Ajker Patrika

টুঙ্গিপাড়ার দুই ইউনিয়নবাসীর ‘কপাল খুলে দেওয়া’ রাস্তা

টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি
টুঙ্গিপাড়ার দুই ইউনিয়নবাসীর ‘কপাল খুলে দেওয়া’ রাস্তা

বছরের বেশির ভাগ সময় এখানকার জমি জলাবদ্ধ থাকত। এ কারণে এখানে চাষাবাদ হতো না। পানি একটু শুকাতেই বিলে হোগলা জন্মাত। তাই বিস্তীর্ণ এই জায়গার নাম হয় হোগলার বিল। বিলের এপার-ওপারে মাছের ঘেরে নৌকায় চলাচল করতে হতো। কচুরিপানা ঠেলে নৌকায় চলাচলে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগত। তাই বিলের মাঝখানে একটি রাস্তা নির্মাণের বহু বছরের দাবি ছিল দুই ইউনিয়নবাসীর। অবশেষে তাদের সেই দাবি পূরণ হয়েছে।

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে দুটি বর্ণী ও গোপালপুর। এখানে ৫০০ কৃষকের ১ হাজার ২০০ বিঘা জমি নিম্ন জলাভূমি বেষ্টিত। নতুন রাস্তা হওয়ায় তাদের এত দিনের সমস্যা সমাধান হয়েছে। তাতে খুশি এ দুই ইউনিয়নের প্রায় ৫ হাজার মানুষ।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ (কাবিখা) প্রকল্পের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই বিলের মাঝে ১ হাজার ২৬৮ মিটার ইটের রাস্তা নির্মাণ করে দিয়েছে। আর তাতেই ১ হাজার ২০০ বিঘা জমির চিত্র বদলাতে শুরু করেছে। বর্তমানে ওই রাস্তার পাশে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ হয়েছে। বোরো মৌসুমে জমিতে আবাদ শুরু করেছে কৃষক। আশপাশে গড়ে উঠছে বসতবাড়ি। এখন কৃষকেরা সহজেই এখানে চাষাবাদ করে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। রাস্তার সুবাদে বিলের জায়গার দাম বেড়েছে প্রায় ৪ গুণ।

বর্ণী ইউনিয়নের কৃষক ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আগে আমাদের এই বিলে অনেক ধান হতো। কিন্তু গত ২৫ বছর ধরে ১ হাজার ২০০ বিঘা জমি পতিত হয়ে পড়ে ছিল। এখন এই রাস্তা হওয়ায় আমরা দুই ইউনিয়নেই সহজে যাতায়াত করতে পারি। এখানে অনেক ঘরবাড়ি ও মাছের ঘের তৈরি হয়েছে। আর কৃষকেরা আবার জমিতে আবাদ শুরু করেছেন। আমরা কষ্টের ফসল সহজেই ঘরে তুলতে পরব। এ রাস্তা নির্মিত হওয়ায় আমরা খুবই খুশি।’

রাস্তার ধারে বিভিন্ন সবজির চাষ স্থানীয়দের।দক্ষিণ বর্ণী গ্রামের মাছ চাষি মান্নান শেখ বলেন, ‘বিলের ওপারে মিত্রডাঙ্গা গ্রামে আমার একটি মাছের ঘের রয়েছে। কচুরি ঠেলে সেই ঘেরে নৌকা নিয়ে যাতায়াত করতে হতো। তাতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগত এবং খুব পরিশ্রম হতো। উৎপাদিত মাছ বাজারজাত করতে সমস্যা হতো। এখন ঘেরে মোটরসাইকেল, সাইকেল ও ভ্যানে করে যেতে পারি। মাছ ও কৃষিপণ্য সহজে বাজারজাত করতে পারছি। এ রাস্তার জন্য আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে।’

গোপালপুরের মিত্রডাঙ্গা গ্রামের গৌতম মণ্ডল বলেন, ‘এই একটি রাস্তা আমাদের কপাল খুলে দিয়েছে। এখন আমরা জমিতে ও রাস্তার পাশ দিয়ে শাকসবজি আবাদ করতে পারছি। এ ছাড়া মাছের ঘের করতে পারছি। আর রাস্তা দিয়ে সহজেই কষ্টের ফসল বিক্রি করে টাকা উপার্জন করছি। একটি রাস্তা আমাদের কয়েক গ্রামের মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করেছে।’

মিত্রডাঙ্গা গ্রামের আরেক কৃষক শক্তিপদ কীর্তনীয়া বলেন, ‘এই রাস্তার কারণে গত এক বছরে অনেক বসতবাড়ি গড়ে উঠেছে। আগে এখানে এক বিঘা জমি (৫২ শতাংশ) বিক্রি হতো মাত্র ৬-৭ লাখ টাকায়। এখন এক বিঘা জমি ২৫-৩০ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই রাস্তায় আমাদের মতো কৃষকের খুব উপকার হয়েছে।’

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, গোপালপুর ও বর্ণী ইউনিয়নের ১ হাজার ২০০ বিঘা জমি জলাবদ্ধতার কারণে অনাবাদি হিসেবে পড়ে ছিল। পাঁচ গ্রামের মানুষের এখানে চলাচলের একমাত্র ভরসা ছিল নৌকা। তাই তাদের দুঃখ লাঘবে কাবিখা প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথমে মাটির রাস্তা করে দেওয়া হয়। এখানে কৃষক ৩ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন করতে পারছে। সহজেই কৃষক তাদের উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে পারছে। এ রাস্তা নির্মিত হওয়ায় দুই ইউনিয়নের বিলবেষ্টিত এলাকার ১০ হাজার মানুষ উপকৃত হচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত