Ajker Patrika

বারিধারায় পাড়া উৎসব, শহরে শৈশবের ঘ্রাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ২০: ৪০
বারিধারায় পাড়া উৎসব, শহরে শৈশবের ঘ্রাণ

ইট-পাথরের এই যান্ত্রিক শহরে ব্যস্ততাকে সঙ্গী করে ছুটছে সবাই। একই ভবনের পাশাপাশি ফ্ল্যাটে থেকেও কারও সঙ্গে কারও পরিচয় নেই। ডিজিটাল ডিভাইসে বুঁদ হয়ে থাকা শিশু-কিশোরেরাও হারাচ্ছে তাদের সোনালি শৈশব। বড়দের স্মৃতি রোমন্থন আর ছোটদের শৈশবের স্বাদ দিতে রাজধানীর বারিধারায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল পাড়া উৎসব। 

আজ শুক্রবার বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোনের ৩ নম্বর সড়কে পাড়া উৎসবের আয়োজন করে বারিধারা সোসাইটি, হিরোস ফর অল এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। বেলা ১১টায় শুরু হওয়া এই উৎসব শেষ হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার সময়। এতে বারিধারার বাসিন্দা ছাড়াও দেশি-বিদেশি অনেক দর্শনার্থী অংশ নেন। 
 
বারিধারার এই পাড়া উৎসবে এসে খোশগল্পে মেতেছিলেন ষাটোর্ধ্ব তিন নারী। জাহানারা মন্তাজ, আয়েশা মাজিদ ও রুপা খান। তাঁরা তিনজনই ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে ১৯৭৫ সালে এসএসসি পাস করেছেন। 

সাবেক শিক্ষক রুপা খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উৎসবে এসে বান্ধবীদের সঙ্গে দারুণ সময় পার করছি। আর সোনালি শৈশবের স্মৃতিচারণা করছি। ছোটবেলায় বায়োস্কোপ ও পুতুল নাচ দেখার জন্য উদ্‌গ্রীব হয়ে থাকতাম। এ যুগের শিশু-কিশোরেরা তো এসব দেখেনি, পাড়া উৎসবে তাদের দেখিয়ে শৈশবের গল্প বলতে পারি।’ 

বাবা মোশার‍ফ খানের হাত ধরে উৎসবে এসেছে ছয় বছর বয়সী ছেলে জাহরার খান ফিদেল। বাবা মোশার‍ফ খান বলেন, ‘গ্রামীণ ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে ছেলেকে এই উৎসবে এনেছি।’ 

পাড়া উৎসবে অংশ নেওয়া স্টলের সংখ্যা ৪৫। এতে খাবার, পোশাক, প্রসাধনীসহ বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। একটি স্টলে দর্শনার্থীদের কার্টুন এঁকে দিচ্ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার চার শিক্ষার্থী। তাঁদের একজন কিশোলয় রায় স্বচ্ছ বলেন, ‘সিঙ্গেল ও ফ্যামিলি কার্টুন এঁকে দিচ্ছি। সবাই খুব আগ্রহ নিয়েই আমাদের স্টলে আসছে।’ 

পাড়া উৎসবে অংশ নেয় শিশুরা‘প লাইফ কেয়ার’ স্টল নিয়ে উৎসবে হাজির হয়েছেন প ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ফারজানা আলম শম্পা। তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠানের সেবাগুলো দর্শনার্থীদের কাছে তুলে ধরছেন। ফারজানা বলেন, দূরে কোথাও বেড়াতে গেলে ‘প লাইফ কেয়ারে’ নির্দিষ্ট ফি দিয়ে পালিত কুকুর-বেড়াল রেখে যাওয়া যায়। এ ছাড়া ‘প্যাট আ পেট’ নামে ক্যাফে রয়েছে, যেখানে পোষা পশু নিয়ে খেতে যাওয়া যায়। 

পাড়া উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি দর্শনার্থীদের সঙ্গে নিয়ে দাবা ও ক্যারম বোর্ড খেলায় অংশ নেন। এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক, বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মাসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে নিয়ে উপভোগ করেন লাঠিখেলা, বায়োস্কোপ ও বাউল গান। 

ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘আজকে শুধু গান হবে, ইচ্ছেমতো ফান হবে। আমরা সব সময় ব্যস্ত থাকি আমাদের মোবাইল ফোনে। বাসার ওপরে থাকি, নিচে কে থাকে চিনতে পারি না। পাড়া উৎসবে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করব, একে অন্যকে চিনব।’ 

বারিধারায় এবার তৃতীয়বারের মতো পাড়া উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। উৎসবের সমন্বয়ক রেহনুমা করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ছোটবেলায় আমরা মেলায় অংশ নিতাম। এখন সেসব মেলা আর হয় না। একই পাড়ায় থেকে কারও সঙ্গে কারও যোগাযোগ নেই। অতি যান্ত্রিকতায় শিশু-কিশোরেরা হতাশায় ভুগছে। পরস্পরের মেলবন্ধন বাড়াতে আমরা ২০১৯ সালে প্রথম পাড়া উৎসব করি, দ্বিতীয়বার হয় ২০২২ সালে। আমরা চাই এই উৎসব দেশের আনাচে-কানাচে পাড়ায় পাড়ায় ছড়িয়ে পড়ুক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত