Ajker Patrika

ঢাকার ১২ ভাগ বাড়িতে এডিস মশা: সমীক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯: ১৮
ঢাকার ১২ ভাগ বাড়িতে এডিস মশা: সমীক্ষা

গত দুই বছরের তুলনায় এ বছর দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কম হলেও একেবারে কম নয়। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। এসব এলাকার ১২ ভাগ বাসাবাড়িতেই এডিস মশার বিস্তার সবচেয়ে বেশি। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের করা যৌথ সমীক্ষায় এই চিত্র উঠে এসেছে। 

আজ বুধবার সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সমীক্ষার তথ্য তুলে ধরেন অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম। 

ডিএনসিসির ৪০টি ওয়ার্ডের ৪৮টি এলাকা এবং ডিএসসিসির ৫৮টি ওয়ার্ডের ৬২টি এলাকাসহ মোট ১১০টি এলাকার ৩ হাজার ১৫০টি বাড়িতে ১১ থেকে ২৩ আগস্ট এই সমীক্ষা চালানো হয়। 

সমীক্ষা তুলে ধরে অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১৩টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৪টি ওয়ার্ড ডেঙ্গুতে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। সমীক্ষা চালানো বাসাগুলোর মধ্যে ২ হাজার ৭৫৮টিতে নেগেটিভ এলেও ৩৯২ টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। শতকরায় যা ১২ দশমিক ৪৫ শতাংশ। মোট পজেটিভ আসা বাড়িগুলোর মধ্যে ১৭৭টি ডিএনসিসির এবং ২১৫টি বাড়ি ডিএসসিসির। 

জরিপে দেখা গেছে, দুই সিটিতে পড়ে থাকা বা ফেলে রাখা ভেজা পাত্রে সবচেয়ে বেশি ২১ দশমিক ৬১ শতাংশ মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ঘর বা ভবনের মেঝে প্লাস্টিকের ড্রাম বা প্লাস্টিকের নানা ধরনের পাত্রেও এই লার্ভা পাওয়া যায়। ঢাকা দক্ষিণ করপোরেশনের ২৬ শতাংশ এ ধরনের পাত্রে ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২২ শতাংশ পাত্রে মশার এই লার্ভা পাওয়া গেছে।

গবেষণায় ১ হাজার ৩৩৭টি ভেজা পাত্র দেখেছিলেন জরিপকারীরা, যার প্রায় ২২ শতাংশে এডিসের লার্ভা মিলেছে। মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে ৮ নম্বর ওয়ার্ড (কমলাপুর ও মতিঝিল), ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড (নবাবপুর ও বংশাল) এবং ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে (ওয়ারী ও নারিন্দা)। 

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘এখনো থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। নিয়মিত বৃষ্টি হলে পানি জমে থাকে, ফলে এডিস মশার জন্ম হয়। ঢাকায় প্রচুর মানুষ ডাব খেয়ে থাকে, এগুলো অনেক সময় পরিষ্কার করা হয় না। এতে এডিস মশার প্রকোপ বাড়ে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ আমাদের কাজ না, আমরা সেবা দিয়ে থাকি। হয়তো সব সময় সবকিছু হয় না, কিন্তু চেষ্টা করা হয়। তবে সবাইকে প্রতিরোধের কাজটা করতে হবে। এর জন্য আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। প্রথম দিকে যদি চিহ্নিত করা যায়, তাহলে চিকিৎসা দেওয়া অনেক সহজ হয় ৷’ 

আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ডাম্পিং স্টেশনগুলোতে নজর দিতে হবে। ২০১৯ সালে যে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছিল, তা বলার মতো নয়। সিটি করপোরেশনকে অনেক দৌড়াতে হয়েছে। এর জন্য আমাদের নিজেদের সচেতনতার বিকল্প নেই। বিশেষ করে আবাসিক এলাকাগুলোর বাগানের ছাদে যাতে পানি না জমে, সেটি কমিউনিটিকে দায়িত্ব দেওয়া উচিত।’ 

এ সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘কোনো মৃত্যুই আমাদের কাম্য নয়। অধিকাংশ রোগী ভর্তির প্রয়োজন না হলেও অনেকে হচ্ছেন। কিন্তু পুরো কাজের জন্য জনবল ও অর্থ লাগে। করোনাকালীন যেসব রোগীকে আমরা সেবা দিতে পারিনি, তারা এখন বেশি আসছে। ফলে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়াটা অনেক চ্যালেঞ্জের।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাতীয় নির্বাচনের আগে ব্রাকসু আইন সংশোধন সম্ভব নয়: উপাচার্য

বেরোবি সংবাদদাতা
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শ‌ওকাত আলী। ছবি: সংগৃহীত
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শ‌ওকাত আলী। ছবি: সংগৃহীত

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (ব্রাকসু) আইন জাতীয় নির্বাচনের আগে সংশোধন সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শ‌ওকাত আলী। আজ বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

এর আগে মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলনসহ শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশনের পর গত ২৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় আইনে যুক্ত হয় শিক্ষার্থী সংসদ আইন। কিন্তু গঠনতন্ত্রে নারী শিক্ষার্থীদের সুনির্দিষ্ট কোনো প্রতিনিধিত্বের জায়গা না রাখা; মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক পদ না রাখা এবং অনাস্থা প্রস্তাবের বিধান রাখার প্রতিবাদ জানান একদল শিক্ষার্থী। তাঁরা দ্রুত সময়ের মধ্যে বিধি সংশোধন করে নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার দাবি তোলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শ‌ওকাত আলী সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেছেন—ব্রাকসুর বিধিমালা জাতীয় নির্বাচনের আগে সংশোধন করা সম্ভব নয়। এ বছরের মধ্যে নির্বাচন করতে হলে এই বিধিমালাতেই করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চট্টগ্রামের চালিতাতলীতে এবার প্রতিবন্ধী অটোচালককে গুলি

 নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ২১: ৩৬
দুর্বৃত্তের গুলিতে আহত মো. ইদ্রিস। ছবি: সংগৃহীত
দুর্বৃত্তের গুলিতে আহত মো. ইদ্রিস। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের চালিতাতলীতে এবার দুর্বৃত্তের গুলিতে মো. ইদ্রিস নামের এক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি আহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। পরিবারের দাবি, মাদক কারবারে বাধা দেওয়ায় ইদ্রিসকে গুলি করা হয়েছে।

আহত ইদ্রিস পরিবার নিয়ে বহদ্দারহাট এলাকায় থাকেন। তিনি পেশায় একজন অটোরিকশাচালক বলে জানা গেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুরুল আলম আশেক জানান, আহত অবস্থায় একজনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তিনি হাসপাতালের ২ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।

এর আগে একই এলাকায় গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় দুর্বৃত্তের গুলিতে চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহসহ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। পরে সরোয়ার বাবলা নামের একজনের মৃত্যু হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এক মঞ্চে মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপির দুই নেতা, আন্দোলনের ঘোষণা

পাবনা ও চাটমোহর প্রতিনিধি 
স্থানীয় প্রার্থীর দাবিতে একসঙ্গে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনের ঘোষণা দেন মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপির দুই নেতা। ছবি: আজকের পত্রিকা
স্থানীয় প্রার্থীর দাবিতে একসঙ্গে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনের ঘোষণা দেন মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপির দুই নেতা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিভেদ ভুলে এক মঞ্চে এসে স্থানীয় প্রার্থীর দাবিতে একসঙ্গে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন পাবনা-৩ আসনে মনোনয়নবঞ্চিত দুই নেতা কে এম আনোয়ারুল ইসলাম ও হাসাদুল ইসলাম হীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের পাঠানপাড়া মহল্লায় আনোয়ারুল ইসলামের বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে সাবেক এমপি ও চাটমোহর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কে এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ৩১ দফা বাস্তবায়নে তৎপর। ৭ নভেম্বর উদ্যাপন করতে চাই। দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আপনাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে চাই। চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুরের বিএনপির নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সামনে এগোতে চাই। আপনাদের আহ্বান জানাই, আসুন আগামী ৮ নভেম্বর বালুচর মাঠে একসঙ্গে মিলিত হই।’

চাটমোহর উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব হাসাদুল ইসলাম হীরা বলেন, ‘আমি এবং আনোয়ার চাচা একসঙ্গে মিলিত হয়ে আমরা কর্মসূচি নিয়েছি। ৭ নভেম্বর শুক্রবার, চাটমোহরে সব দোকানপাট বন্ধ থাকে, তাই আমরা পরদিন ৮ নভেম্বর কর্মসূচি দিয়েছি।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হীরা বলেন, ‘আমরা শেষ পর্যন্ত দেখতে চাই, চূড়ান্ত মনোনয়ন পর্যন্ত দেখতে চাই। তারপর আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত সংবাদ সম্মেলন করে আপনাদের জানাব। আমাদের আন্দোলন চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুরের মানুষের স্বার্থে। আমাদের দাবি একটাই, আমরা পাবনা-৩ আসনের স্থানীয় প্রার্থী চাই। চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণা হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। আমরা আশা করব, দলের হাইকমান্ড সার্বিক বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।’

জানা গেছে, পাবনা-৩ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনকে। তাঁর বাড়ি পাবনার সুজানগর উপজেলায়। প্রার্থী হওয়ার পর অবশ্য তিনি চাটমোহরের ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছেন। প্রায় তিন মাস আগে তিনি এখানে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন।

এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে চাটমোহর উপজেলা বিএনপিতে বিভাজন চলছিল। সাবেক এমপি কে এম আনোয়ারুল ইসলাম এবং সাবেক পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান হাসাদুল ইসলাম হীরা আলাদাভাবে নিজেদের কর্মী-সমর্থক নিয়ে দলীয় কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন। দুজনই পাবনা-৩ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। এখন বিভেদ ভুলে দুজন একসঙ্গে আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়ায় উত্তাপ বাড়ছে পাবনা-৩ আসনের ভোটের মাঠে। শুরু হয়েছে নতুন মেরুকরণ। এখন দেখার বিষয় শেষ পর্যন্ত কি হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘চিটাংঅর মইদ্যে সরোয়াইজ্জা মরিব’— ফোনে চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের চেলা রায়হানের হুমকি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ২১: ১৪
চট্টগ্রাম নগরীতে গুলিতে নিহত সরোয়ার হোসেন বাবলার লাশ ময়নাতদন্ত শেষে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বায়েজিদ থানার চালিতাতলী খন্দকারপাড়ায় বাড়িতে নেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
চট্টগ্রাম নগরীতে গুলিতে নিহত সরোয়ার হোসেন বাবলার লাশ ময়নাতদন্ত শেষে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বায়েজিদ থানার চালিতাতলী খন্দকারপাড়ায় বাড়িতে নেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রাম নগরীর চালিতাতলী হাজির পোল এলাকায় বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগের সময় গুলিতে নিহত সরোয়ার হোসেন ওরফে বাবলার (৪৩) লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর লাশ মর্গে নিয়ে ময়নাতদন্ত করা হয়। বিকেলে পরিবারের সদস্যরা বাবলার লাশ নগরের বায়েজিদ বোস্তামীর চালিতাতলী এলাকার খন্দকারপাড়ার বাড়িতে নিয়ে যান।

বাবলার ছোট ভাই মো. আজিজ আজকের পত্রিকাকে জানান, এশার নামাজের পর স্থানীয় ঈদগাহ মাঠে বাবলার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর লাশ দাফন করা হবে।

এর আগে গতকাল বুধবার সন্ধ্যার পর নগরীর চালিতাতলী হাজির পোল এলাকায় চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী ও চান্দগাঁও) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগের সময় পেছন থেকে গুলিতে বাবলার মৃত্যু হয়। তিনি চালিতাতলী এলাকার খন্দকারপাড়ার আবদুল কাদেরের ছেলে।

জানা গেছে, ঘটনার পর ওই এলাকায় দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। এলাকার পরিস্থিতি থমথমে। হত্যার সঙ্গে কারা জড়িত, সে বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি নন। সবার মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। যে দোকানের ভেতরে বাবলাকে গুলি করা হয়েছে, সেটিও বন্ধ রয়েছে।

গতকাল রাতে আবদুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, বাবলাকে গুলি করে হত্যার তিন দিন আগে মোবাইল ফোনে প্রতিপক্ষ চট্টগ্রামের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের সেকেন্ড ইন কমান্ড রায়হান এই হুমকি দিয়েছিলেন। সে সময় ‘তোর সময় শেষ, যা খাওয়ার খেয়ে নে’—এমন হুমকি দেওয়া হয়।

এদিকে সরোয়ার হোসেন বাবলাকে ছয় মাস আগে মোবাইল ফোনে হত্যার হুমকির একটি কলরেকর্ড আজকের পত্রিকার হাতে এসেছে। গত ২২ এপ্রিল রাউজানে যুবদল নেতা মো. ইব্রাহিম হত্যার পর রায়হান এই হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

ইব্রাহিমের চাচা আবদুল হালিমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় রায়হান চট্টগ্রামের ভাষায় বলেছিলেন, ‘চিটাংঅর মধ্যে সরোয়াইজ্জা মরিব’ (চট্টগ্রামের মধ্যে সরোয়ার মরবে)।

বাবলার বাবা আবদুল কাদের জানান, তাঁর ছেলেকে গুলি করে হত্যার আগে দুবার ‘খতম’ করার হুমকি দিয়েছিল প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপ। সাত দিন ও তিন দিন আগে এসব হুমকি এসেছিল। বাবলা এ বিষয়ে সতর্ক থাকলেও একেবারে নিজ এলাকায় ঢুকে এভাবে গুলি করার বিষয়টি তিনি তেমন আমলে নেননি। কারণ, হুমকি এসেছিল মোবাইল ফোনে।

বাবলার ছোট ভাই মো. আজিজ বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে আমার ভাইকে প্রাণে মারার হুমকি দিয়েছিল হত্যাকারীরা। ওরা বলেছিল আমার ভাইয়ের সময় আর এক সপ্তাহ আছে। ওরা একাধিকবার এক সপ্তাহ সময় আছে জানিয়ে হুমকি দিত। হুমকির ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় তারা আমার ভাইকে হত্যা করল।’

আজিজ কাতারপ্রবাসী ছিলেন। দুই বছর আগে দেশে আসেন। এলাকায় নতুন ভবন করার সময় ইট ও বালু সরবরাহের কাজ করেন। এ কারণে সাজ্জাদদের রোষানলে পড়েন তাঁরা। এ ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ শক্তি হিসেবে সাজ্জাদদের সামনে ছিলেন সরোয়ার হোসেন বাবলা।

এদিকে সরোয়ারের বাবা আবদুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, তাঁর ছেলেকে প্রায়ই হুমকি দিতেন বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী, তাঁর সহযোগী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ, মো. রায়হান ও জিশানরা। গতকাল তাঁর বাড়ি থেকে ২০০ থেকে ৩০০ গজ দূরে রাস্তার পাশে দোকানে গণসংযোগ চালান বিএনপি নেতা এরশাদ উল্লাহ। একেবারে বাড়ির পাশে এসে কেউ তাঁকে হত্যা করবে, সে ব্যাপারে সতর্ক ছিলেন না বাবলা। পরিবারের সদস্যরাও তা কল্পনা করেননি।

আবদুল কাদের বলেন, ‘বাড়ির পাশে বায়তুন নুর জামে মসজিদে মাগরিবের নামাজে প্রথম কাতারে এরশাদ উল্লাহ, বাবলা দ্বিতীয় কাতারে ও আমি তৃতীয় কাতারে ছিলাম। নামাজ শেষে বের হওয়ার পরই সাত থেকে আট রাউন্ড গুলি। পরে দেখলাম, আমার ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে। অটোরিকশায় করে হাসপাতালের পথে রওনা দিলাম ছেলেকে কোলে নিয়ে। তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য মাঝপথে রিকশা ছেড়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠে হাসপাতালে যাওয়ার আগেই আমার ছেলে আর নেই।’ পাঞ্জাবি ও লুঙ্গিতে লেগে থাকা ছোপ ছোপ রক্ত নিয়েই কথা বলছিলেন তিনি।

এদিকে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করার সময় মোবাইলে লাইভে ব্যস্ত যুবককে নিয়েও সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। পিস্তল হাতে হামলাকারী যুবক লাইভে থাকা যুবককে ঠেলে সামনে হাত বাড়িয়ে বাবলাকে গুলি করেন।

এ বিষয়ে বাবলার ভাই আজিজকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ভারতে অবস্থানরত সাজ্জাদ (বড় সাজ্জাদ) আমার ভাইকে গুলি করার দৃশ্য দেখতে চেয়েছিল। এটা হয়তো দেখাচ্ছিল ওই যুবক।’

ওই যুবকের পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা ইদ্রিস আলী বলেন, ‘ওই যুবক অতি উৎসাহী হয়ে লাইভ করতে পারেন। তবে তাকে আমরা চিনতে পারছি না।’

গতকাল মাগরিবের নামাজের পর বায়েজিদ বোস্তামী থানার চালিতাতলীর খন্দকারপাড়া এলাকায় নির্বাচনী জনসংযোগ করছিলেন চট্টগ্রাম-৮ আসনের বিএনপির প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ। ‘চালিতাতলীর মাটি, এরশাদ ভাইয়ের ঘাঁটি’—এ ধরনের স্লোগানও চলছিল। একপর্যায়ে লিফলেট বিতরণের জন্য পাশের একটি দোকানে ঢোকেন এরশাদ উল্লাহ। তাঁর সঙ্গে ২০-২৫ জন নেতা-কর্মী ছিলেন। হত্যাকারীরা ওই নেতা-কর্মীদের বহরে ঢুকে মিশে যায়। হঠাৎ গুলির শব্দ। ছত্রভঙ্গ হয়ে যান নেতা-কর্মীরা। খুব কাছ থেকে ঘাড়ের নিচে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করা হয় বাবলাকে। গুলিবিদ্ধ হন এরশাদ উল্লাহসহ চারজন। এরশাদ উল্লাহসহ অন্যরা নগরের বেসরকারি হাসপাতাল এভারকেয়ারে চিকিৎসাধীন। তাঁরা আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন ওই হাসপাতালের জিএম রাম প্রসাদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত