবিতে নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির অভিযোগে শিক্ষকের বরখাস্তের দাবি

রাবি প্রতিনিধি  
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি, বডি শেমিং, অনৈতিক প্রস্তাব ও মামলার হুমকির অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তানজিল ভূঁইয়ার স্থায়ী বরখাস্তের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তবে এসব অভিযোগকে ‘বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক’ বলে দাবি করেছেন ওই শিক্ষক।

আজ সোমবার (১০ নভেম্বর) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনে তানজিল ভূঁইয়ার চেম্বারে তালা ঝুলিয়ে দিনব্যাপী বিক্ষোভ ও আন্দোলন করেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ওই শিক্ষক নারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অশালীন মন্তব্য করে আসছেন। পাশাপাশি অনৈতিক প্রস্তাব, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কটু মন্তব্য করার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

তৃতীয় বর্ষের এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, ‘উনি নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে কটু মন্তব্য করেন। যেমন, ‘‘তোমার কোমর তো ভালো দোলে’, ‘‘রাতের রানি’’, ‘‘রাতের গার্ড’’। আমাদের প্রথম ব্যাচ থেকে এখন সপ্তম ব্যাচ পর্যন্ত অনেকে উনার এমন আচরণের শিকার হয়েছেন। আগের এক ঘটনায় উনি শিক্ষার্থীদের মারতে এসেছিলেন, সেই ভিডিওও আছে।’

ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘উনার কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে উনি ওই শিক্ষার্থীদের নম্বর ছড়িয়ে দেন। এমনকি তাঁর তাকানোর ভঙ্গিতেও ভয় লাগে। আমরা ক্লাসে যেতেও এখন ভয় পাচ্ছি। তাই আমরা উনার স্থায়ী বরখাস্ত চাই।’

আরও এক শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ‘তানজিল ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি অশোভন আচরণের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মারতে আসা ও মামলার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তিনি এক সময় নিজের বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে বিয়ে করেন; এরপর তাঁর স্ত্রীও সহপাঠীদের নানা হুমকি দেন। এসব কারণে আমরা বিভাগের পক্ষ থেকে তাঁর স্থায়ী বরখাস্ত দাবি করছি।’

অভিযোগ অস্বীকার করে শিক্ষক তানজিল ভূঁইয়া জানান, তাঁরা যে অভিযোগ করেছেন, এর একটিও সত্য নয়। এগুলো সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক।

তানজিল ভূঁইয়া বলেন, ‘ঘটনার শুরু আমাদের প্রথম ব্যাচের এক নারী শিক্ষার্থীকে কেন্দ্র করে। এক ট্যুরে ওই শিক্ষার্থী মেয়েদের রুমে কয়েকজন ছেলে নিয়ে মাদক সেবন করছিল। আমি গিয়ে বাধা দিই। সেই ঘটনাতেই সে আমার নামে এসব ছড়াচ্ছে। তার পাশাপাশি সিনিয়র কয়েকজন শিক্ষার্থী বিভাগের অন্যদের উসকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে এসব করছে।’

শিক্ষার্থীদের মারমুখী হওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে তানজিল বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, যদি আমার স্ত্রীর কিছু হয়, তাহলে মামলা করব—এর বাইরে কিছু না। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে আমাকে ফাঁসাচ্ছে। যদি প্রমাণ থাকে, তাহলে সেটা সামনে আনুক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত