Ajker Patrika

আমার সন্তান বেঁচে আছে কি না, আমি জানি না: ইমরান শরিফ

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : ৩১ মে ২০২২, ১৩: ৪৪
আমার সন্তান বেঁচে আছে কি না, আমি জানি না: ইমরান শরিফ

‘দুই মেয়ে ঢাকায় মায়ের কাছে। ৭ বছরের ছোট মেয়েটি কোথায় আছে, কেমন আছে? মা-বাবা ও বোনদের ছাড়া আমার মেয়েটি নিশ্চয় একা ভয়ে আছে এবং অসহায়ত্ব বোধ করছে। বেঁচে আছে কি না, তাও জানি না। এখন আমি কী করব?’ কথাগুলো বলছিলেন জাপান থেকে দুই মেয়েকে নিয়ে দেশে ফেরা বাবা ইমরান শরিফ।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র‍্যাব) মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এভাবেই নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন নিখোঁজ মেয়ের বাবা ইমরান শরিফ।

যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিক ইমরান শরিফ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ঢাকায় আমার দুই মেয়ের সঙ্গে আমি দেখা করতে পারছি না। আর আমার ৭ বছরের ছোট মেয়ে সোনিয়া শরিফের বিষয়ে কিছু জানতে চাইলেও তার মা আমাকে কিছু বলছে না। আসলে সে আমাকে কিছু বলছে না, নাকি সে নিজেও কিছু জানে না তার ছোট মেয়ের বিষয়ে, তাও বুঝতে পারছি না।’

ইমরান শরিফ এ সময় আরও বলেন, ‘আমি শুধু আমার ছোট মেয়েটিকে একবার দেখতে চাই। তার কথা শুনতে চাই। সে কেমন আছে জানতে চাই। একজন বাবা হিসেবে আমার চাওয়াটা নিশ্চয়ই বেশি কিছু নয়। আমার ছোট মেয়েটি নিরাপদে আছে, ভালো আছে, সুস্থ আছে—এই কথাটুকু আমি জানতে চাই। কিন্তু আমাকে কিছুই বলা হচ্ছে না, জানানো হচ্ছে না।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘তারা চাইছেন আমি জাপানে যাই। কিন্তু জাপানের পারিবারিক আইনের ৮৬১ ধারা এবং জিম্মি বিচারব্যবস্থার কারণে সেটিও সম্ভব নয়।’ 

এ সময় জাপানের পারিবারিক আইনের ৮৬১ ধারা এবং জিম্মি বিচারব্যবস্থা প্রসঙ্গে রয়টার্স ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে ইমরান শরিফ বলেন, ‘আমার ছোট মেয়েটির সঙ্গে দেখা করতে আমি জাপানে গেলে দেশটির পারিবারিক আইন অনুসারে সেটি সম্ভব নয়। তার থেকে বড় সম্ভাবনা রয়েছে আমাকে জিম্মি বিচারব্যবস্থার আওতায় সাব জেলে আটকে রেখে জবানবন্দি আদায় করার চেষ্টা হবে, যেখানে এই সাব জেলে আমি তাদের চাওয়া অনুযায়ী জবানবন্দি না দেওয়া পর্যন্ত প্রায় চার বছর বা তার বেশি সময় আমাকে সাব জেলে আটকে রাখার অধিকার রাখে দেশটির পুলিশ।’ 

নিজের ৭ বছরের শিশুর সঙ্গে যোগাযোগের কোনো ব্যবস্থা নেই জানিয়ে ইমরান শরিফ বলেন, ‘তাদের মা ঢাকায় রয়েছে বিগত ১০ মাসের বেশি সময় ধরে। মা-বাবা, বড় দুই বোনকে ছাড়া আমার সন্তানটি কীভাবে আছে? তার কতটা কষ্ট হচ্ছে এটা বাবা হিসেবে আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।’ 

জাপানে বিদেশিদের সন্তানকে ‘হাফু’ বলে সম্বোধন করা হয়। ‘হাফু’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ ‘অর্ধেক’। সেখানে বিদেশি বাবা অথবা মা হলে তাদের সন্তানদের সামাজিকভাবে বৈষম্যের শিকার হতে হয় বলে জানান ইমরান শরিফ। আর এ কারণেই বাবা-মা ও বোনদের ছাড়া তার ছোট সন্তানটিকে নিয়ে শঙ্কিত তিনি। 

উল্লেখ্য, গত বছরের ২১ নভেম্বর বাংলাদেশ হাইকোর্ট তাঁর দুই সন্তানকে ইমরান শরীফের কাছে রাখার আদেশ প্রদান করেন। তবে শর্তে বলা হয়, ইমরান এ পর্যন্ত এরিকোর খরচের জন্য নগদ ১০ লাখ টাকা দেওয়া, প্রতি বছর তিনবার এবং প্রতিবার ১০ দিন বাংলাদেশে এরিকোকে সন্তানদের সঙ্গে একান্ত সময় কাটাতে দেওয়া হবে। সন্তানদের মায়ের বছরে তিনবার বাংলাদেশে যাওয়া-আসা ও ১০ দিন থাকার খরচ ইত্যাদি শরীফ ইমরানকে বহনের নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্য খরচ জাপানি নারী নিজেই বহন করবেন মর্মে রায়ে বলা হয়। মাসে দুবার সন্তানদের সঙ্গে ভিডিও কলে মাকে কথা বলিয়ে দিতে হবে মর্মেও রায়ে বলা হয়। 

গত ১৩ ফেব্রুয়ারির খোলা আদালতের রায় ও ১২ এপ্রিলের লিখিত রায়ের পর থেকে পারিবারিক আদালতে করা মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আপিল বিভাগ বড় দুই মেয়েকে মায়ের কাছে রাখার আদেশ দেন। এরপর থেকে এ দুই মেয়ের সঙ্গে আপিল বিভাগের আদেশ থাকা সত্ত্বেও দেখা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন ইমরান শরিফ। বর্তমানে তাঁর বড় দুই মেয়ে ঢাকায় মায়ের কাছে রয়েছে। 

এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইমরান শরীফের পক্ষে আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোস্তাক আহামেদ ও অ্যাডভোকেট আরেফা পারভীন তাপসী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

যুদ্ধের পর এ যেন এক নতুন ইরান, জনগণের মতো বদলে গেছে সরকারও

তেহরান ওপর থেকে সুন্দর, একদিন যেতে চাই: ইরানে বোমা ফেলা ইসরায়েলি পাইলট

ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা ভাবছেন ট্রাম্প

সাইপ্রাসে বিপুল জমি কিনছে ইসরায়েলিরা, দেশ বেদখলের শঙ্কা রাজনীতিবিদদের

বংশরক্ষায় মৃত ছেলের শুক্রাণু চান মা, সংরক্ষণের নির্দেশ মুম্বাই হাইকোর্টের

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত