Ajker Patrika

উত্তরায় ডাকাত আতঙ্ক, পাহারায় নির্ঘুম রাত 

উত্তরা (ঢাকা) প্রতিনিধি
উত্তরায় ডাকাত আতঙ্ক, পাহারায় নির্ঘুম রাত 

রাজধানীর উত্তরার উত্তরখান, দক্ষিণখান, তুরাগ, দিয়াবাড়িসহ উত্তরার বিভিন্ন সেক্টরের মসজিদ থেকে গভীর রাতে একযোগে ডাকাত আতঙ্কে মাইকিং। এর পর থেকে পাহারায় নির্ঘুম দুই রাত কেটেছে উত্তরাবাসীর। উত্তরার বিভিন্ন সেক্টর, উত্তরখান, দক্ষিণখান, তুরাগ ও দিয়াবাড়ি এলাকায় গত বুধবার (৭ আগস্ট) ও গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাতে ঘুরে এমন খবর পাওয়া যায়।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরা এলাকায় আব্দুল্লাহপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কে ডাকাত পাহারা ও যানজট নিরসনে ট্রাফিকের কাজ করছেন ছাত্ররা।

এ ছাড়াও উত্তরার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে মোড়েও তাদের একই কার্যক্রম চালাতে দেখা যায়। এসব শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সন্দেহজনক গাড়িগুলো তল্লাশিও বাদ যাচ্ছে না।

শুধু উত্তরার মধ্যেই নয়, উত্তরখান, দক্ষিণখান, তুরাগ ও দিয়াবাড়ির বিভিন্ন অলিগতিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এলাকাবাসীও যুক্ত হয়ে ডাকাত পাহারা দিতে দেখা যায়।

শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাতে ডাকাতির অভিযোগে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টর এলাকা থেকে দেশীয় অস্ত্র ৯ জনকে আটক করে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। অপরদিকে উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টর থেকে ডাকাত সন্দেহ তিনজনকে, ১০ নম্বর সেক্টর থেকে দুজনকে, ৮ নম্বর সেক্টর থেকে একজন এবং উত্তরখানের বালুরমাঠ এলাকা থেকে ডাকাত সন্দেহে একজনকে আটক করে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে ছাত্র-জনতা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উত্তরখান ও দক্ষিণখান এলাকার সর্বপ্রথম মাজার মসজিদ থেকে মাইকিং শুরু করে। পরে আস্তে আস্তে উত্তরখান ও দক্ষিণখানের বিভিন্ন এলাকার মসজিদ থেকে মাইকিং করা শুরু হয়। মাইকিং শুনে এ প্রতিবেদক উত্তরখানের হেলাল মার্কেট, মাদারবাড়ী, বালুরমাঠ, দক্ষিণখানের ফায়দাবাদ, কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে কোথায় ডাকাতি হচ্ছে খোঁজখবর জানতে চাইলে মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জেম কেউই কোনো সুনির্দষ্ট তথ্য দিতে পারেন নি।

তারা বলেন- লোকজন একের পর এক ফোন দিয়ে আমাদেরকে বলছে- এলাকায় ডাকাতি হচ্ছে। সবাইকে সাবধান হওয়ার জন্য মাইকিং করেন।’

উত্তরখানের মাজারে রাত জেগে পাহারা দেওয়া বাসিন্দারা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মাজার তেতুলতলার অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন বাড়িতে বুধবার ডাকাতির কথা শোনা যায়। তার ছেলে রিয়াজ আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের জমিজমা নিয়ে ১২ বছর ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। এটি নিয়ে আদালতে মামলাও চলছে। আমাদের বাড়ির পাশের এক লোকের সঙ্গে এই ঝামেলা চলছে। তারাই লোকজন পাঠিয়ে বাড়ি দখলের পাঁয়তারা করে।’

তিনি বলেন, ‘আমি ফেসবুক ও এলাকার বিভিন্ন গ্রুপে ডাকাতি হচ্ছে এমন পোস্ট দিয়েছিলাম, যেন লোকজন দ্রুত সময়ের মধ্যে মানুষের সহযোগিতা পাই।’

বাড়িটির ভাড়াটিয়া রিয়াজ আহমেদের খালা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘৪/৫ জন এসে আমাদের দরজায় ধাক্কাইছে। পরে গেট খোলার পর তারা বলছে, আপনারা এখন সব কিছু নিয়ে বের হয়ে যান। আবার তারা টাকাও দিতে চেয়েছিল।’

উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে বসবাসকারী ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক সালাহ উদ্দিন প্রধান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বুধবার রাতে আমি ও আমার ছেলে ৭ নম্বর সেক্টররে ঢুকার সময় দেখি ডাকাত সন্দেহে তিনজনকে জনগণ আটক করে রেছে। পরে আমার ছেলে সেখানে গিয়ে দেখে আটক তিনজনকে সেনাবাহিনী এসে নিয়ে যায়।’

অন্যদিকে ইসিবি চত্বর থেকে ও মাটিকাটা এলাকার লোকজন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের ইসিবি বুধবার রাত ৯টার দিকে ২০০-৩০০ লোক ডাকাতি করতে ঢুকছিল। ঢুকেই এলোপাথাড়ি গুলি করে। পরে আমরা এলাকাবাসী তাদের ধাওয়া করে সব এক্সিট গেটে অবস্থান নিয়ে ঘেরাও দিয়ে অনেকগুলাকে আটক করে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছি।’

আটক ডাকাতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে এলাকাবাসী বলেন, ‘তাদের মিরপুরের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নাজিম উদ্দিন ভাড়া করে অস্ত্র ও টাকা দিয়েছে। আটক হওয়া ডাকাতরা সবাই কালশীর বিহারী ক্যাম্পের লোকজন।’

উত্তরা এলাকায় দায়িত্বপালনকারী একজন সেনা কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন এলাকা থেকে ডাকাতি হচ্ছে, এমন অভিযোগ পেয়েছি। কোথাও কোথাও জনগণ আটক করে আমাদের হাতে কয়েকজনে তুলে দিয়েছে। আবার অনেক জায়গায় গিয়েও কোনো সত্যতা পাওয়া যায় নি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ডাকাত নেমেছে এমন অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু ডাকাতি হয়েছে, এমন কোনো অভিযোগ পাইনি।’

উত্তরা বিভাগে কর্মরত একজন পুলিশ পরিদর্শক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘থানা ও ফাঁড়ি থেকে লুট করে নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিরা সশস্ত্র হয়ে বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি লুটপাট করার চেষ্টা চালাচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

লতিফ সিদ্দিকীর জামিন আপিল বিভাগেও বহাল, পান্নার বিষয়ে সিদ্ধান্ত এক সপ্তাহ পর

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ২০
সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ও সাংবাদিক মঞ্জুরুল ইসলাম পান্না। ছবি: সংগৃহীত
সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ও সাংবাদিক মঞ্জুরুল ইসলাম পান্না। ছবি: সংগৃহীত

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর জামিন বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। আজ সোমবার শুনানি শেষে বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন। তবে সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নার জামিনের বিষয়ে এক সপ্তাহ পর আদেশের জন্য রাখা হয়।

এর আগে তাদের করা পৃথক আবেদনের শুনানি শেষে গত বৃহস্পতিবার বিচারপতি এ এস এম আবদুল মোবিন ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের বেঞ্চ রুলসহ জামিন দেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষ ওইদিনই হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে আবেদন করে।

গতকাল রোববার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন শুনানির জন্য পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠান। তারই ধারাবাহিকতায় আজ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য উঠে।

লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না। আর মঞ্জুরুল আলমের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন।

গত ২৯ আগস্ট রাজধানীর শাহবাগ থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী ও ঢাবি অধ্যাপক কার্জনসহ ১৬ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এরপর থেকে কারাগারে রয়েছেন লতিফ সিদ্দিকী।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২৮ আগস্ট রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির অডিটোরিয়ামে ‘মঞ্চ ৭১’ এর ব্যানারে একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত থেকে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী দেশকে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে অস্থিতিশীল করে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রমূলক বক্তব্য দেন এবং অন্যদের প্ররোচিত করেন। বৈঠকে অংশ নেওয়া ৭০ থেকে ৮০ জনের মধ্যে ১৬ জনকে আটক করে পুলিশ।

এ ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন এসআই আমিরুল ইসলাম। পরে এ মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভোরে রাজধানীর বাড্ডা ও শাহজাদপুরে দুটি বাসে আগুন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আজ ভোরে মেরুল বাড্ডায় আরমা মাজেদা মালিক টাওয়ারের সামনে আকাশ পরিবহনের বাসটি আগুনে সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। ছবি: ট্রাফিক পুলিশের সৌজন্যে
আজ ভোরে মেরুল বাড্ডায় আরমা মাজেদা মালিক টাওয়ারের সামনে আকাশ পরিবহনের বাসটি আগুনে সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। ছবি: ট্রাফিক পুলিশের সৌজন্যে

রাজধানীর মেরুল বাড্ডা ও শাহজাদপুর এলাকায় আজ সোমবার ভোরে আকাশ ও ভিক্টর পরিবহনের দুটি বাসে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। কে বা কারা বাস দুটিতে আগুন দিয়েছে, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত তথ্য দিতে পারেনি পুলিশ। এসব ঘটনায় কেউ আহত হয়নি বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাশেদ বিন খালিদ বলেন, ভোরে বাসে আগুনের খবর জানাতে দু’টি ফোন কল আসে। প্রথমটি ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে, দ্বিতীয়টি সকাল ৬টা ১০ মিনিটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দু’টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

তিনি আরও বলেন, ‘বাসে কীভাবে আগুন লেগেছে, তা আমরা এখনো জানি না। আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। কেউ হতাহত হয়েছে বলেও তথ্য পাওয়া যায়নি। ঘটনাটি কী কারণে ঘটেছে তা তদন্ত করে পুলিশ জানাবে।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ (ডিএমপি) সূত্র জানায়, মেরুল বাড্ডায় আরমা মাজেদা মালিক টাওয়ারের সামনে আকাশ পরিবহনের একটি বাসে আগুন লাগে। আগুনে বাসটি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। বাসের মালিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছেন। থানা-পুলিশের সদস্যরাও ঘটনাস্থলে রয়েছেন। তবে ওই এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

অন্যদিকে ট্রাফিক বাড্ডা জোনের শাহজাদপুর এলাকায় ভিক্টর পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ডিবি ও থানা-পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করছে। বাসটি সড়কের মাঝামাঝি থাকায় দুই পাশ দিয়ে যান চলাচল সীমিতভাবে চলাচল করছিল। এর ফলে প্রগতি সরণি সড়কের আউটগোয়িং রুটে জট সৃষ্টি হয় বলে জানিয়েছে ট্রাফিক বিভাগ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মুন্সিগঞ্জে বিএনপির দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বে যুবককে গুলি করে হত্যা, আরেকজন সংকটাপন্ন

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ০১
নিহতের স্বজনেরা আহাজারি করছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
নিহতের স্বজনেরা আহাজারি করছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

মুন্সিগঞ্জে বিএনপির দুই গ্রুপের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে প্রতিপক্ষের গুলিতে আরিফ মির (৩৫) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় তাঁর চাচাতো ভাই ইমরান গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। সোমবার ভোর ৬টার দিকে সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের চরডুমুরিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত আরিফ মির স্থানীয় বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আওলাদ হোসেনের অনুসারী বলে জানা গেছে। আহত ইমরানকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আতিক মল্লিক ও মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ওহিদ মোল্লার অনুসারী শাহ কামাল, জাহাঙ্গীর ও খাইরুদ্দিন গ্রুপের সঙ্গে নিহত আরিফ মিরের গ্রুপের বিরোধ চলছিল।

আজ সোমবার সকালে আরিফ ও ইমরান ঘুম থেকে উঠে বাড়ির সামনে বের হলে শাহ কামালের নেতৃত্বে প্রতিপক্ষের লোকজন অতর্কিতভাবে গুলি চালায়। এতে আরিফ ও ইমরান গুলিবিদ্ধ হন। পরে স্থানীয়রা তাঁদের উদ্ধার করে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আরিফকে মৃত ঘোষণা করেন।

মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রুহুল আমিন বলেন, দুজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আনা হয়। এর মধ্যে আরিফকে হাসপাতালে আনার আগেই মৃত্যু হয়েছে। অন্যজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ওসি সাইফুল আলম বলেন, বর্তমানে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মনিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুদকের অভিযান: বরাদ্দের অর্ধেকেরও কম মাছ-রুটি পায় রোগী

মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি
গতকাল মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অভিযানে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অভিযানে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ছবি: আজকের পত্রিকা

হাসপাতালে ভর্তি রোগীর জন্য দৈনিক মাছ বরাদ্দ ১১৮ গ্রাম। রোগীদের দেওয়া হয় ৬০, ৬২, ৬৫ বা ৮০ গ্রাম মাছ। আর সকালের নাশতায় পাউরুটি বরাদ্দ ১৫২ গ্রাম। সেখানে রোগী পায় মাত্র ৫৬ গ্রাম ওজনের মানহীন বেকারিতে তৈরি দুটি পাউরুটি। যা বরাদ্দের অর্ধেকেরও কম। এসব অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে যশোরের মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানে। সংস্থাটির যশোর জেলা দপ্তরের উপসহকারী পরিচালক চিরঞ্জীব নিয়োগীর নেতৃত্বে গতকাল রোববার দিনভর চলা অভিযানে ৫০ শয্যার এই সরকারি হাসপাতালের নানা অনিয়মের চিত্র ধরা পড়ে। এ সময় নয়ন হোসেন নামে ক্লিনিকের এক দালালকে ধরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে সোপর্দ করেছে দুদক।

দুদক জানিয়েছে, তাদের সদর দপ্তরে জমা পড়া অভিযোগের ভিত্তিতে তারা তিন সদস্যর একটি দল মনিরামপুর হাসপাতালে শুরুতে ছদ্মবেশে অভিযান চালায়। অভিযোগের বিষয়গুলোর প্রমাণ পেয়ে পরে তারা প্রকাশ্যে অভিযানে নামে।

দুদকের উপসহকারী পরিচালক চিরঞ্জীব নিয়োগী বলেন, ‘সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ১০-১৫ টাকা। আমরা অভিযোগ পেয়েছি মনিরামপুর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সচালক এখলাস হোসেন রোগীদের জিম্মি করে তিন গুণ ভাড়া আদায় করে। মনিরামপুর থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী নেওয়ার জন্য আমরা ছদ্মবেশে অ্যাম্বুলেন্সচালকের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলি। চালক আমাদের কাছে দুই হাজার টাকা ভাড়া দাবি করে। দূরত্ব হিসাব করলে মনিরামপুর থেকে খুলনা পর্যন্ত সরকারি ভাড়া আসে ৬০০-৭০০ টাকা। সেখানে চালক তিন গুণ ভাড়া আদায় করে।

চিরঞ্জীব নিয়োগী বলেন, ‘ভর্তি রোগীর খাবারের মান যাচাই করতে গিয়ে আমরা দেখেছি, সকালের নাশতায় রোগীকে ১৫২ গ্রাম ওজনের পাউরুটি দেওয়ার নিয়ম থাকলেও সরবরাহ করা রুটির ওজন মিলেছে মাত্র ৫৬ গ্রাম। রোগীর খাবারে ১১৮ গ্রাম ওজনের মাছের টুকরা দেওয়ার কথা থাকলেও সরবরাহ করা মাছের প্রতি টুকরার ওজন মিলেছে ৬০ থেকে ৮০ গ্রাম। এ ছাড়া মানহীন তেল ও লবণ ব্যবহার করা হচ্ছে রোগীর জন্য রান্না করা তরকারিতে। রোগীদের যে ডাল খাওয়ানো হয় তার মানও খুবই নিম্নমানের।’

দুদকের উপসহকারী পরিচালক চিরঞ্জীব নিয়োগী বলেন, ভর্তি বিভাগে অভিযানে দেখা গেছে হাসপাতালে সরকারি ওষুধ ও স্যালাইন মজুত থাকলেও রোগীদের সেই ওষুধ বা স্যালাইন বাইরে থেকে কেনানো হচ্ছে। রোগীর বাথরুম বা টয়লেটের অবস্থাও নাজুক দেখা গেছে।

দুদকের এই উপপরিচালক বলেন, ‘অভিযানে দেখা গেছে, হাসপাতালের ল্যাব সহকারী আনিছুজ্জামান বিভিন্ন ক্লিনিকের দালালের মাধ্যমে রোগীদের পরীক্ষা করানোর জন্য বাইরের ক্লিনিকে পাঠিয়ে থাকে। আমরা নয়ন হোসেন নামে এক দালালকে ধরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে সোপর্দ করেছি। এ ছাড়া জরুরি বিভাগে অভিযানের সময় দেখা গেছে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া ওয়ার্ডবয়রা কোনো প্রকার প্রশিক্ষণ ছাড়াই রোগীর সেলাই বা ব্যান্ডেজের কাজ করছে।’

চিরঞ্জীব নিয়োগী বলেন, ‘অভিযানের সময় হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক অনুপ বসু আমাদের সঙ্গে ছিলেন। আমরা অনিয়মের বিষয়গুলো হাসপাতালপ্রধানকে জানিয়েছি। অনিয়ম পাওয়া বিষয়গুলো আমাদের সদর দপ্তরকে লিখিতভাবে জানাব। এ ছাড়া সিভিল সার্জনকে বিষয়গুলো জানানো হবে।’

দুদকের অভিযোগের বিষয়ে মনিরামপুর হাসপাতালে খাবার পরিবেশনকারী ঠিকাদার ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘২০১২ সালের মূল্যতালিকায় আজও আমাদের খাদ্য সরবরাহ করতে হচ্ছে। নতুন করে আর টেন্ডার না হওয়ায় লোকসান করে খাদ্য সরবরাহ করতে হচ্ছে।’

মনিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) অনুপ বসু বলেন, ‘মাঝেমধ্যে আমরা ঠিকাদারকে ডেকে রোগীর খাবারের মান সম্পর্কে সতর্ক করি। দুই-চার দিন ঠিক থাকার পর আবার যাইতাই হয়ে যাচ্ছে। উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় ঠিকাদার পরিবর্তন করা সম্ভব হচ্ছে না।’

মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফাইয়াজ আহমেদ ফয়সাল বলেন, দুদকের পাওয়া অনিয়মগুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত