Ajker Patrika

ইতালিযাত্রা: লিবিয়ায় নির্যাতন, ৪৬ লাখ টাকা আদায়, অবশেষে বাড়ি এল সজিবের লাশ

শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
লিবিয়ায় নির্যাতনের শিকার হয়ে নিহত সজিব সরদার। ছবি: সংগৃহীত
লিবিয়ায় নির্যাতনের শিকার হয়ে নিহত সজিব সরদার। ছবি: সংগৃহীত

মাদারীপুরের শিবচরের যুবক সজিব সরদার (২৮)। ইউরোপের দেশ ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে প্রায় আট মাস আগে বাড়ি ছেড়েছিলেন। আজ বুধবার তিনি ঘরে ফিরেছেন, তবে লাশ হয়ে।

পরিবারের ভাষ্য, ইতালি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ায় নিয়ে বন্দী করা হয় সজিবকে। এরপর কয়েক দফা বিভিন্ন চক্রের কাছে বিক্রি, মারধর আর পরিবারের কাছ থেকে আদায় করা হয় টাকা। লিবিয়ার বন্দিশালায় মারধরের ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ছেলের মুক্তির আশায় জায়গা-জমি বিক্রি করে ৪৬ লাখ টাকা দিলেও শেষ রক্ষা হয়নি। নির্যাতনে সজিব মারা যান বলে ২০ মার্চ খবর আসে বাড়িতে।

সজিব শিবচরের নিলখী ইউনিয়নের বাগমারা এলাকার চান মিয়া সরদারের ছোট ছেলে। আজ তাঁর লাশ বাড়ি পৌঁছালে আবার শোকের মাতম ওঠে। তাঁকে হারিয়ে দুই মাসের বেশি সময় ধরে নির্বাক থাকা বাবা-মা-বোন আবার কান্নায় ভেঙে পড়েন।

পরিবারের সদস্য, স্বজন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে গত বছরের অক্টোবরে লিবিয়া পৌঁছান সজিব। মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখাড়া এলাকার দালাল বোরহান ব্যাপারীর মাধ্যমে ১৫ লাখ টাকা চুক্তিতে তাঁকে নেওয়া হয়। কিন্তু লিবিয়া নিয়ে সেখান থেকে ইতালি পাঠানোর কথা বলে তাঁকে অপরাধী চক্রের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। দুই দফা বিক্রি করা হয়। সেখানে মারধর করে দফায় দফায় ৪৬ লাখ টাকা আদায় করে চক্রটি। মারধরের শিকার হয়ে ১৯ মার্চ মারা যান সজীব। পরদিন পরিবারের কাছে মৃত্যুর খবর আসে।

স্বজনেরা জানান, লিবিয়ার এক হাসপাতালের মর্গে ছিল সজিবের লাশ। লাশটি দেশে আনার জন্য পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করেন। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে আজ বুধবার সকালের একটি ফ্লাইটে লাশ বাংলাদেশে আসে।

নিহত সজিব সরদারের স্বজনদের আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকা
নিহত সজিব সরদারের স্বজনদের আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকা

সজিবের চাচাতো ভাই মইনুল হক বলেন, ‘এ ঘটনায় দালালের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়েছে। লাশ বাড়ি আসার পর পোস্টমর্টেম করা হয়েছে। আমাদের দাবি, মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে দালাল চক্র লিবিয়ায় আটকে রেখে সজিবকে মেরে ফেলেছে। আমরা সর্বোচ্চ শাস্তি চাই দালালের।’

নিহত সজিবের বাবা চান মিয়া সরদার বলেন, ‘আমার ছেলেকে ইতালি নেওয়ার কথা বলে বোরহান দালাল লিবিয়া নিয়ে বিক্রি করে দেয়। দফায় দফায় ৪৬ লাখ টাকা নিছে। আমার সহায়-সম্পত্তি গেল, ছেলেও গেল। আজ ছেলের লাশ আসল। এত দিন পর ছেলের মরামুখ দেখলাম।’

সজিবের বোন শামীমা আক্তার বলেন, ‘দালালের নির্যাতনে ভাই মরল। আজ ভাইয়ের লাশ আসল বাড়িতে। এই রকম বাড়িতে আসা তো আমরা চাইনি। বিদেশ থেকে ভাই আসবে, কত আনন্দ হবে আমাদের। অথচ ভাই এল লাশ হয়ে।’

এ বিষয়ে শিবচর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাজাহান মিয়া জানান, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত