Ajker Patrika

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ, সর্বোচ্চ শাস্তি যা হতে পারে 

আশরাফ-উল-আলম, ঢাকা
আপডেট : ১২ জুন ২০২৪, ১৯: ০১
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ, সর্বোচ্চ শাস্তি যা হতে পারে 

প্রতারণার মাধ্যমে গ্রামীণ টেলিকমের লভ্যাংশের ২৫ লাখের বেশি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত।

যেসব ধারায় অভিযোগ রয়েছে, তা প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পিপি মোশারফ হোসেন কাজল।

আজ বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত–৪ এর বিচারক সৈয়দ আরাফাত হোসেন ১৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

এই মামলার অভিযোগপত্রে আসামিদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা হলো— গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলামসহ গ্রামীণ টেলিকমের বোর্ড সদস্যদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালের ৯ মে গ্রামীণ টেলিকমের ১০৮ তম বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখা একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়।

এর আগে ২৭ এপ্রিল কর্মচারীদের পাওনা লভ্যাংশ বিতরণের জন্য গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক ইউনিয়ন ও গ্রামীণ টেলিকমের সঙ্গে সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্ট চুক্তি সই হয়।

দুদক বলছে, গ্রামীণ টেলিকমের বোর্ড সভায় ব্যাংক হিসাব খোলার সিদ্ধান্তের একদিন আগেই ব্যাংক হিসাব খোলা হয় এবং সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্ট এপ্রিলে হলেও, অ্যাগ্রিমেন্টে ৮ মে খোলা ব্যাংক হিসাব দেখানো হয়, যা বাস্তবে অসম্ভব।

ওই বোর্ডসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক মিরপুর শাখা থেকে গ্রামীণ টেলিকমের ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় ১০ মে ৪৩৭ কোটি ১ লাখ ১২ হাজার ৬২১ টাকা স্থানান্তর করা হয়। পরে ২২ জুন গ্রামীণ টেলিকমের ১০৯ তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অতিরিক্ত ১ কোটি ৬৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৯ টাকা দেওয়ার অনুমোদন হয়।

ঢাকা ব্যাংক গুলশান শাখার অ্যাকাউন্ট থেকে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের ডাচ-বাংলা ব্যাংক লোকাল শাখার অ্যাকাউন্টে ১৭ মে ১০ কোটি টাকা, ২৫ মে ১৪ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৩৯১ টাকা এবং ৩০ মে ১ কোটি ৬৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৯ টাকাসহ মোট ২৬ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা স্থানান্তর করা হয়।

কিন্তু কর্মচারীদের লভ্যাংশ বিতরণের আগেই তাদের প্রাপ্য অর্থ তাদের না জানিয়েই সিবিএ নেতা কামরুজ্জামানের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মিরপুর শাখার অ্যাকাউন্টে ২৫ মে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং ২ জুন ৫০ লাখ টাকা স্থানান্তর করা হয়।

গ্রামীণ টেলিকমের সিবিএ নেতা মাইনুল ইসলামের ডাচ-বাংলা ব্যাংক মিরপুর শাখার অ্যাকাউন্টে ২৬ মে ২ কোটি টাকা এবং ২ জুন ১ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়।

গ্রামীণ টেলিকমের সিবিএ নেতা ফিরোজ মাহমুদ হাসানের ডাচ-বাংলা ব্যাংক মিরপুর শাখার অ্যাকাউন্টে ২৬ মে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং ২ জুন ৫০ লাখ টাকা স্থানান্তর করা হয়। আইনজীবী মো. ইউসুফ আলীর কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলনের ধানমন্ডি শাখার অ্যাকাউন্টে ৪ কোটি টাকা এবং সিটি ব্যাংক গুলশান শাখার অ্যাকাউন্টে ৫ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়।

আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী ও জাফরুল হাসান শরীফের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের গুলশান নর্থ শাখায় যৌথ অ্যাকাউন্টে ২৯ মে ৬ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়, যা তাদের প্রাপ্য ছিল না বলে অভিযোগে জানায় দুদক।

অভিযোগে আরও বলা হয়, মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ট্রেড ইউনিয়নের নেতা কামরুল ইসলামের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ২৯ মে চেকের মাধ্যমে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ হিসেবে নেন। আত্মসাতের উদ্দেশ্যে স্থানান্তরিত বাকি ৭২ হাজার টাকা ডাচ-বাংলা ব্যাংকে ফ্রিজ করা আছে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, অ্যাডভোকেট ফি হিসেবে প্রকৃতপক্ষে হস্তান্তরিত হয়েছে মাত্র ১ কোটি টাকা। বাকি ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বোর্ড সদস্যদের সহায়তায় গ্রামীণ টেলিকমের সিবিএ নেতা এবং আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টরা অসৎ উদ্দেশ্যে জাল-জালিয়াতির আশ্রয়ে গ্রামীণ টেলিকম থেকে অর্থ স্থানান্তর করে আত্মসাৎ করেছেন।

মোশারফ হোসেন কাজল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় যদি কোনো ব্যক্তি কোনো সম্পত্তির জিম্মাদার হয়ে বা ওই সম্পত্তির পরিচালনার ভারপ্রাপ্ত হয়ে সেই সম্পত্তি সম্পর্কে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করে, তবে ওই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে অথবা ১০ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অর্থ দণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।

অন্যান্য ধারায়ও যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তির বিধান রয়েছে। এর মধ্যে দণ্ডবিধির ৪৬৭ ধারায় (মূল্যবান দলিল প্রণয়ন করে অর্থ গ্রহণের ক্ষমতা জাল করা) এবং ৪৭১ ধারায় (জাল বলে জেনে জাল দলিলকে প্রকৃত দলিল হিসাবে ব্যবহার করা) যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

আর ৪২০ (প্রতারণা) ধারা, ৪৬৮ ধারায় (প্রতারণার জন্য জালিয়াতি) ও ১০৯ ধারায় (অপরাধে সহায়তা করা) সাত বছরের কারাদণ্ডের বিধান আছে। 

আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪ (২) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি ১২ বছরের কারাদণ্ড ও ৪ (৩) ধারায় দণ্ডিত ব্যক্তির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়ার বিধান রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শিক্ষার্থীদের ‘কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে’ সপরিবারে পালিয়েছেন বিএসবির বাশার

পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে ‘প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের’ নির্দেশ

কাশ্মীরে বিধ্বস্ত বিমানের অংশবিশেষ ফরাসি কোম্পানির তৈরি, হতে পারে রাফাল

সীমান্তে সাদা পতাকা উড়িয়ে আত্মসমর্পণের ইঙ্গিত দিয়েছে ভারত: পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী

পাকিস্তানে হামলায় ‘লোইটারিং মিউনিশনস’ ব্যবহারের দাবি ভারতের, এটি কীভাবে কাজ করে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত