Ajker Patrika

প্রচারের অভাবে আড়ালে অনন্য স্থাপত্যশৈলীর ‘ঈশা খাঁ’র মাজার

রিয়াদ হোসাইন, কালীগঞ্জ (গাজীপুর)
আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২২, ১৭: ১১
প্রচারের অভাবে আড়ালে অনন্য স্থাপত্যশৈলীর ‘ঈশা খাঁ’র মাজার

গত বছরের শেষদিকে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের অর্থায়নে লাল সিরামিক ইট দিয়ে প্রাচীন নির্মাণ কৌশল সমৃদ্ধ একটি আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর মাধ্যমে সংস্কার করা হয়েছিল ঈশা খাঁর মাজার। সাড়ে ১৭ ফিট উচ্চতার এবং ২৪ ফিট দৈর্ঘ্য ও প্রস্থবিশিষ্ট সমাধির প্রধান ফটকে রয়েছে ঈশা খাঁর সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত। এমন দারুণ স্থাপত্যশৈলী থাকার পরেও পর্যটকদের নজর কাড়তে পারেনি।

প্রচার হীনতা ও অযত্নের কারণে অনেকটাই অগোচরে থেকে যাচ্ছে ঈশা খাঁর স্তম্ভটি। এক সময়ের দুর্দান্ত দাপুটে এই মহানায়কের মাজারটি এখন লোকচক্ষুর আড়ালে রয়েছে। এমনকি ইতিহাস থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে।

জানা গেছে, ঈশা খাঁ গাজীপুরের কালীগঞ্জের বক্তারপুর, কিশোরগঞ্জের এগারসিন্ধুসহ ২২ পরগনার শাসক ছিলেন। জীবনের শেষ সময়ে এসে বক্তারপুর এলাকায় ঘাঁটিটি স্থাপন করেন তিনি। পরে তিনি মারাত্মকভাবে অসুস্থ হলে আর কোথাও যেতে পারেননি। তাঁর মৃত্যুর পরে এখানেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এ জায়গাটি অযত্নেই পড়েছিল। পরে গত বছরের ডিসেম্বরে তৎকালীন জেলা প্রশাসক এস. এম. তরিকুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে সাবেক কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শিবলী সাদিকের উদ্যোগে ও পরিকল্পনায় উপজেলা প্রশাসনের অর্থায়নের ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ঈশা খাঁ’র আধুনিক সমাধিস্থ নির্মাণ করা হয়।

সেই থেকে ভাবা হয়েছিল সারা দেশে এর ব্যাপক প্রচার এবং প্রসার ঘটবে। কিন্তু পর্যাপ্ত প্রচারের অভাবে আজ তা মুখ থুবড়ে পড়েছে। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বাসযোগ্য কোনো পর্যটন হোটেল-মোটেল না থাকায় এমন দুরবস্থা হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এ বিষয়ে বক্তারপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব মো. লোকমান মোল্লা জানান, তিনি ছোটবেলা থেকেই জেনে এসেছেন এ অঞ্চলে ঈশা খাঁর মাজার রয়েছে। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের তেমন কোনো ব্যবস্থা ছিল না। মাঝে মধ্যে দু’একজনকে ঘুরতে আসতে দেখতেন তিনি।

প্রচার হীনতা ও অযত্নের কারণে অনেকটাই অগোচরে রয়েছে ঈশা খাঁর মাজারস্থানীয় ব্যবসায়ী মো. মাসুম সরকার বলেন, ‘বক্তারপুর গ্রামে ইতিহাসের মহাবীর ঈশা খাঁর মাজার রয়েছে। এটা আমাদের অঞ্চলের মানুষের জন্য অত্যন্ত গর্বের হলেও সারা দেশের মানুষের কাছে এ বিষয়টি অজানাই থেকে গেছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় যদি এর প্রচার এবং প্রসার করা যেত তাহলে এ অঞ্চলটি পর্যটন নগরী হয়ে উঠত। এতে এখানকার সাধারণ মানুষজনের আয়-রোজগারও বাড়ত।’ 

স্থানীয় এক স্কুলশিক্ষক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমাদের গ্রাম বক্তারপুর কালীগঞ্জ সদর থেকে ৫ কিলোমিটার এলাকার ভেতরে অবস্থিত। ঢাকা শহরের খুব সন্নিকটেও বটে। এ গ্রামে রয়েছে পর্যটনের মতো বহু জায়গা। ঈশা খাঁর সমাধিস্থলের পাশাপাশি রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলা ভূমি বিল বেলাই। তবে এ এলাকায় পর্যটকদের জন্য নেই কোনো ভালো হোটেল-মোটেল। তাই এখানে দূরদূরান্ত থেকে পর্যটকেরা আসতে চান না​। এ জন্য সরকারি উদ্যোগে পর্যটকদের জন্য কম খরচে থাকার ব্যবস্থা যদি করা যেত তাহলে পর্যটকেরা এখানে ঘুরতে আসবেন। এতে করে এ অঞ্চলের মানুষজনের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে।’ 

বক্তারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান ফারুক বলেন, ‘ঈশা খাঁ বাস্তব জীবনে একজন বড় মাপের যোদ্ধা এবং শাসক ছিলেন। শেষজীবনে তিনি তাঁর গন্তব্যে যাওয়ার পথে বক্তারপুরে এসে ঘাঁটি স্থাপন করেন। এখানেই মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। পরে এখানেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। এ জন্য আমরা গর্বিত যে, তাঁর মতো একজন বীর শাসক আমাদের মাটিতে ঘুমিয়ে আছেন। এ বিষয়ে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে জানতে হবে। যেহেতু তিনি ইতিহাসের একজন মহানায়ক। তাই তাঁর ব্যাপারে জানাটা আমাদের সন্তানদের জন্য আবশ্যক।’ 

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসসাদিকজামান বলেন, ঈশা খাঁর মাজারকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় তাঁর মাজারের চারপাশে উন্নত স্থাপত্যশৈলীর মাধ্যমে সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি সুরক্ষা দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। অচিরেই প্রচার এবং প্রসারের বিষয়টিও উপজেলা প্রশাসন অবশ্যই দেখবে এবং যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নেবে। 

উল্লেখ্য, প্রখ্যাত ঐতিহাসিক এফ বি ব্রাডলি-বার্ট ১৯০৬ সালে প্রকাশিত ‘দা রোমান্স অফ অ্যান ইস্টার্ন ক্যাপিটাল’ গ্রন্থের ৬২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছে ‘বর্তমান গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বক্তারপুরে ঈশা খাঁ’র কবর অবস্থিত’। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত